আচারের চালতা কেটে ৬ মাস সংসার চলে তাদের
Published: 11th, February 2025 GMT
বাড়ি নেই, ঘরও নেই। ৫০০ টাকা মাসিক ভাড়ায় থাকেন একটি টিনের ছাপরায়। তার দরজাও নেই। স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে এই ছাপরায় থাকেন আবদুল মমিন (৪৪)। তাঁর নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। তবে আচারের কারখানার জন্য চালতা কাটার টাকায় ছয় মাস সংসার চলে তাঁর।
আবদুল মমিন থাকেন পাবনার ভাঙ্গুড়ায়। তাঁর মতো হতদরিদ্র দুই শ থেকে আড়াই শ পরিবার চালতা কেটে যে আয় করে, তা দিয়ে ছয় মাসের সংসার খরচ চলে তাদের।
সম্প্রতি উপজেলার হালদারপাড়ায় আবদুল মমিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি বসে চালতা কাটছেন। প্রথমে তিনি একটি চালতাকে চার ভাগ করে দিচ্ছেন। তাঁর স্ত্রী লাভলী বেগম ও মেয়ে মুক্তি খাতুন সেটা কুচি কুচি করছেন। ১০০টা চালতা কুচি করলে ৮০ টাকা পাওয়া যায়। রাত ১১টা পর্যন্ত কাজ করলে তাঁরা ৪০০ চালতা কাটতে পারেন।
আচারের জন্য এই চালতা আসে বরিশাল ও ভোলা থেকে। ছয়জন ব্যবসায়ী চালতা নিয়ে আসেন। উপজেলার শাহপাড়ার মোড়ে চালতার আড়ত আছে। আড়তের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বরিশাল থেকে চালতা আনতে ট্রাকভাড়া পড়ে ২৯ হাজার টাকা। এক গাড়ি চালতার দাম পড়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। ১০০ চালতা থেকে প্রায় ৮ কেজি আচার হয়।
আড়ত থেকে বাড়ি বাড়ি চালতা পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছিলেন শ্রমিক আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, তাঁরা বস্তায় ১০০টি চালতা ভরে কাটার জন্য বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার বিনিময়ে ১৬ টাকা করে পান।
কারখানায় আচার তৈরি করে সেই আচার সারা দেশে পাঠানো হয়। আর এলাকার লোকজন হাটে-বাজারে, জলসাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে খুচরা বিক্রি করেন।
এই চালতা নিয়ে সেখানে পাঁচ ধরনের ব্যবসা হয়। মহাজনেরা কাঁচা চালতা ট্রাকে করে নিয়ে আসেন। শ্রমিকেরা বাড়ি বাড়ি কাটার জন্য পৌঁছে দেন। বাড়িতে বসে সেগুলো কাটার কাজ করেন পরিবারের লোকজন। কারখানার শ্রমিকেরা আচার তৈরি করেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা সেগুলো বিক্রি করেন।
আবদুল মমিন বলেন, এসএসসি পরীক্ষায় দুই বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ার পর আর পড়াশোনা করেননি। সংসার পেতেছেন। চালতার মৌসুম শেষ হয়ে গেলে গ্যাসের চুলা সারাইয়ে কাজ করেন। চালতা কাটায় মজুরি কম, তবু কেন এই কাজ করেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটা কর্ম তো কইর্যা খাইতে হবে। গরিব মানুষ।’
মমিনের স্ত্রী লাবনী বেগমের হাতের আঙুলগুলো কাপড় দিয়ে জড়ানো। তারপরও কেটে যায় মাঝেমধ্যে। এ জন্য বাড়িতে সব সময় ওষুধ এনে রাখতে হয়। স্বামীর কাজে মোটামুটি সন্তুষ্ট লাভলী বেগম বলেন, ‘কাজকর্ম তো করে, বইস্যা তো থাহে না।’
চালতা চার ভাগ করে কাটার পর বীজ ফেলে দেওয়া হয়। এই বীজ ভালো জ্বালানি হিসেবে কাজে লাগে। হালদারপাড়ার কল্পনা রানী হালদার চালতার বীজ রোদে দিতে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, তাঁর শ্বশুর তাঁকে সহযোগিতা করেন। সারা দিনে তাঁরা ৩০০ থেকে ৪০০ চালতা কাটেন। একই পাড়ার পিংকি রানী হালদারও চালতা কাটেন। তিনি বলেন, ননদ, শাশুড়ি ও তিনি মিলে ৫০০ থেকে ৬০০ চালতা কাটেন। তাঁর স্বামী অটোরিকশা চালান। এ দিয়েই তাঁদের সংসার চলে।
ওই পাড়াতেই আলিমুদ্দিন নামের একজন আচার বিক্রেতাকে পাওয়া গেল। তিনি উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ফেরি করে চালতার আচার বিক্রি করেন। তিনি বলেন, তাঁর কোনো পুঁজি নেই। বেচাবিক্রি করে মহাজনকে টাকা দেন। কোনো মাসে ৫ হাজার টাকা আয় হয়। আবার কোনো মাসে বেশিও হয়। তিনি উত্তরাঞ্চলের কোনো শহরে কোথায় চালতার গাছ আছে, মুখস্থ বলে দিতে পারেন। বলে দিলেন রাজশাহী শহরের কোথায় চালতার গাছ আছে।
শাহপাড়ার মোড়ে এসে পাওয়া গেল মহাজন স্বপন গাজীকে। তিনিসহ ছয়জন ব্যবসায়ী বরিশাল ও ভোলা থেকে পাবনায় চালতা নিয়ে আসেন। স্বপন ৩০ বছর ধরে চালতার ব্যবসা করেন। বাড়ি বরিশালে হলেও পরিবার নিয়ে রংপুরে স্থায়ী হয়েছেন। রংপুরে ‘টক ভান্ডার’ নামে তাঁর একটি আড়ত আছে। সেখানে মৌসুমি সব টকজাতীয় ফল তিনি সরবরাহ করেন। তিনি বললেন, যেখানে গরিব মানুষ আছে, সেখানেই তাঁর ব্যবসা। হতদরিদ্র পরিবারের মেয়েরা চালতা কাটার কাজ করে বাড়তি কিছু আয় করেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ব যবস ক জ কর বর শ ল পর ব র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা
‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’
এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’
প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।