বিসিসি-শ্রমিক ইউনিয়নের সমঝোতা, আন্দোলন প্রত্যাহার
Published: 27th, January 2025 GMT
আংশিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে অবশেষে আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্দোলনরত বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) শ্রমিক কর্মচারীরা। আজ সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে বিবিসির প্রশাসক ও বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কায়সারের সঙ্গে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা রুদ্ধদার বৈঠক করেন। বৈঠকে শ্রমিকদের ৬ দফা দাবির অংশ বিশেষ মেনে নেওয়ায় আন্দোলন থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন বিসিসির শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
বৈঠকের সত্যতা নিশ্চিত করে সমস্যা সমাধানে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কায়সার। দ্রুত সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
গত ১ জানুয়ারি বিনা নোটিশে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১৬০ জন কর্মীকে ছাটাইয়ের প্রতিবাদসহ ৬ দফা দাবি নিয়ে প্রায় ১ মাস ধরে আন্দোলন করছিলেন তারা। মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধসহ নানান কর্মসূচি পালন করেন। আজ দুপুরে সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের সঙ্গে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের বৈঠক হয়।
আরো পড়ুন:
সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে চাকরি, ৩৬ ক্যাটাগরিতে নেবে ১৯১ জন
চাকরি দিচ্ছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়
বৈঠকে অংশ নেওয়া শ্রমিক নেতারা জানান, দুপুরে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে শ্রমিকদের নিয়ে রুদ্ধদার বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বৈঠকে অংশ নেওয়া শ্রমিকরা ১৬০ জন শ্রমিককে পুনর্বহালের দাবি জানালে শ্রম আইনের নিয়মানুসারে তাদের অযৌক্তিক দাবি বিসিসি কর্তৃপক্ষ প্রত্যাখ্যান করে। তবে চাকরিচ্যুত ওই ১৬০ জনের পরিবারে যদি কেউ চাকরিযোগ্য সদস্য থাকে, তাদের মধ্যে ৩০ ভাগ সদস্যকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে চাকরিচ্যুত ১৬০ জন শ্রমিক পরিবারের মধ্যে ৪৮ জন সদস্য চাকরি পাবেন। এছাড়া যে সকল সদস্য মারা গেছে, সিটি কর্পোরেশন থেকে তাদের পরিবারকে এককালীন অনুদান বা সহায়তা দেওয়া হয়নি; বিভাগীয় কমিশনার নিজ উদ্যোগে তাদের পরিবারকে এক লাখ টাকা এবং যারা এখনো জীবিত রয়েছেন, তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সিন্ধান্তের কথা জানান। একইসঙ্গে প্রত্যেক শ্রমিক মাসে শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডে ২০০ টাকা জমা দিলে তার বিপরীতে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকেও ২০০ টাকা দেওয়ার সিন্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া অন্যান্য দাবির বিষয়গুলো আইনের মধ্যে থেকে পূরণের আশ্বাস দেওয়ার পর শ্রমিকরা তাদের আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা জানান।
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সেলিম জমদ্দার বলেন, বিসিসির প্রশাসকের সময়োপযোগী উদ্যোগের কারণে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কায়সার বলেন, ন্যায়সঙ্গত দাবির বিষয় বিবেচনা করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চারজন প্রতিনিধি এবং কর্মরত শ্রমিক সংগঠনের তিনজন প্রতিনিধি নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা/পলাশ/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ কর পর ব র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।