অনবরত রিল বা শর্টস দেখার কারণে আপনার মস্তিষ্কে কী ঘটছে, জানেন
Published: 9th, February 2025 GMT
শেষ কবে এমন একটা দিন কাটিয়েছেন, যেদিন ফেসবুক, ইউটিউব বা ইনস্টাগ্রামে একটি রিল বা শর্টস দেখেননি?
প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা কঠিনই হওয়ার কথা। কারণ, স্বল্পদৈর্ঘ্যের এসব ভিডিও আমাদের জীবনযাপনের অংশ হয়ে গেছে। মজা করে অনেকে এমনও বলেন, ‘রাত ১১টায় ইউটিউবে একটা শর্টস দেখতে শুরু করেছিলাম। “একটু পর” দেখি রাত ৩টা বাজে!’
ফেসবুকে একটি রিলের দৈর্ঘ্য হতে পারে সর্বোচ্চ তিন মিনিট। ইনস্টাগ্রামে ৯০ সেকেন্ড। ইউটিউবের একেকটি শর্টস অবশ্য এক মিনিটের বেশি নয়। এই স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিওগুলোই আমাদের একরকম নেশায় ফেলে দেয়। একবার দেখা শুরু করলে আমরা দেখতেই থাকি। কিন্তু অনবরত রিল বা শর্টস দেখার কারণে আপনার মস্তিষ্কে কী ঘটছে, সেটা কি জানেন?
সম্প্রতি চীনের গবেষকেরা একটি বিশ্লেষণে জানিয়েছেন, এই অভ্যাস আমাদের মস্তিষ্কে, মানসিক স্বাস্থ্যে ও আচরণে কী কী প্রভাব ফেলে।
আরও পড়ুনকিডনি ভালো রাখবে সকালের এই ৫ অভ্যাস০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫শিক্ষাবিষয়ক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম সাইয়ের (PSY) মনোবিজ্ঞানী অ্যান্ড্রি রাইজিক বলছেন, ছোট ছোট ভিডিও দেখার অভ্যাস মানুষের মস্তিষ্কে নানা রকম পরিবর্তন আনতে পারে। এসব পরিবর্তনের মধ্যে একটি হলো, আরও বেশি হিংসাত্মক বা পরশ্রীকাতর হয়ে পড়া। অন্যের সাফল্য বা জীবনযাত্রা দেখে হিংসা অনুভব করা।
২০২৪ সালে চীনের ইন্টারনেট উন্নয়নের ৫৪তম পরিসংখ্যান প্রতিবেদন অনুসারে, শুধু চীনেই শর্টস ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে, যা চীনের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৯৫ শতাংশের বেশি। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ কিশোর–কিশোরী ও বয়স্ক ব্যক্তি।
চীনের তিয়ানজিন নরমাল ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞরা ১১২ কলেজশিক্ষার্থীর ওপর একটি গবেষণা করেছিলেন। রিল বা শর্টস আমাদের মস্তিষ্কে কী প্রভাব ফেলে, তা-ই উঠে এসেছে এ গবেষণায়—
১.
ঈর্ষা ও আসক্তি
ঈর্ষাকাতর মানুষের রিল বা শর্টসে আসক্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। অনেক সময় তাঁরা নেতিবাচক আবেগ থেকে মনকে ভুলিয়ে রাখতে কিংবা অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করতে বারবার শর্টসের কাছে ফিরে যান।
২. মস্তিষ্কের পরিবর্তন
শর্টসে আসক্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। বিশেষ করে মস্তিষ্কের যে অংশগুলো আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে, সেই অংশে। তার মানে এই নয় যে শর্টস বা রিল আমাদের মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে; বরং এই অভ্যাস মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে।
৩. জিনের ভূমিকা
গবেষণায় এমন কিছু জিন পাওয়া গেছে, যেগুলোর কার্যকারিতা ছোট ছোট ভিডিওর আসক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এতে বোঝা যায়, এ ধরনের আসক্তির প্রবণতা আংশিকভাবে জন্মগতও হতে পারে।
আরও পড়ুনআম্মার ভয়ে প্রেম করিনি, এখন আম্মাই বলে, তুমি খুঁজে আনো৭ ঘণ্টা আগে৪. কিশোর-কিশোরীরা বেশি ঝুঁকিতে
কিছু নির্দিষ্ট জিন বয়ঃসন্ধিকালে বেশি সক্রিয় থাকে, এর ফলে কিশোর–কিশোরীদের শর্টস বা রিলসে আসক্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
শর্টস বা রিল মস্তিষ্কের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলে?
১. বদলে যেতে পারে পুরস্কার গ্রহণের অভ্যাস
যেসব রিল বা শর্টসে দৃশ্য দ্রুত পরিবর্তন হয় বা যা আমাদের আবেগকে নাড়া দেয়, সেগুলো মস্তিষ্ককে একরকম ‘পুরস্কৃত’ করে। একে বলা যেতে পারে মস্তিষ্কের ‘রিওয়ার্ড সিস্টেম’। মস্তিষ্ক যদি এ ধরনের উদ্দীপনায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে সে এ রকম ‘পুরস্কার’ আরও চাইতে শুরু করে। ফলে ভিডিও দেখার আসক্তি বাড়ে।
২. মনোযোগ হ্রাস
আমাদের মস্তিষ্কের ‘প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স’ অংশটি পরিকল্পনা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ছোট ছোট ভিডিও বেশি দেখলে এই অংশের কার্যক্ষমতা কমতে পারে, ফলে ভিডিও দেখা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়। ফলে পরিকল্পনা করা কঠিন বলে মনে হয়।
৩. তথ্য গ্রহণের ধরন বদলে যেতে পারে
মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে ছোট ভিডিও ও খণ্ডিত তথ্যের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারে। এর ফলে দীর্ঘ ও জটিল বিষয়ে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হতে পারে এবং ধীরগতির তথ্য প্রক্রিয়াকরণেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪. আবেগ নিয়ন্ত্রণের সমস্যা হতে পারে
অনেকে নেতিবাচক আবেগ, যেমন দুঃখ বা ঈর্ষা থেকে বাঁচতে শর্টস বা রিল দেখে, যা স্বল্প মেয়াদে কাজ করলেও দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক আবেগ আরও বাড়িয়ে দেয়।
সব মিলিয়ে গবেষণা বলছে, স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিওর কিছু ইতিবাচক দিক থাকতে পারে, তবে অতিরিক্ত দেখলে অভ্যাসগত পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক। আবার এ ধরনের অভ্যাস সবার ওপর একই রকম প্রভাব ফেলবে, তা-ও নয়। ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী ফল আলাদা হতে পারে।
এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন, তবে সচেতন থাকাটা জরুরি, বিশেষ করে কিশোর–কিশোরীদের জন্য।
সূত্র : ডেভ ইউএ
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এনসিসি ব্যাংকের পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত
বেসরকারি খাতের এনসিসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৫৪৮তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে পর্ষদ সভাটি হয়।
এনসিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নূরুন নেওয়াজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, পরিচালক ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান আমজাদুল ফেরদৌস চৌধুরী, পরিচালক ও প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান তানজিনা আলী, পরিচালক সৈয়দ আসিফ নিজাম উদ্দিন, পরিচালক ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান খায়রুল আলম চাকলাদার, পরিচালক মোহাম্মদ সাজ্জাদ উন নেওয়াজ, শামিমা নেওয়াজ, মোরশেদুল আলম চাকলাদার, নাহিদ বানু, স্বতন্ত্র পরিচালক মীর সাজেদ উল বাসার এবং স্বতন্ত্র পরিচালক ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আমিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম শামসুল আরেফিন, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম খোরশেদ আলম, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকির আনাম, মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, মো. মনিরুল আলম (কোম্পানি সচিব) ও মো. হাবিবুর রহমান এবং বোর্ড ডিভিশনের এসএভিপি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এনসিসি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, সভায় ব্যাংকের চলমান ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও কৌশলগত পরিকল্পনা–সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি–সেপ্টেম্বর) ব্যাংকটি মুনাফা করেছে ১৭৩ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির মুনাফা ছিল ২৭৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যাংকটির মুনাফা কমেছে ১০২ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটি মুনাফা করে ৫৮ কোটি টাকা। গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে মুনাফা ২০১ কোটি টাকা।