বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩০৬ সদস্যের পাবনা জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ কমিটিতে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) শাখা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের আটজন কর্মী পদ পেয়েছেন বলে জানা গেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রা আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব আরিফ সোহেল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কমিটির কথা জানানো হয়। 

এ কমিটিতে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থী বরকুতুল্লাহ ফাহাদকে আহ্বায়ক এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনজুরুল ইসলামকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। 

শিক্ষার্থীরা জানান, কমিটিতে সংগঠক হিসেবে পদ পেয়ছেন হামিম মাহমুদ এবং মুখপাত্র হিসেবে পদ পেয়েছেন শফিক রেহমান কাদের, আল শাওভির সিফাত, আব্দুল্লাহ আল মারুফ ও মোহা.

আলাউদ্দিন। , তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক শেহজাদ হাসানের অনুসারী ও সংগঠনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

শিক্ষার্থীরা আরো জানান, সদস্য পদ পাওয়া রাসেল আহমেদ, মোকাররম সজিব বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো নুরুল্লাহর অনুসারী ছিলেন। সংগঠক হিসেবে পদ পাওয়া শাহীন হোসেন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন এবং গত বছর ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মিছিলে অংশগ্রহণও করেন।

শিক্ষার্থীদের দাবি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন একটি নিরপেক্ষ ও ন্যায়ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে ওঠার কথা থাকলেও এখানে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এতে করে আন্দোলনের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ছাত্রলীগের একাংশ কৌশলে এই আন্দোলনকে প্রভাবিত করতে চাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাবিপ্রবির এক শিক্ষার্থী বলেন, “কমিটিতে ছাত্রলীগের নাম সমন্বয়কদের মাধ্যমেই গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৭ জুলাই এদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের মিছিলে অংশ নিয়েছে। অথচ তারা আজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতে পদ পেয়েছে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নাম কেন্দ্রে গেছে সমন্বয়ক মনজুরুল ইসলামের মাধ্যমে। ছাত্রলীগের যাদের নাম কমিটিতে দেওয়া হয়েছে, এদের কয়েকজনের সঙ্গে মনজুরুলের সম্পর্কও ভালো। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাবনা জেলার সদস্য সচিব মনজুরুল ইসলাম বলেন, “এখানে যাদের নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, তারা যে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিল তা আমার জানা ছিল না। কিছুক্ষণ আগেই আমি ওদের বিষয়ে জানতে পেরেছি এবং আমি কেন্দ্রে বিষয়টি জানিয়েছি। আমরা দ্রুত নামগুলো কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।”

ঢাকা/আতিক/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মনজ র ল পদ প য় কম ট ত সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

ভাঙা বেড়িবাঁধ, আমন নিয়ে দুশ্চিন্তায় মাতারবাড়ীর চাষিরা

চলতি মৌসুমে আমন চাষ করার জন্য এক ব্যক্তির এক একর জমি ১৮ হাজার টাকায় ইজারা নেন কক্সবাজারের মহেশখালীর সাগর উপকূলীয় মাতারবাড়ী ইউনিয়নের নয়াপাড়ার কৃষক জাকের হোছাইন। এই মাসের শেষের দিকে আমন চাষ শুরু করার কথা তাঁর। তবে সাগরে বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে বর্ষায় ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কায় আমনের চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কেবল জাকের হোছাইন নন, তাঁর মতো একইভাবে আমনের চাষাবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মাতারবাড়ী ইউনিয়নের অন্তত ২০০ চাষি।

কুহেলিয়া নদীর পশ্চিমে আর বঙ্গোপসাগরের পূর্বে জেগে ওঠা প্রায় ১২ বর্গকিলোমিটার চর নিয়ে মহেশখালীর মাতারবাড়ী ইউনিয়ন। এর পশ্চিম পাশে রয়েছে আট কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, যার মধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে এক দশক ধরে। ওই অংশ দিয়ে আশপাশের লোকালয় ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়া ঠেকাতে সর্বশেষ চার বছর আগে বসানো হয়েছিল জিও টিউব। তবে গত ২৯ ও ৩০ মে নিম্নচাপের প্রভাবে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে জিও টিউব বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বেড়িবাঁধের ওই ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয় ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সম্প্রতি তিন দফায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ভেঙে গেছে অন্তত ১০টি কাঁচা বসতঘর। স্থানীয় মানুষের চোখে ঘুম নেই। চাষিরাও আমন ধানের চাষাবাদ আদৌ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।সরওয়ার কামাল, সদস্য, মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ

বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি ইউনিয়নের ষাইটপাড়া এলাকায়। গত শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা বেড়িবাঁধের পাশে বসানো জিও টিউব সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। সাগরের পানি ঢেউয়ের সঙ্গে বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ উপচে পাশের ফসলি জমিতে ঢুকে পড়ছে। সেখানে স্থানীয় মাঝের ডেইল এলাকার বাসিন্দা আবদুল কাদেরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, বেড়িবাঁধের জিও টিউব বিলীন হওয়ার দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা খুবই উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আমনচাষিরা চাষাবাদ করতে পারবেন কি না তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মানুষ তাঁদের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা উচিত।

মাতারবাড়ী ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুরুল হোছাইন মোহাম্মদ তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, ভাঙা বেড়িবাঁধের কারণে ষাইটপাড়াসহ আশপাশের চারটি গ্রামে জলাবদ্ধতার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে এসব এলাকার অন্তত ৮০ একর জমিতে আমন চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সরওয়ার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্প্রতি তিন দফায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ভেঙে গেছে অন্তত ১০টি কাঁচা বসতঘর। স্থানীয় মানুষের চোখে ঘুম নেই। চাষিরাও আমন ধানের চাষাবাদ আদৌ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।’ ইউপি সদস্য সরওয়ার কামাল আরও বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই এলাকার মানুষের উদ্বেগ বাড়ে। অথচ ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কারের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।

মহেশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে। জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি নিম্নচাপের প্রভাবে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় অন্তত ১ হাজার ৬০০ মিটারের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপাতত বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি টেকানোর জন্য ভাঙা বেড়িবাঁধের ওপর জিও টিউব বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জামাল মুর্শিদ প্রথম আলোকে বলেন, মাতারবাড়ী ও ধলঘাট ইউনিয়নে স্থায়ী বাঁধের জন্য প্রায় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় চারপাশে ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার সুপার ডাইকের আদলে স্থায়ী বেড়িবাঁধ ও ৭টি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া খনন করা হবে সাড়ে ১৯ কিলোমিটার কুহেলিয়া নদী। গত এপ্রিলে প্রকল্প প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ