নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় রান্না ঘরের চুলার আগুনে দগ্ধ স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শুক্রবার বিকালে ঢাকায় নেওয়ার পথে স্বামী এবং রাত ৯টার দিকে হাসপাতালে স্ত্রীর মৃত্যু হয়।

নিহতরা হলেন- নিমাই চন্দ্র মজুমদার ও তার স্ত্রী মিলন বালা। তারা উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জোড়খালি গ্রামের মুনদার বাড়ির বাসিন্দা।

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ.

কে.এম আজমল হুদা। 

স্থানীয়দের বরাতে ওসি বলেন, “বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ওই বাড়িতে রান্না ঘরের চুলা থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। আগুন পাশের গোয়ালঘরে ছড়িয়ে পড়লে টের পেয়ে সেখানে থাকা গবাদিপশুদের রক্ষার চেষ্টা করেন নিমাই চন্দ্র ও মিলন বালা। কিন্তু গোয়ালঘর ও আশেপাশে খড়িসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত বসতঘরেও ছড়িয়ে পড়ে। মারা যায় দুটি গরু এবং পুড়ে যায় আরো দুটি।” 

তিনি বলেন, “এ সময় নিমাই ও তার স্ত্রীর শরীরের বেশির ভাগ অংশও পুড়ে যায়। পরে স্থানীয়রা আগুন দেখে তা নিভানোর চেষ্টা করেন এবং কিন্তু তার আগেই ঘরের আসবাবপত্রসহ সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পরে ভোরে প্রতিবেশীরা তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাদেরকে ঢাকায় প্রেরণ করেন।” 

ওসি আরো বলেন, “নিহত দম্পতি রান্না ঘরের পাশে একটি কক্ষে থাকত। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে রান্না ঘরের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।”

হাতিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, ঘটনাটি তাদের জানানো হয়নি। তবে তারা এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন।

ঢাকা/সুজন/ইমন 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা

জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।

এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।

আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?

উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’

আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ