বইমেলায় রাজশাহী কলেজ শিক্ষিকার ‘কাঁটাবনে লাল শিউলি’
Published: 2nd, February 2025 GMT
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৫ এ প্রকাশিত হয়েছে রাজশাহী কলেজ বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাজেরা খাতুনের দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘কাঁটাবনে লাল শিউলি’।
পুঁথিপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত গল্পগ্রন্থটির প্রচ্ছদ করেছেন শোয়েব জামান। গ্রন্থটি ১৪টি গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে। বইমেলার পুঁথিপ্রকাশের ৭৭৫ নম্বর স্টলে পাওয়া যাবে গ্রন্থটি। এছাড়াও বইটি রকমারি ডটকম থেকেও অর্ডার করা যাবে।
‘কাঁটাবনে লাল শিউলি’ সম্পর্কে লেখিকা বলেন, “প্রকৃতির প্রতি অপরিসীম আকর্ষণে শৈশবের দেখা প্রকৃতির মাঝে সরল সৌন্দর্যের সন্ধান গ্রামীণ পরিবেশে গ্রামের মেঠোপথে বেড়ে ওঠা সাধারণ সহজ-সরল মানুষগুলো আমার গল্পের চরিত্র।”
আরো পড়ুন:
বইমেলায় মিলবে ইবি শিক্ষার্থীর ‘ইতি’
বইয়ের প্রচার রবীন্দ্রনাথও করেছেন: রফিকুজ্জামান রণি
তিনি বলেন, “এটা আমার লেখা দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ। গ্রন্থটি মোট ১৪টি গল্প নিয়ে রচিত। শ্বাসরুদ্ধকর কিংবা কঠিন পরিস্থিতিতে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ভালো কিছু অর্জনকে ‘কাঁটাবনে লাল শিউলি’ রূপক অর্থে ব্যবহার করেছি। বইটি উৎসর্গ করেছি জুলাইয়ের শহীদের প্রতি।”
অনুভূতি ব্যক্ত করে এ লেখিকা বলেন, “গল্পগ্রন্থের প্রতিটি গল্পের চরিত্রগুলোর মুখে রাজশাহী জেলার মোহনপুর ও বাগমারা উপজেলার আঞ্চলিক ভাষায় গল্পগুলো নির্মিত। ২০২৪-এর জুলাইয়ে এসে ছাত্র -জনতার অভ্যূত্থান রক্তাক্ত জুলাই আমার দেখা প্রথম অভ্যুত্থান। তাই বিস্ময়কর চিন্তা-ভাবনা অস্থিমজ্জায় ধারণ করে কলম ধরি।”
লেখিকা জানান, ‘কাঁটাবনে লাল শিউলি’ গল্পে রাজশাহী কলেজের ছাত্র শহীদ রায়হান আলী, রাজশাহীর সন্তান সাকিব আন্জুমসহ রাজশাহী কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা, দেশের তরুণ ছাত্ররা মৃত্যুকে তুচ্ছ ভেবে পুলিশের গুলি বুকে ধারণ করার সাহসকে বৈপ্লবিক প্রেক্ষাপট হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। গল্পগুলো শুধু গল্প নয়, জীবনের সত্য কাহিনি। জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনের একটি অধ্যায়ের নাম।
লেখিকার প্রথম গল্পগ্রন্থ কুচ কুড়ি ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয়। প্রথম কাব্যগ্রন্থ কাঠগোলাপ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয়।
ঢাকা/ফারজানা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।
যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে
২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।
শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’
গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’