গাজায় ‘জাতিগত নির্মূল’ চালানোর ট্রাম্পের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন কি সম্ভব
Published: 9th, February 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাজুড়ে কয়েক দিন আগে দেখা গেল, উদ্বাস্তু হওয়া ফিলিস্তিদের উচ্ছ্বাস, সেই সঙ্গে পরিবার ও স্বজনের সঙ্গে অশ্রুসিক্ত চোখে পুনর্মিলনের অভূতপূর্ব সব দৃশ্য। গাজায় টানা ১৫ মাস ইসরায়েলের তাণ্ডব চলার পর হামাসের সঙ্গে হওয়া যুদ্ধবিরতির সুফল হিসেবে উপত্যকার দক্ষিণ থেকে উত্তরে নিজেদের বিধ্বস্ত বাড়িঘরে ফিরতে পেরেছেন তাঁরা।
ফিলিস্তিনিদের ইতিহাসে বাস্তুচ্যুত হয়ে আবার নিজ বাড়িঘরে তাঁদের ফিরতে পারার এমন বিরল ঘটনাকে অভিনন্দিত করেছেন অধিকারকর্মীরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উল্টো অবস্থানে। তিনি গাজা খালি করে এখানকার সব বাসিন্দাকে প্রতিবেশী দেশ মিসর ও জর্ডানে পাঠাতে চান।
মিসর ও জর্ডানের এ অবস্থান (ট্রাম্পের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান) যে শুধু ফিলিস্তিন বিষয়ে তাদের অনুভূতি বা তারা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটকে যেভাবে দেখে থাকে, তার সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট, তা নয়। এটি দেশ দুটির জাতীয় নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের সঙ্গেও যুক্ত। এ নিয়ে তারা কোনো ছাড় দেবে না।ইউসুফ মুনায়ার, আরব সেন্টার ওয়াশিংটন ডিসির ফিলিস্তিন/ইসরায়েল কর্মসূচির প্রধানদ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ২৫ জানুয়ারি ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি চাই মিসর (গাজা থেকে) আরও মানুষ (ফিলিস্তিনি) নিয়ে যাক। আপনারা সম্ভবত ১৫ লাখ মানুষের কথা বলছেন। তাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গাজা খালি করতে হবে আমাদের।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘গাজার বাসিন্দাদের সাময়িক সময়ের জন্য বা স্থায়ীভাবে এসব দেশে সরিয়ে নেওয়া যেতে পারে। সত্যিকার অর্থে এটা (গাজা) এখন একটি ধ্বংসযজ্ঞ। প্রায় সবই ধ্বংস হয়েছে। মানুষ মারা যাচ্ছে।’
আরও পড়ুনট্রাম্পের গাজা ‘খালি’ করার পরিকল্পনায় লাভবান কে ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫বিশ্লেষকদের মত, ট্রাম্পের এমন প্রস্তাব জাতিগত নির্মূলের শামিল হতে পারে। কিন্তু এ অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে এর বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা কম।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আরব সেন্টার ওয়াশিংটন ডিসির ফিলিস্তিন/ইসরায়েল কর্মসূচির প্রধান ইউসুফ মুনায়ার বলেন, সব নীতিনৈতিকতা ও মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করায় ট্রাম্পের ‘ভয়ানক’ বিবৃতির নিন্দা জানানো উচিত।
নিজেদের বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপের মাঝেই তাঁবু টানিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন গাজার উত্তরাঞ্চলে ফিরে আসা ফিলিস্তিনিরা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।