কিছু ইঙ্গিত আছে, অতীতে তদন্তপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে: আইনজীবী শিশির মনির
Published: 11th, February 2025 GMT
অতীতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় তদন্তপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে—এমন তথ্য–উপাত্ত এসেছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি বলেন, কিছু ইঙ্গিত আছে—স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ বাস্তবায়ন করার জন্য তদন্তপ্রক্রিয়াকে সঠিক আইনিভাবে পরিচালিত হতে দেওয়া হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বর্ধিত ভবনের সামনে আজ মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আজ সেই জোড়া খুনের ১৩ বছর পূর্ণ হলো।
হাইকোর্ট বিভাগের বর্ধিত ভবনের সামনে আইনজীবী শিশির মনিরের সঙ্গে ছিলেন মামলার বাদী ও রুনির ভাই নওশের আলম। ছিলেন সাগর–রুনির একমাত্র সন্তান মিহির সরওয়ার মেঘ। শিশির মনির মামলার বাদী নওশের আলমের আইনজীবী।
শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৩ বছরেও মামলাটির তদন্ত শেষ করে রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি। আমরা মনে করি, এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে একটি বড় ধরনের ব্যর্থতার ফল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চতর টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছে। উচ্চতর টাস্কফোর্স আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে তাদের তদন্তের সারবত্তা পেশ করবেন। এই সময়ের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, আমাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।’ তিনি বলেন, সায়েন্টিফিক এবং ফরেন (বিদেশি) যেসব এভিডেন্স (প্রমাণ) আছে, সেগুলো এক্সামিন (খতিয়ে দেখা) করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। শিশির মনির বলেন, ‘যতটুকু আমরা জানতে পেরেছি, বেশ কিছু ডেভেলপমেন্ট হাতে এসেছে। সময়ের ব্যবধানে এই ডেভেলপমেন্টগুলো নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন সাবমিট (জমা) করা হবে।’
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, অতীতে এই তদন্তপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। এই তদন্তপ্রক্রিয়াকে সঠিকভাবে আইনি পদ্ধতিতে চলতে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘স্বল্পতম সময়ের মধ্যে হাইকোর্টের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তারা একটি গ্রহণযোগ্য এবং সত্যিকার অর্থেই বিচার পরিচালনা করার মতো উপযুক্ত তদন্ত রিপোর্ট আদালতের সামনে দাখিল করবেন—এটিই আমরা প্রত্যাশা করি।’
‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ’
এক প্রশ্নের জবাবে শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, তদন্তের বিষয়টির সঙ্গে একটু স্পর্শকাতরতা (সেনসিটিভিটি) আছে। তদন্তের বিষয়টির সঙ্গে একধরনের গোপনীয়তা আছে। তিনি বলেন, ‘তারপরও এতটুকু জানাচ্ছি আমরা—যাঁদের এক্সামিন (জিজ্ঞাসাবাদ) করা হয়েছে, যাঁদের সঙ্গে তদন্তকারী কর্মকর্তারা আলোচনা–আলাপ করেছেন, অন্য মামলায় জেলে আছেন, এমন ব্যক্তিদের সঙ্গেও আলাপ করা হয়েছে। যাঁরা কিছুটা স্টেটমেন্ট দিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগাযোগের ব্যাপারে তাঁরা মুখ খুলেছেন।’
আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে এসব বিষয়ে পুরোটা বলছেন না বলে উল্লেখ করেন আইনজীবী শিশির মনির। তিনি বলেন, তবে সেখানে কিছু আশা আছে, কিছু ইন্ডিকেশন (ইঙ্গিত) আছে, যেখানে অতীতে এই তদন্তপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে, স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্টারেস্ট ইমপ্লিমেন্ট (স্বার্থ বাস্তবায়ন) করার জন্য এই তদন্তপ্রক্রিয়াকে সঠিক আইনিভাবে পরিচালিত হতে দেওয়া হয়নি। এগুলো তদন্তের অংশ হবে। তিনি আরও বলেন, কারা বাধা দিয়েছেন, কীভাবে দিয়েছেন। আগে যাঁরা রিট করেছিলেন, তাঁরাই বা কেন রিট করেছিলেন। কেন র্যাবকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।.
অপর প্রশ্নে শিশির মনির বলেন, অতীতে উচ্চপর্যায় থেকে এখানে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। এই উচ্চপর্যায় চিহ্নিত করে তদন্ত রিপোর্টে দেখানো হবে। আপাতত তদন্তের স্বার্থে এই উচ্চপর্যায়ের সুনির্দিষ্ট গতিবিধি বলাটা সমীচীন নয়।
আরও পড়ুনসাগর-রুনি হত্যার ১৩ বছর: ৬ বছর মামলার কার্যত কোনো তদন্ত হয়নি ১৪ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ শ র মন র তদন ত র আইনজ ব র বল ন পর য য় কর ছ ন সময় র
এছাড়াও পড়ুন:
বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ পঞ্চম পর্বে থাকছে বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ মূলত আইনজীবীদের পেশাজীবনের অনুসরণীয় বিধিমালা। এ আইন থেকে আইনজীবী তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষায় দুটি প্রশ্ন আসবে। উত্তর দিতে হবে একটি। নম্বর থাকবে ১০।
প্রশ্নপত্রের মানবণ্টন দেখেই বোঝা যাচ্ছে আইনটি কেমন হতে পারে। মূলত বার কাউন্সিলের গঠন, আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা এবং একজন আইনজীবী হিসেবে সমাজের প্রতি, মক্কেলের প্রতি, সহকর্মীদের প্রতি যেসব দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা এ আইনে বলা হয়েছে। বাস্তবধর্মী ও পেশাজীবনে অতি চর্চিত একটি আইন হলো বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২। এ আইন থেকে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।
যেমন বার কাউন্সিল কীভাবে গঠিত হয়, বার কাউন্সিলের কার্যবালি কী, সদস্যরা কীভাবে নির্বাচিত হন, কতগুলো কমিটি রয়েছে, কমিটির কাজ কী কী—এগুলো পড়তে হবে। অনেকেই আছে বার কাউন্সিল ও বার অ্যাসোশিয়েশনের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না। এটি ভালো করে রপ্ত করতে হবে। এমন প্রশ্ন হরহামেশা পরীক্ষায় আসে।
এ ছাড়া বার ট্রাইব্যুনালের গঠন ও কার্যাবলি, আইনজীবীদের পেশাগত অসদাচরণের জন্য কী কী ধরনের শাস্তি রয়েছে, বার কাউন্সিল কি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে সুয়োমোটো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে—বিষয়গুলো কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। অনুচ্ছেদ ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩২ এবং বিধি ৪১, ৪১ক ও ৫০–এ এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। সেগুলো ভালো করে পড়তে হবে। অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা, একজন আইনজীবী হিসেবে আরেক আইনজীবীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তর জানতে হবে। এসব বিষয় থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে।
পেশাগত বিধি অংশে রচনামূলক প্রশ্ন আসতে পারে। যেমন পেশাগত বিধি এবং নীতিমালার আলোকে আদালতের প্রতি, মক্কেলের প্রতিসহ আইনজীবীদের প্রতি ও জনসাধারণের প্রতি একজন আইনজীবীর দায়িত্ব ও কর্তব্য পর্যালোচনা করতে বলা হয়। বর্তমান ঢাকা বারসহ বেশ কয়েকটি বার অ্যাসোশিয়েশনে এডহক কমিটি রয়েছে। এডহক বার কাউন্সিলের গঠন ও ফাংশনস সম্পর্কে প্রশ্ন আসতে পারে। এগুলো ভালো করে পড়তে হবে।
অনেক সময়ে আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরসংক্রান্ত মুসাবিদা করতে দেওয়া হয়। তাই এই মুসাবিদা নিয়মিত অনুশীলন করবেন। মনে রাখবেন, মামলার মুসাবিদা ও আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগের মুসাবিদার ধরন কিন্তু এক নয়। তাই যেকোনো ভালো একটি বই থেকে ফরমেটটি দেখে নেবেন এবং অনুশীলন করবেন। একই সঙ্গে বিগত কয়েক বছরের প্রশ্ন সমাধান করবেন। এ আইন থেকে বিগত বছরের প্রশ্ন রিপিটও হয়।
একটি বিষয় মনে রাখবেন, আইনটি সহজ বলে অবহেলা করার সুযোগ নেই। কারণ, কৃতকার্য হওয়ার জন্য এই ১০ নম্বর অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে।