ফেনীতে বিএনপির কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব, সংঘর্ষে আহত ২০
Published: 29th, January 2025 GMT
ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলার সদর ইউনিয়নের করিমপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় দুই পক্ষের কেউই এখন পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ দেননি। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দাগনভূঞা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন- ইয়াকুবপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা সোহেল, রিয়াজ, শ্রমিক দল নেতা পারভেজ, যুবদল নেতা শাহীন, সুজন, হুদন, যুবদল নেতা আলা উদ্দিন আলো, নুরুল হক সোহেল, মোহাম্মদ সাঈদ, মোশাররফ, রুবেল, নেজাম মেম্বার, শহিদ ও শাহাদাতসহ অন্তত ২০ জন।
স্থানীয় এবং দলীয় নেতাকর্মী সূত্রে জানা যায়, বিকেলে দাগনভূঞা সদর ইউনিয়নের করিমপুর এলাকায় একটি এতিমখানায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ভাই ও দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেন কম্বল বিতরণ করতে যান। তার পার্শ্ববর্তী স্থানে জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাজী জামশেদুর রহমান ফটিক ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কবির আহম্মদ ডিপলু শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আরেকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। একপর্যায়ে আকবর হোসেন কম্বল বিতরণ করতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও পরে মারামারি শুরু হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করেন নেতাকর্মীরা।
দাগনভূঞা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির বলেন, “করিমপুরে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কবির আহম্মদ ডিপলুর বাড়ির পাশে একটি অনুষ্ঠান চলছিল। তার পাশেই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেন কম্বল বিতরণ করছিল। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও পরে মারামারি শুরু হয়। সেখানে পুলিশের সামনেও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কের লোকজন পারভেজকে বেধড়ক মারধর করে সিএনজি ভাঙচুর করে। পুলিশ বাধা দিতে গেলে তাদেরও হেনস্তা করা হয়। এতে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।”
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেন বলেন, “একটি অরাজনৈতিক আয়োজনে কম্বল বিতরণের জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু এতদিন পর তারা জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পাল্টা কর্মসূচি দেয়। পরে তাদের অস্ত্র আর বোমাবাজি দেখে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে থানায় চলে আসে। ঘটনাস্থলে কবির আহম্মদ ডিপলু, ফটিক, বাবলু, রিয়াদসহ তাদের লোকজন আমাদের থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও মারধর শুরু করে। তারা আমাদের তিনটি মোটরসাইকেল, ২০-২৫টি মোবাইল ফোন ও আমার স্ত্রীর পাঁচ ভরি স্বর্ণের একটি ব্রেসলেট নিয়ে গেছে। ১৫-২০ জনকে মারধর করে আহত করেছে। এ বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
কমিটির দ্বন্দ্বের বিষয়ে আকবর হোসেন বলেন, “যে দলের নেতারা কেন্দ্রের কথা মানে না তারা দলের প্রতি কতটুকু আন্তরিক তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আবার বিএনপির এই কমিটির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ছাত্রদল ও যুবদল নেতা। তারা বিএনপির কেউ নয়।”
জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাজী জামশেদুর রহমান ফটিক বলেন, “উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেন সংবাদ সম্মেলনে আমার নামে মিথ্যা ও বানোয়াট কথাবার্তা বলেছেন। তিনিই দাগনভূঞার রাজনীতিতে গ্রুপিং সৃষ্টি করেছেন। যারা স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলেমিশে ব্যবসা করেছে তাদেরকে তিনি অর্থের বিনিময়ে অবৈধ কমিটিতে জায়গা দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। কখনো কোনো প্রকার চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত না থাকলেও তিনি চাঁদাবাজ বলেছেন।”
অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কবির আহম্মদ ডিপলু বলেন, “অনুষ্ঠানে আমি দাওয়াত পাইনি বা অবগতও ছিলাম না। আমি দুই পক্ষকে শান্ত রাখার জন্য চেষ্টা করেছি। সেখানে আগে থেকেই প্রশাসনের লোকজন ছিলেন। হামলার বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কের এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
এদিকে গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে দাগনভূঞা বাজারে দলীয় নেতাকর্মীদের মারধরের প্রতিবাদে ছাত্রদল নেতা ফটিকের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। ওইসময় বাজার এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।
এ ব্যাপারে দাগনভূঞা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, “একই স্থানে দুই পক্ষের কর্মসূচির বিষয়ে অবগত হওয়ার পর মঙ্গলবার দুপুরে থানায় তাদের প্রতিনিধির সঙ্গে বসেছিলাম। কিন্তু বিকেলে সেখানে তারা দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ করেনি।”
তিনি আরো বলেন, “আগামী ৩১ জানুয়ারি সিলোনীয়া স্কুল মাঠে দু’পক্ষ আলাদা আলাদা প্রোগ্রাম করবে বলে জানতে পেরেছি। পুনরায় সংঘর্ষ এড়াতে তাদের প্রতিনিধির সাথে কথা বলেছি। দুই পক্ষই প্রোগ্রাম করার বিষয়ে অনড়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করা হবে।”
ঢাকা/সাহাব উদ্দিন/ইমন
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক আকবর হ স ন য বদল ন ত ন ত কর ম ছ ত রদল র রহম ন য বদল র স ঘর ষ দল ন ত ম রধর উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
পদ স্থগিত নেতার পক্ষে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির বিবৃতি, দ্রুত মুক্তি দাবি
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সাদাপাথর লুটের মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিনের মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে উপজেলা বিএনপি। গতকাল সোমবার উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়। কেন্দ্র থেকে পদ স্থগিত হওয়া একজন নেতার পক্ষে এমন বিবৃতি দেওয়ায় দলের ভেতরে ও বাইরে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
গত শনিবার রাতে সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকা থেকে সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৯)। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। গত ১১ আগস্ট কেন্দ্রীয় বিএনপি চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ দলীয় নীতি ও আদর্শবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করে।
গতকাল উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল মন্নান ও সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, সাহাব উদ্দিন বিগত স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্রসৈনিক ও মিথ্যা মামলায় নির্যাতিত নেতা। তাঁকে সাদাপাথর লুটের মামলায় মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানোয় উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় এবং অবিলম্বে তাঁর মুক্তি দাবি করা হয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল মন্নানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আকবরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি সাহাব উদ্দিনের চাচাতো ভাই। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমরা মাঠে আছি। আমরা তাঁকে ভালোভাবে চিনি। তিনি কোনো লুটপাটে ছিলেন না। বরং লুটপাটের বিরুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে আমরা মিছিল, মানববন্ধন করেছি। এ তথ্য আমরা মৌখিকভাবে জেলা বিএনপিকেও জানিয়েছি।’
উপজেলা বিএনপির বিবৃতিতে সাহাব উদ্দিনের বিষয়ে ‘মিথ্যা অভিযোগে সদ্য পদ স্থগিত হয়েছে’ বলে দাবি করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা রিসিভ করেননি। তাই এ বিষয়ে জেলা বিএনপির অবস্থান ও কোনো বক্তব্য জানা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করা হয়েছে। এমন অবস্থায় উপজেলা বিএনপি কীভাবে ওই নেতার পক্ষে বিবৃতি দেয়, সেটা অবশ্যই সাংগঠনিকভাবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। ব্যক্তির অপকর্মের দায় কেন সংগঠন নেবে? বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।
সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকারি প্রায় ১৫০ একর জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। গত ১৭ মার্চ প্রথম আলোয় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে ১৮ মার্চ সরকারি জমি উদ্ধারে অভিযানে নামে স্থানীয় প্রশাসন। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে প্রায় ৭০ একর জমি উদ্ধার করে এবং ১০০টি পাথর ভাঙার যন্ত্র উচ্ছেদের পাশাপাশি প্রায় ৫০টি টিনশেড ঘর উচ্ছেদ করা হয়।
এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে সরকারি জমি দখলের ঘটনায় ১৯ মার্চ সাহাব উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় জেলা বিএনপি। পাশাপাশি অভিযোগ তদন্তে জেলা বিএনপির সহসভাপতি আশিক উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
গত ১০ এপ্রিল ভোলাগঞ্জে পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনে সাহাব উদ্দিন ও তাঁর স্বজনেরা জমি দখল ও লুটপাটে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, উপজেলা সভাপতির নেতৃত্বে এমন অপরাধ দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।
সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাঁকে ‘সাদাপাথর লুটপাটে অভিযুক্ত অন্যতম মূলহোতা’ হিসেবে উল্লেখ করে। সাদাপাথর লুটের ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ থানায় গত ১৫ আগস্ট খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা এক হাজার থেকে দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়।