জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সংস্কারের আলোচনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অবস্থানে অনেকটাই সাদৃশ্য দেখা গেছে। কিন্তু জুলাই সনদে জামায়াতের স্বাক্ষর করা এবং এনসিপির স্বাক্ষর না করার পর সেই চিত্র হঠাৎ বদলে গেছে। জামায়াতের বিরুদ্ধে নাহিদের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা তৈরি হয়েছে। গত এক বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দলের মধ্যে ‘সুসম্পর্ক’ দেখা গেলেও এখন এনসিপি কেন জামায়াতের সমালোচনা করছে, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নিজামীর ছেলের আসনে প্রার্থী দেয়নি বিএনপি

বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই পাবনা-৩ এবং পাবনা-৪ আসনে দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। আসন দুটিতে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মাঠে নেমেছে দলের একাংশ। সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হলে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কেউ কেউ। 

পাবনার পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে চারটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। পাবনা-১ (সাঁথিয়া) আসনটি এখনো ফাঁকা রেখেছে দলটি। 

জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মাসুদ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা বিদ্রোহ করবে, অবশ্যই তাদের বিষয়ে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত জানাবে। তবে আমরা মনে করি, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এসব বিরোধ থাকবে না।’

এদিকে জামায়াতে ইসলামী জেলার সব কটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে প্রচার–প্রচারণা চালাচ্ছে। দলীয় নেতা–কর্মীরা এখন ব্যস্ত নির্বাচনী মাঠ গোছানো নিয়ে। তবে একটি আসনে জামায়াতের সাবেক এক সংসদ সদস্যের ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, যা দলীয় প্রার্থীর চিন্তার কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন ভোটারদের অনেকে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস পাঁচটি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। কয়েকটি আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সম্ভাব্য প্রার্থীরাও প্রচারণা চালাচ্ছেন।

পাবনা-১ (সাঁথিয়া)

আসনটি সাঁথিয়া উপজেলা ও বেড়া উপজেলার একাংশ নিয়ে ছিল। এবার বেড়ার অংশ বাদ দিয়ে আসনটি পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। জামায়াতের সাবেক আমির প্রয়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ১৯৯১ ও ২০০১ সালে আসনটিতে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৬ সালে তাঁর ফাসি কার্যকর হয়।

এবার জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে নাজিবুর রহমান মোমেন।

আসনটিতে বিএনপি এখনো কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শামসুর রহমান, সদস্যসচিব মো. সালাহ উদ্দিন খান, সাংবাদিক এম এ আজিজসহ অন্তত পাঁচজন দলীয় মনোনয়নের আশায় প্রচার চালাচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলনের আবদুল গণি এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমজাদ হোসেন দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন।

পাবনা-২ (বেড়া-সুজানগর)

আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এ কে এম সেলিম রেজা হাবিব। তিনি ২০০১ সালে দলীয় প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। 

জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় আছেন দলের সুজানগর উপজেলা শাখার আমির হেসাব উদ্দিন। আগে কখনো জয় না পাওয়া আসনটিতে এবার বেশ নড়েচড়ে বসেছে দলটি।

এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের আফজাল হোসেন, খেলাফত মজলিসের আলতাব হোসেন এবং গণ অধিকার পরিষদের গোলাম সরওয়ার খান মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন।

পাবনা-৩ (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর)

চলনবিল বিস্তৃত তিনটি উপজেলা পড়েছে এই আসনে। বিএনপি এখানে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান জাফিরকে (তুহিন) মনোনয়ন দিয়েছে। তবে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য কে এম আনোয়ারুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসাদুল ইসলাম এবং জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা হাসানুল ইসলাম। এই তিন মনোনয়নপ্রত্যাশীর সমর্থকেরা নিয়মিত বিক্ষোভ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি করছেন। প্রার্থী পরিবর্তন না হলে তিনজনের একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে হাসান জাফির বলেন, ‘অনেক আসনেই এমন বিরোধিতা চলছে। আমরা এসব আমলে নিচ্ছি না। দলের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি’

আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন মো. আলী আছগার। তিনি ভাঙ্গুড়া উপজেলা জামায়াতের আমির। এবার প্রথম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

অন্যদের মধ্যে গণফোরামের সরদার আশা পারভেজ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মো. মফিজ উদ্দিন এবং ইসলামী আন্দোলনের মো. আবদুল খালেক প্রচার চালাচ্ছেন। এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় খন্দকার আক্তার হোসেন।

পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া)

নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে গত ২৭ নভেম্বর ঈশ্বরদীর সাহাপুর ইউনিয়নে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। যা নিয়ে থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। সংঘর্ষের সময় অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করা জামায়াত কর্মী তুষার হোসেনকে (২১) গত ১ ডিসেম্বর রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা শাখার আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান আসনটিতে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম সরদার ও ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুর অনুসারীরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলন করছেন। ফলে দলীয় নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

জাকারিয়া পিন্টু দলীয় প্রার্থী পরিবর্তন না করা হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মনোনয়ন অনেকেই চাইতে পারে, দল আমাকে পছন্দ করে প্রার্থী মনোনীত করেছে। আমি দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠে কাজ করছি।’

আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী জেলা শাখার আমির আবু তালেব মণ্ডল। তিনি প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচন করছেন। 

অন্য দলগুলোর মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের  আনোয়ার হোসেন ও খেলাফত মজলিসের আল আমিন প্রচারণায় আছেন। এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তৎপর বিএফ শাহীন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ।

পাবনা-৫ (সদর)

জেলার শহর হিসেবে আসনটি বরাবরই আলোচনায় থাকে। এখানে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন দলের চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। শ্রমিকনেতা হিসেবে তাঁর পরিচিত রয়েছে।

জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ইকবাল হুসাইনকে এখানে দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে। তিনি প্রথমবার সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। এর আগে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে আসনটিতে নির্বাচিত হন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির প্রয়াত আবদুস সুবহান। মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাঁর মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। কারাবন্দী অবস্থায় ২০২০ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

এবারের নির্বাচনে তাঁর ছেলে নেছার আহমেদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চান। তিনি এলাকায় পোস্টারিংসহ নানাভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

ভোটারদের অনেকেই বলেন, এখানে আবদুস সুবহানের ব্যক্তি ইমেজ আছে। এর ফলে নেছার আহমেদ শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হলে জামায়াতের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

আসনটিতে অন্যদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের জেলা কমিটির উপদেষ্টা মুফতি নাজমুল হাসান, খেলাফত মজলিসের জেলা কমিটির আহ্বায়ক ওয়ালী উল্লাহ প্রচার চালাচ্ছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ