নারীকে হত্যার পর টুকরো, ডাস্টবিন-দিঘি-পুকুরে মিলেছে আট খণ্ডাংশ
Published: 28th, January 2025 GMT
বরিশাল নগরের কাশীপুরের ইছাকাঠির একটি দিঘি, সংলগ্ন পুকুর ও আশপাশে গত তিন দিন ধরে মিলছে হাত-পাসহ মানবদেহের খণ্ডিত অংশ। আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে আটটি অংশ। এ নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সর্বশেষ পাওয়া খণ্ডিত হাত থেকে ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো নারীদেহের। তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। মাথা ও ধড় না পাওয়ায় পরিচয় শনাক্ত করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দফায় দফায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেও তারা হত্যাকাণ্ডের কোনো রহস্য পাচ্ছে না।
জানা যায়, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের সীতারামের দিঘি, সংলগ্ন আলতাফ হোসেনের পুকুর ও একটি ডাস্টবিন থেকে মানবদেহের খণ্ডিত অন্তত আটটি অংশ উদ্ধার হয়। গত রোববার দিঘিতে পায়ের অংশ, পরে অন্যান্য স্থানে একে একে বাকি অংশ পাওয়া যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা ইউনুস আলী জানান, রোববার সকালে দিঘির পাড়ে গিয়ে কিছু একটা ভাসতে দেখে তিনি মৃত বড় মাছ মনে করেন। পরে টেনে কাছে আনার পর পলিথিনে মোড়ানো পায়ের অংশ পান। খবর পেয়ে পুলিশ উদ্ধারকাজ শুরু করে। ওই দিন সংলগ্ন আলতাফ হোসেনের পুকুরে আরেকটি পলিথিনে কলিজাসহ দেহের বিভিন্ন অংশের চারটি টুকরো উদ্ধার হয়। এরপর দমকল বাহিনীর কর্মী ও জেলেদের দিয়ে পুলিশ জাল টানালেও কিছু মেলেনি। সোমবার অদূরে একটি ডাস্টবিনে পলিথিনে মোড়ানো একটি হাতের অংশ পাওয়া যায়। মঙ্গলবার আরেকটি হাতসহ দুটি খণ্ডাংশ পাওয়া যায় দিঘিতে।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা সাবেক সেনাসদস্য শাহীন কাদের জানান, তাদের এলাকার কেউ নিখোঁজ নেই। দূরে কোথাও নারীকে হত্যা করে লাশ টুকরোর পর বস্তায় করে বিভিন্ন এলাকায় ফেলা হয়েছে। কারণ দিঘির পাড়ে রক্তমাখা একটি প্লাস্টিকের বস্তা পাওয়া গেছে।
বিমানবন্দর থানার ওসি জাকির হোসেন জানান, উদ্ধার খণ্ডাংশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে।
মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শহিদুল ইসলাম জানান, উদ্ধার হাত দেখে মনে হচ্ছে, এটি কোনো নারীর। মেট্রোপলিটন পুলিশের চার থানায় কারও নিখোঁজের তথ্য নেই। এটি দুর্ধর্ষ কোনো হত্যাকারীর কাজ। পরিচয় শনাক্তে থানায় থানায় বার্তা পাঠানো হয়েছে। ওই এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানান তিনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বর শ ল
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুর শিল্পকলা একাডেমি: যেখানে ‘শিল্প-বাণিজ্য’ আছে, ‘কলা’ নেই
শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম বন্ধ আছ এক বছরের বেশি সময় ধরে। একাডেমির মাঠে এক মাস ধরে চলছে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা।
জেলা শিল্পকলা একাডেমি সূত্র জানায়, জেলা শহরের তুলাসার মৌজায় ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের পাশে জেলা শিল্পকলা একাডেমির অবস্থান। তিন কক্ষের একটি টিনশেডের আধা পাকা ঘরে ১৯৮০ সালে একাডেমির কার্যক্রম শুরু হয়। ৪৫ বছর ধরে সেই ঘরেই একাডেমির কার্যক্রম চলছে।
শিল্পকলা একাডেমিতে সংগীত, নৃত্য, নাটক, আবৃত্তি, চারুকলা ও তালযন্ত্র বিভাগ আছে। বিভাগগুলোতে শিশু-কিশোরেরা প্রশিক্ষণ নেয়। এ বছর সংগীত ও নৃত্য বিভাগে ৬৮ জন ভর্তির তথ্য আছে। অন্য বিভাগগুলোতে কতজন ভর্তি হয়েছে, সে তথ্য তাদের কাছে নেই। আগের বছরগুলোতে কোন বিভাগে কত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল, সে–সংক্রান্ত কোনো তথ্য শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তার কাছে নেই।
জেলা কালচারাল অফিসার মোহাম্মদ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি জানুয়ারি মাসে শরীয়তপুরে যোগ দিয়েছেন। এর পর থেকে শিল্পকলার কার্যক্রম শুরু করার চেষ্টা করছেন। প্রশিক্ষণ বিভাগগুলোতে প্রশিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম চলছে। গত মে মাসে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল, ১৪ আগস্ট নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে। সেখানে সব বিভাগের প্রশিক্ষক পাওয়া যায়নি। সংগীত, চারুকলা ও তালযন্ত্রের (তবলা) প্রশিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আর নৃত্য, নাটক ও আবৃত্তির প্রশিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি আবার দেওয়া হবে।
কয়েকজন অভিভাবকের ভাষ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষকদের নিয়োগ বাতিল করা হয়। এর পর থেকে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। শিল্পকলা মাঠে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা আয়োজন করার জন্য নিউ স্টাইল মার্কেটিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক গত ১২ আগস্ট ওই প্রতিষ্ঠানকে এক মাসের জন্য সেখানে মেলার আয়োজন করার অনুমতি দেন। বর্তমানে শিল্পকলা একাডেমি মাঠের ওই মেলায় বিভিন্ন পণ্যের ৫৫টি দোকান বসানো হয়েছে।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির আশপাশে আছে ১০০ শয্যার সদর হাসপাতাল, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা মহিলা সংস্থার কার্যালয়, শিশু একাডেমি, শিশুদের বিনোদনের শরীয়তপুর পার্ক ও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। মেলার কারণে ওই এলাকায় এবং সদর হাসপাতালের সামনে সার্বক্ষণিক যানজট লেগে থাকে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবীবুর রহমান বলেন, ‘জেলা হাসপাতালের সামনে এমন একটি মেলার অনুমতি কীভাবে দেওয়া হয়েছে, তা আমার বোধগম্য নয়। ওই মেলার কারণে হাসপাতালের প্রবেশমুখে সার্বক্ষণিক যানজট লেগে থাকে।’
শরীয়তপুরের কবি ও সাহিত্যিক শ্যামসুন্দর দেবনাথ বলেন, ‘একটি জেলার সরকারি পর্যায়ে সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্র হচ্ছে শিল্পকলা। তা কীভাবে এক বছর ধরে বন্ধ থাকতে পারে, আমাদের বোধগম্য নয়। এই প্রজন্মের কিশোর ও তরুণদের শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি এমনিতেই আগ্রহ কম। তার ওপরে সংস্কৃতির প্রশিক্ষণকেন্দ্র বন্ধ রাখা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়।’
সার্বিক বিষয়ে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক হাসিনা বেগম বলেন, শিল্পকলা একাডেমির মাঠে এক মাসের জন্য মেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অনুমতি দেওয়ার আগে তিনি জানতেন না, স্থানটি হাসপাতালের সামনে। আর নানা কারণে শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষক নিয়োগে দেরি হচ্ছে। নিয়োগপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। শিগগিরই শিল্পকলার কার্যক্রম চালু করা হবে।