অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ
Published: 6th, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে ১০৪ জন অবৈধ অভিবাসীকে। গতকাল বুধবার তাদের নিয়ে অমৃতসর বিমান বন্দরে নামে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সি-১৭ বিমান।
নির্বাসিত ভারতীয় নাগরিকরা অভিযোগ করেছেন, তাদের পুরো যাত্রা জুড়ে হাতকড়া ও পায়ে শিকল পরিয়ে সামরিক বিমানে ফেরত পাঠানো হয়েছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাসিত ভারতীয়দের তালিকায় রয়েছেন যশপাল সিং। ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে তিনি বলেন, “অমৃতসর বিমানবন্দরে অবতরণের পরে শিকল খুলে ফেলা হয়েছিল।”
যশপাল পাঞ্জাবের গুরুদাসপুরের বাসিন্দা। তার কথায়, “আমরা ভেবেছিলাম আমাদের অন্য কোনো ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারপর একজন পুলিশ কর্মকর্তা আমাদের জানান যে, আমাদের ভারতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমাদের হাতকড়া পরানো হয়েছিল এবং আমাদের পায়ে শিকল বাঁধা ছিল। অমৃতসর বিমানবন্দরে নামার পরে শিকল, হাতকড়া খোলা হয়।”
গত ২৪ জানুয়ারি মেক্সিকো সীমান্তে মার্কিন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন যশপাল। তার দাবি, একজন ট্রাভেল এজেন্ট তাঁকে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা করেছেন।
যশপাল আরো বলেন, তাকে ১১ দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আটক রাখা হয়েছিল এবং তারপর তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে কঠোর অভিবাসন নীতি জারি করেছেন। অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাসিত ১০৪ জন অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীর প্রথম ব্যাচে ৩৩ জন হরিয়ানার, ৩৩ জন গুজরাটের, ৩০ জন পাঞ্জাবের, তিনজন মহারাষ্ট্র ও উত্তরপ্রদেশের এবং দুজন চণ্ডীগড়ের। নির্বাসিতদের মধ্যে ১৯ জন নারী এবং ১৩ জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক রয়েছেন, তাদের মধ্যে চার বছরের একটি ছেলে এবং পাঁচ ও সাত বছরের দুটি মেয়ে রয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে ওয়াশিংটন সফরে যাওয়ার মাত্র কয়েকদিন আগে অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের ঘটনা ঘটল।
সূত্রের বরাতে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, মার্কিন কর্মকর্তারা ভারতে ফেরত পাঠানোর জন্য ১৮ হাজার অবৈধ ভারতীয়ের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর ছ ন আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।