হত্যা মামলা থেকে ছয়জনের অব্যাহতি চায় পরিবার
Published: 11th, February 2025 GMT
কুমিল্লায় হেফাজতে যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলাম হত্যা মামলা থেকে ছয় আসামির অব্যাহতি চেয়েছে পরিবার। গতকাল মঙ্গলবার কুমিল্লা নগরীর টমছম ব্রিজ এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবির সঙ্গে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানান তারা।
বাবার কুলখানিতে এসে গত ৩১ জানুয়ারি রাতে যৌথ বাহিনীর হাতে আটক হন কুমিল্লা আদর্শ সদরের ইটাল্লা গ্রামের তৌহিদুল ইসলাম। পরদিন হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের এ আহ্বায়ককে মৃত ঘোষণা করেন। ৫ ফেব্রুয়ারি তৌহিদুলের স্ত্রী ইয়াছমিন নাহার বেসামরিক ছয়জনের নামে ও অজ্ঞাতপরিচয় ২০-২৫ ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।
লিখিত বক্তব্যে মোক্তল হোসেন বলেন, ‘তৌহিদুলের পরিবারের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধের কথা উল্লেখ করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার নিরপরাধ তিন সন্তান– নাজমুল হাসান টিটু, খায়রুল হাসান মাহফুজ ও সাইদুল হাসান সবুজকে আসামি করা হয়েছে। প্রতিবেশী ফজলুর রহমানের ছেলেকেও আসামি করা হয়েছে। ঘটনার সময় মাহফুজ তার কর্মস্থল সিলেটে ছিল।’
তিনি বলেন, ‘জায়গা-জমির বিরোধ থাকতে পারে, যা সমাধানযোগ্য। কিন্তু এর জেরে সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ, বেসামরিক লোক হয়ে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে গিয়ে অভিযান চালানো এবং তৌহিদুলকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করার অভিযোগ ভিত্তিহীন ও প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ করেছি– কেউ প্রমাণ করতে পারলে যে কোনো শাস্তি মেনে নেব।’
সংবাদ সম্মেলনে স্বজনরা ছয় বেসামরিক আসামিকে নির্দোষ দাবি করে অব্যাহতি এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
এ সময় বক্তৃতা করেন মোক্তল হোসেনের স্ত্রী পেয়ারা বেগম, ২ নম্বর আসামি তানজিল উদ্দিনের বাবা ফজলুর রহমান, মা মরিয়ম বেগম প্রমুখ।
জানতে চাইলে তৌহিদুলের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ সমকালকে বলেন, ‘ঘটনার হোতা তানজিল উদ্দিন। তিনিই মামলার প্রধান আসামি ও তাদের আত্মীয় সাইফুল ইসলামকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে পাঠিয়েছেন। সাইফুলকে সেনাবাহিনীর গাড়িতে শত শত মানুষ দেখেছেন। আসামি সবাই ঘটনার সঙ্গে বিভিন্নভাবে জড়িত ছিলেন। তবে পুলিশ তদন্ত করে সত্য বের করুক, এটা আমরাও চাই।’
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম জানান, আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তদন্তে প্রকৃত দোষী বেরিয়ে আসবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য বল গ ল ইসল ম ঘটন র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
গোদাগাড়ীতে সন্ত্রাসী হামলায় নারীসহ ৬ জন আহত
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে একটি পরিবার। এতে ছয়জন আহত হয়েছেন। এছাড়া তাদের বাড়িঘরে ভাঙচুর করা হয়েছে। ধানের পালায় অগ্নিসংযোগ এবং খেতের পেয়ারা বাগান কেটে দেয়া হয়েছে। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের পানিপার গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার (১১ জুন) প্রথমে পেয়ারা বাগানের ৪১টি গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর দিন হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। আহত ছয়জন এখন গোদাগাড়ী ৩১ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
হাসপাতালে ভর্তিরা হলেন, চর আষাড়িয়াদহ পানিপার গ্রামের আল্লাম হোসেন, তার ছেলে গোলাম মোস্তফা বাবু, মেয়ে ফাতেমা বেগম, নাতি জিহাদ (১৪), ইয়াকুব আলী এবং তাদের প্রতিবেশী বকুল ওরফে কান্দু। তাদের মধ্যে আল্লামের পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়। ফাতেমার গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করা হয়। এছাড়া তাকে শ্লীলতাহানিও করা হয়।
আরো পড়ুন:
বগুড়ায় আসামির ছুরিকাঘাতে ২ পুলিশ আহত
আড়াইহাজারে জামায়াতের পথসভায় বিএনপির হামলা, আহত ৫
আহতরা জানান, দিয়াড় মহব্বতপুর গ্রামের জামিলুর রহমানের কাছ থেকে আল্লাম হোসেনের স্ত্রী ও ছেলে গোলাম মোস্তফা ২০১৬ সালের ১৮ মে শন্য দশমিক ৪৯৫০ একর ও তার আরেক ছেলে মুরশালীন ইসলাম ২০১৮ সালের ৯ মে শূন্য দশমিক ১১০০ একর জমি কেনেন। এর দলিলও করা হয়। জামিলুর রহমান আরএস রেকর্ডমূলে জমি বিক্রি করেন। পরে বিডিএস রেকর্ডে দলিলের কথা গোপন করে এসব জমি আবার নিজেদের নামে রেকর্ড করা হয়। এরপর থেকে তারা জমিগুলো আবার দখলের চেষ্টা করছিলেন।
তারা আরো জানান, জমি কেনার পর প্রায় পাঁচ বছর আগে সেখানে পেয়ারা বাগান করা হয়। গত ১১ জুন সকালে জামিলুর রহমান ও তার ভাই আদিল হোসেনের নেতৃত্বে তাদের ছেলেরা গিয়ে পেয়ারা বাগানের ৪১টি গাছ কেটে ফেলে। এ ঘটনায় আল্লাম হোসেন গ্রামের লোকজনের কাছে নালিশ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পরদিন জামিলুর রহমান, তার ভাই আদিল হোসেন এবং তাদের ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী ধারালো হাঁসুয়া, চাইনিজ কুড়াল, বল্লম ও বাঁশের লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আল্লাম হোসেনের বাড়িতে হামলা চালান। বাড়িটিতে ভাঙচুর করা হয়। অগ্নিসংযোগ করা হয় ধানের পালায়। দুই দিনের হামলায় প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।
আহত আল্লাম হোসেন জানান, হামলাকারীরা তার পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। ধানের পালার আগুন নেভাতে গেলে হামলাকারীরা তার নাতি জিহাদকে ধাক্কা দিয়ে আগুনের ভেতর ফেলে দেয়। এতে তার পা পুড়ে যায়। তার আরেক নাতি ইয়াকুবকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। তাদের বাঁচাতে গেলে মেয়ে ফাতেমার গলায় হাঁসুয়া দিয়ে আঘাত করা হয়। তাকে শ্লীলতাহানিও করা হয়। ছেলে গোলাম মোস্তফা বাবুকে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তাকে বাঁচাতে গেলে প্রতিবেশী বকুলকেও পিটিয়ে আহত করা হয়।
ভুক্তভোগী আল্লাম আরো জানান, হামলাকারীরা তাদের আহত অবস্থায় ফেলে গেলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। হামলাকারীরা এখনো তাদের বাড়ি ঘিরে রেখেছেন। জমির দাবি করলে তাদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। তারা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। হাসপাতাল থেকে তাদের ছুটি দেয়া হলে এ ঘটনায় তারা মামলা করবেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত জামিলুর রহমানকে কয়েকদফা ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন জানান, ঘটনা তিনি শুনেছেন। আহতরা থানায় অভিযোগ করতে চেয়েছেন। অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকা/কেয়া/বকুল