চাঁদপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা অন্তত ৭টি দোকানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার সকাল আটটার দিকে চাঁদপুর সদর উপজেলার ইচলী-বাগাদী চৌরাস্তাসংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ হতাহত হননি।

ব্যবসায়ীদের দাবি, এ দুর্ঘটনায় ব্যবসায়ীদের অন্তত ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মো. ইয়াসিন পালোয়ান নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সকাল আটটার দিকে একটি খাবারের হোটেলের দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। সেখান থেকে মুহূর্তে আশপাশের দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কম্পিউটার, মুঠোফোন টেকনিশিয়ান, ফার্মেসি, স্টেশনারিসহ সাতটি দোকান আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত একটি খাবারের হোটেলের মালিক খোকন রাজ বলেন, পাউবোর জায়গায় লিজ ছাড়াই দোকান বানিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তাঁর হোটেলটি প্রায় এক বছর আগে ধানুয়া এলাকার এক ব্যক্তির কাছ থেকে ভাড়া দেন। এই হোটেল থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মুঠোফোন টেকনিশিয়ান ও দোকানদার মো.

রাশেদ বলেন, ‘যেসব দোকান আগুনে পুড়েছে, এগুলোর মধ্যে তিনটির মালিক ওই এলাকার বিল্লাল গাজী। আমি তাঁর কাছ থেকে আড়াই বছর আগে ১০ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে মাসিক আড়াই হাজার টাকায় দোকানটি ভাড়া নিই; কিন্তু আজ অগ্নিকাণ্ডে আমার দোকানসহ কয়েক লাখ টাকার মালামাল পুড়েছে।’

প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানান চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক সৈয়দ মুহাম্মদ মোরশেদ হোসেন। তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে দুটি ইউনিট পাঠানো হয়। তারা প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

অবৈধভাবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সিআইপি বেড়িবাঁধ–সংলগ্ন পাউবোর জায়গায় কোনো লিজ এখন দিচ্ছি না। কারণ, লিজ নিয়ে অনেকেই স্থায়ী স্থাপনা গড়ে তোলেন। যেখানে আগুন লেগেছে, সেটিও আমাদের জায়গা। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

মামলা করবেন না সাজিদের বাবা

রাজশাহীর তানোর উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে গভীর নলকূপের পরিত্যক্ত বোরহোলে পড়ে দুবছরের শিশু সাজিদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ দেশ। যে ব্যক্তি বোরহোলটি খুঁড়েছিলেন, সেই কছির উদ্দিন ঘটনার পর থেকেই পলাতক। মাটির প্রায় ৫০ ফুট গভীর থেকে সাজিদের নিথর দেহ উদ্ধারের পর প্রথমে অবহেলার অভিযোগ তুলে তার বিচার দাবি করলেও এখন মামলা করতে চান না শিশুটির বাবা রাকিবুল ইসলাম।

শনিবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘আল্লাহর মাল আল্লাহই নিয়েছেন। আমরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি মামলা করব না।’’ 

পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। 

আগে অবহেলার অভিযোগ তুলে বিচার চাওয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘সেটা বলেছিলাম যেন গোটা দেশ সতর্ক হয়। এই ভুলটা আর কেউ যেন না করে- এ জন্যই কথাটা বলেছিলাম। আমার বাচ্চাটা যেভাবে গেছে, সবাই যদি আগে থেকেই সচেতন হয়, তাহলে ইনশাআল্লাহ এমন ক্ষতি আর হবে না। আমার ঘটনার মধ্য দিয়ে যদি অন্যরা শিক্ষা পায়, সেটাই চাই।’’

মামলা না করতে কোনো ধরনের চাপ আছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘আমার ওপর কোনো চাপ নেই। গোটা দেশ আমাদের পক্ষে আছে। ইনশাআল্লাহ পুলিশ-প্রশাসনও আমাদের পাশে আছে।’’

পলাতক কছির উদ্দিন এলাকায় ফিরে কোনো সহানুভূতি জানিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘না। উনি এখনও এলাকায় আসেননি। আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করেননি।’’

উল্লেখ্য, গত বুধবার দুপুরে বাড়ির পাশেই কছির উদ্দিনের জমিতে থাকা গভীর নলকূপের ৮ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের পরিত্যক্ত বোরহোলে পড়ে যায় শিশু সাজিদ। ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ৩১ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর বৃহস্পতিবার রাতে মাটির ৫০ ফুট নিচ থেকে সাজিদের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় সাজিদের মা রুনা খাতুন শুরু থেকেই বিচার দাবি করে আসছিলেন। তিনি বলেছিলেন, কছির উদ্দিন আমার বাড়ির পাশে এভাবে তিন জায়গায় গর্ত করে ফেলে রেখেছে। কেন এভাবে ফেলে রাখল, গর্তগুলো কেন বন্ধ করল না? আমি বিচার চাই। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কছির উদ্দিন আগে বিদেশে ছিলেন। দেশে ফিরে তিনি পানির ব্যবসা শুরু করেন এবং এলাকায় পাঁচটি অগভীর নলকূপ (সেমিডিপ) স্থাপন করেন। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে এসব সেমিডিপ চালানো হচ্ছিল।

বছরখানেক আগে উপজেলা সেচ কমিটির অনুমোদন ছাড়াই আরও একটি সেমিডিপ বসাতে বোরহোল করান কছির উদ্দিন। মাটির প্রায় ৯০ ফুট গভীরে যাওয়ার পর পাথর উঠতে থাকায় তিনি পরপর তিনটি স্থানে বোরহোল করেন। তবুও পানির সন্ধান না মেলায় সেখানে সেমিডিপ বসানো হয়নি। সেই পরিত্যক্ত বোরহোলগুলোর একটিতে পড়ে মারা যায় শিশু সাজিদ। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাঈমা খান বলেন, ‘‘কছির উদ্দিনের অবহেলার কারণেই এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। ভিকটিমের পরিবার যেভাবে চাইবে, সেভাবেই আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

পদাধিকারবলে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি হিসেবে ইউএনও জানান, কছির উদ্দিনের আগের কয়েকটি সেচপাম্প বৈধ কি না যাচাই করা হবে। তবে যে বোরহোলে পড়ে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে, সেটির জন্য কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এটি ছিল বেআইনি কাজ।

এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে নাঈমা খান বলেন, ‘‘সবকিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ঘটনার পর থেকেই কছির উদ্দিন আত্মগোপনে থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

ঢাকা/শিরিন//

সম্পর্কিত নিবন্ধ