শেষ কবে এমন একটা দিন কাটিয়েছেন, যেদিন ফেসবুক, ইউটিউব বা ইনস্টাগ্রামে একটি রিল বা শর্টস দেখেননি?

প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা কঠিনই হওয়ার কথা। কারণ, স্বল্পদৈর্ঘ্যের এসব ভিডিও আমাদের জীবনযাপনের অংশ হয়ে গেছে। মজা করে অনেকে এমনও বলেন, ‘রাত ১১টায় ইউটিউবে একটা শর্টস দেখতে শুরু করেছিলাম। “একটু পর” দেখি রাত ৩টা বাজে!’

ফেসবুকে একটি রিলের দৈর্ঘ্য হতে পারে সর্বোচ্চ তিন মিনিট। ইনস্টাগ্রামে ৯০ সেকেন্ড। ইউটিউবের একেকটি শর্টস অবশ্য এক মিনিটের বেশি নয়। এই স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিওগুলোই আমাদের একরকম নেশায় ফেলে দেয়। একবার দেখা শুরু করলে আমরা দেখতেই থাকি। কিন্তু অনবরত রিল বা শর্টস দেখার কারণে আপনার মস্তিষ্কে কী ঘটছে, সেটা কি জানেন?

সম্প্রতি চীনের গবেষকেরা একটি বিশ্লেষণে জানিয়েছেন, এই অভ্যাস আমাদের মস্তিষ্কে, মানসিক স্বাস্থ্যে ও আচরণে কী কী প্রভাব ফেলে।

আরও পড়ুনকিডনি ভালো রাখবে সকালের এই ৫ অভ্যাস০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

শিক্ষাবিষয়ক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম সাইয়ের (PSY) মনোবিজ্ঞানী অ্যান্ড্রি রাইজিক বলছেন, ছোট ছোট ভিডিও দেখার অভ্যাস মানুষের মস্তিষ্কে নানা রকম পরিবর্তন আনতে পারে। এসব পরিবর্তনের মধ্যে একটি হলো, আরও বেশি হিংসাত্মক বা পরশ্রীকাতর হয়ে পড়া। অন্যের সাফল্য বা জীবনযাত্রা দেখে হিংসা অনুভব করা।

২০২৪ সালে চীনের ইন্টারনেট উন্নয়নের ৫৪তম পরিসংখ্যান প্রতিবেদন অনুসারে, শুধু চীনেই শর্টস ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে, যা চীনের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৯৫ শতাংশের বেশি। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ কিশোর–কিশোরী ও বয়স্ক ব্যক্তি।

চীনের তিয়ানজিন নরমাল ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞরা ১১২ কলেজশিক্ষার্থীর ওপর একটি গবেষণা করেছিলেন। রিল বা শর্টস আমাদের মস্তিষ্কে কী প্রভাব ফেলে, তা-ই উঠে এসেছে এ গবেষণায়—

১.

ঈর্ষা ও আসক্তি

ঈর্ষাকাতর মানুষের রিল বা শর্টসে আসক্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। অনেক সময় তাঁরা নেতিবাচক আবেগ থেকে মনকে ভুলিয়ে রাখতে কিংবা অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করতে বারবার শর্টসের কাছে ফিরে যান।

২. মস্তিষ্কের পরিবর্তন

শর্টসে আসক্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। বিশেষ করে মস্তিষ্কের যে অংশগুলো আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে, সেই অংশে। তার মানে এই নয় যে শর্টস বা রিল আমাদের মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে; বরং এই অভ্যাস মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে।

৩. জিনের ভূমিকা

গবেষণায় এমন কিছু জিন পাওয়া গেছে, যেগুলোর কার্যকারিতা ছোট ছোট ভিডিওর আসক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এতে বোঝা যায়, এ ধরনের আসক্তির প্রবণতা আংশিকভাবে জন্মগতও হতে পারে।

আরও পড়ুনআম্মার ভয়ে প্রেম করিনি, এখন আম্মাই বলে, তুমি খুঁজে আনো৭ ঘণ্টা আগে

৪. কিশোর-কিশোরীরা বেশি ঝুঁকিতে

কিছু নির্দিষ্ট জিন বয়ঃসন্ধিকালে বেশি সক্রিয় থাকে, এর ফলে কিশোর–কিশোরীদের শর্টস বা রিলসে আসক্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

শর্টস বা রিল মস্তিষ্কের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলে?

১. বদলে যেতে পারে পুরস্কার গ্রহণের অভ্যাস

যেসব রিল বা শর্টসে দৃশ্য দ্রুত পরিবর্তন হয় বা যা আমাদের আবেগকে নাড়া দেয়, সেগুলো মস্তিষ্ককে একরকম ‘পুরস্কৃত’ করে। একে বলা যেতে পারে মস্তিষ্কের ‘রিওয়ার্ড সিস্টেম’। মস্তিষ্ক যদি এ ধরনের উদ্দীপনায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে সে এ রকম ‘পুরস্কার’ আরও চাইতে শুরু করে। ফলে ভিডিও দেখার আসক্তি বাড়ে।

২. মনোযোগ হ্রাস

আমাদের মস্তিষ্কের ‘প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স’ অংশটি পরিকল্পনা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ছোট ছোট ভিডিও বেশি দেখলে এই অংশের কার্যক্ষমতা কমতে পারে, ফলে ভিডিও দেখা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়। ফলে পরিকল্পনা করা কঠিন বলে মনে হয়।

৩. তথ্য গ্রহণের ধরন বদলে যেতে পারে

মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে ছোট ভিডিও ও খণ্ডিত তথ্যের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারে। এর ফলে দীর্ঘ ও জটিল বিষয়ে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হতে পারে এবং ধীরগতির তথ্য প্রক্রিয়াকরণেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৪. আবেগ নিয়ন্ত্রণের সমস্যা হতে পারে

অনেকে নেতিবাচক আবেগ, যেমন দুঃখ বা ঈর্ষা থেকে বাঁচতে শর্টস বা রিল দেখে, যা স্বল্প মেয়াদে কাজ করলেও দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক আবেগ আরও বাড়িয়ে দেয়।

সব মিলিয়ে গবেষণা বলছে, স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিওর কিছু ইতিবাচক দিক থাকতে পারে, তবে অতিরিক্ত দেখলে অভ্যাসগত পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক। আবার এ ধরনের অভ্যাস সবার ওপর একই রকম প্রভাব ফেলবে, তা-ও নয়। ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী ফল আলাদা হতে পারে।

এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন, তবে সচেতন থাকাটা জরুরি, বিশেষ করে কিশোর–কিশোরীদের জন্য।

সূত্র : ডেভ ইউএ

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বল প আসক ত

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ