নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টানা তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে থাকা রোগী এবং চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফ্রিজে থাকা হিমায়িত ওষুধ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।   

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ট্রান্সমিটার নষ্ট হওয়ায় গত ১৭ অক্টোবর থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে হাসপাতালটি। হাসপাতালের সব ধরনের কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা। পানি না থাকায় দুর্ভোগ আরো বেশি বেড়েছে। বিশেষ করে টয়লেট ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ায় সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দুর্ভোগের শিকার হয়ে অনেকে বাধ্য হয়ে রোগী নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করছেন। 

আরো পড়ুন:

ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি-নবজাতকের মৃত্যু, ক্লিনিকে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

স্বামী-শাশুড়ির নির্যাতনে গর্ভপাতের অভিযোগ

মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মায়ের চিকিৎসা করাচ্ছিলেন সুমি আক্তার। সোমবার (২০ অক্টোবর) তিনি বলেন, “তিন দিন ধরে কারেন্ট নেই। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গরম ও কারেন্ট না থাকায় মায়ের চিকিৎসা হচ্ছে না। গরমে মা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এ কারণে বাধ্য হয়ে আজ মাকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছি।”

একই অভিযোগ করলেন উপজেলা সদর থেকে রোগী নিয়ে আসা আহসান হোসেন। তিনি বলেন, “হাসপাতালে আসছিলাম সেবা নিতে, এখন দেখি গরমে জীবন যাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে কারেন্ট নেই। এ অবস্থায় হাসপাতালে রোগী রাখা যায়?”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক নার্স বলেন, “আমরা তো নিজেরাই ভয় পাচ্ছি। রোগী যদি অক্সিজেন সাপোর্টে যায়, আমরা কিছুই করতে পারব না। জরুরি যন্ত্রপাতিগুলো একটার পর একটা অচল হয়ে যাচ্ছে।”

মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাশেদুল হাসান মাহমুদ বলেন, “হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহের যে ট্রান্সমিটার রয়েছে সেটি নষ্ট হয়ে গেছে। এজন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে জানানো হয়েছে। জেনারেটর সচল রাখার চেষ্টা চলছে। আশা করছি, দ্রুত ট্রান্সমিটার ঠিক করা হবে।”

ঢাকা/হৃদয়/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

করপোরেটের ধাক্কায় নিতাইগঞ্জের ব্যবসায় মন্দা

নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে গড়ে ওঠা নিতাইগঞ্জ একসময় ছিল দেশের অন্যতম পাইকারি মোকাম। আটা, ময়দা, চিনি, লবণ, ডাল, ভোজ্যতেলসহ নানা ধরনের খাদ্যপণ্য ও গবাদিপশুর খাদ্যও এখান থেকে দেশের ৪০ টির বেশি জেলায় সরবরাহ হতো। প্রতিদিন লেনদেন হতো কয়েক শ কোটি টাকার। নৌ ও সড়কপথে যাতায়াতের সুবিধা থাকায় এখান থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মালামাল সহজেই পৌঁছাত।

কিন্তু নিতাইগঞ্জের সেই ব্যস্ততা এখন আর নেই। অনেক মিলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, গুদামগুলোর অধিকাংশ জায়গাই ফাঁকা, ক্রেতার সমাগম খুব কম—সব মিলিয়ে ঐতিহ্যবাহী এই ব্যবসাকেন্দ্রে নেমেছে মন্দার ছায়া।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জের বিবি সড়কের নিতাইগঞ্জে শ্রমিকেরা ট্রাকে আটা-ময়দা তুলছেন, কেউ ঠেলাগাড়িতে মাল আনছেন। গম, চাল, ডাল আনলোডের কাজও চলছে। কিন্তু কর্মচাঞ্চল্য আগের মতো নেই। পাইকারি বেচাকেনা কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও শ্রমিকেরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। অথচ আগে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকারি ব্যবসায়ীদের পদচারণে নিতাইগঞ্জ মুখর থাকত। এলাকাটি এখন অনেকটাই যেন নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে।
নিতাইগঞ্জের জয় ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক কৃষ্ণ বাবু, যিনি ৩৫ বছর ধরে এখানে কাজ করছেন, বলেন, ‘আগে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাকে মাল লোড-আনলোড হতো, এখন তার অর্ধেকও হয় না।’

পাইকারি মুদি ব্যবসায়ী দিলীপ রায় বলেন, ‘একসময় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বেচাকেনা হতো। এখন ব্যবসার কর্মব্যস্ততায় ভাটা পড়েছে, ক্রেতাও কম।’

করপোরেট আগ্রাসন ও বাজার সংকোচন
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিদেশ থেকে গম, চিনি, সয়াবিন ইত্যাদি আমদানি করে প্রক্রিয়াজাত করে সরাসরি সুপারশপ ও পরিবেশকদের কাছে সরবরাহ করছে। ফলে নিতাইগঞ্জের পাইকাররা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না।

ভাই ভাই ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক পরিতোষ সাহা বলেন, ‘নব্বইয়ের দশক থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ছিল সোনালি সময়। তখন দিনে শতাধিক ট্রাক মাল আসত, এখন ৩০-৪০ ট্রাকও আসে না। বড় বড় করপোরেট কোম্পানি সরাসরি বাজারে আসায় আমাদের মতো মাঝারি ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।’

মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা ব্যবসায়ী সজীব হোসেন বলেন, ‘আগে সবকিছু নিতাইগঞ্জ থেকেই নেওয়া হতো। এখন কোম্পানি থেকেই দোকানে মাল পৌঁছে দেয়। পরিবহন খরচ বাঁচে। তাই মাসে তিন-চারবারের বদলে এক-দুবার নিতাইগঞ্জে আসি।’

ডাল ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আগে আমরা নিজেরাই ভারত থেকে ডাল ও ছোলা আনতাম। এখন বড় গ্রুপগুলো কার্গো জাহাজে মাল আনে—আমাদের পক্ষে টেকা সম্ভব নয়।’

অর্থনৈতিক সংকট ও প্রভাব
একসময় নিতাইগঞ্জের ব্যাংকগুলোতে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার লেনদেন হতো, এখন সেটিও অর্ধেকে নেমে এসেছে। ব্যবসায়ে ধস নামায় স্থানীয় অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়েছে। আগে শত শত শ্রমিক পণ্য ওঠানো–নামানো, বস্তা সেলাই, ট্রাকে পণ্য লোড–আনলোডের কাজে ব্যস্ত থাকতেন। এখন তাঁদের অনেকেই কাজ হারিয়েছেন।

বরিশালের বাকেরগঞ্জের দুলাল হাওলাদার, যিনি ৩৮ বছর ধরে এখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন, তিনি বলেন, ‘আগে কাজের চাপ সামলানো যেত না, এখন কাজ অর্ধেক কমে গেছে। তাই অনেক শ্রমিক অন্য পেশায় চলে গেছেন।’

খাজা গরীবে নেওয়াজ লবণ মিলের মালিক পুলক দেওয়ান বলেন, ব্যবসা আগের মতো নেই। পাইকারদের আনাগোনা কমায় প্রভাব পড়েছে। আগে পাঁচজন শ্রমিক ছিলেন, এখন দুজনেই কাজ চালাতে হয়।

অবকাঠামো সমস্যা
ব্যবসায়ীরা জানান, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো পাড়া–মহল্লা পর্যন্ত পণ্য পৌঁছে দেওয়ায় নিতাইগঞ্জ যেমন মার খেয়েছে তেমনি যানজট, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি ও ডলার–সংকটের কারণেও ব্যবসা দুর্বল হয়েছে। এখানকার ৭২টি ফ্লাওয়ার মিলের অর্ধেকই এখন বন্ধ, অন্যগুলোও ঠিকমতো চলছে না।

১৯৭২ সাল থেকে ব্যবসা করছেন ওয়াজেদ আলী বাবুল। তিনি অটো ফ্লাওয়ার মিল বিজনেস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সভাপতি। বলেন, আগে নারায়ণগঞ্জ পাটের জন্য বিখ্যাত ছিল, এখন পাটের ব্যবসা নেই। মদনগঞ্জে ধান-চালের গাল্লাও নেই। নিতাইগঞ্জও একই পথে হাঁটছে। এর অস্তিত্ব টিকবে কিনা সন্দেহ।

জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক আহমেদুর রহমান বলেন, নিতাইগঞ্জ দেশের পাইকারি ব্যবসার ঐতিহ্য। ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা ও সহজ ঋণ না দিলে ঐতিহ্যবাহী এই পাইকারি মোকামটি টিকবে না। এটাকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

ঐতিহ্য বিলুপ্তির আশঙ্কা

নিতাইগঞ্জ শুধু একটি বাজার নয়, এটি নারায়ণগঞ্জের অর্থনৈতিক ইতিহাসের প্রতীক। যুগ যুগ ধরে এখান থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খাদ্যপণ্য সরবরাহ হয়েছে। এখন ব্যবসায়ে ধস নামায় স্থানীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে একটি ঐতিহ্য।

ব্যবসায়ী বিকাশ দাস বলেন, ‘আমাদের বাপ-দাদারা এই মোকাম গড়েছিলেন। এখন যদি সরকারি সহায়তা না মেলে, নিতাইগঞ্জের নাম হয়তো ভবিষ্যতে শুধু বইয়ে পড়তে হবে।’

নিতাইগঞ্জ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি শংকর সাহা বলেন, নিতাইগঞ্জ দুই শতকের ঐতিহ্যের পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র। করপোরেট আগ্রাসন, আমদানিনির্ভরতা ও লজিস্টিক সমস্যায় ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেচাকেনা অর্ধেকে নেমেছে। অনেক মিল বন্ধ, গুদাম ফাঁকা, শ্রমিকদের কর্মসংস্থান কমেছে। সরকার যদি ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা ও সহজ ঋণের ব্যবস্থা না করে তাহলে নিতাইগঞ্জ হয়তো ভবিষ্যতে শুধু ইতিহাসের পাতায়ই থাকবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তেল চুরি শুরু জাহাজ থেকে
  • ২০০ বছর পর বন্ধ হচ্ছে ‘বেকার অ্যান্ড টেইলর’
  • পাকিস্তানের প্রতিটি ইঞ্চি এখন ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের নাগালে: রাজনাথ সিংয়ের হুমকি
  • রাশিয়ায় হামলা চালাতে ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিচ্ছেন না ট্রাম্প
  • হোয়াইট হাউস থেকে খালি হাতে ফিরলেন জেলেনস্কি
  • সরকারি পানির লাইনে পোকা, শামুক, দুর্গন্ধ
  • হোয়াইট হাউজ থেকে খালি হাতে ফিরলেন জেলেনস্কি
  • করপোরেটের ধাক্কায় নিতাইগঞ্জের ব্যবসায় মন্দা
  • দ্রুত বিদ্যুৎ-গ্যাস দিন, চালু করুন