খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দিন আহমেদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে তৌহিদি জনতা নিয়ে করা বক্তব্য প্রত্যাহারের আলটিমেটাম দিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে সংগঠনটির রাজশাহী জেলার আয়োজনে গণসমাবেশে তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি দলের আমির মামুনুল হক উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলেন, মাত্রাতিরিক্ত সুশীলগিরি করবেন না।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জালালুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তৌহিদ মানে যারা এক আল্লাহকে বিশ্বাস করেন। যারা এক আল্লাহকে বিশ্বাস করেন, তাকে বলা হয় তৌহিদি জনতা। কিন্তু আজকে দুর্ভাগ্য বর্তমান সরকারের এক উপদেষ্টা যার নাম মাহফুজ আলম। গতকালকে তৌহিদি জনতাকে উগ্রবাদ বলে সম্বোধন করেছে। অর্থাৎ উনি গোটা মুসলমানকে উগ্রবাদ বলে সম্বোধন করেছেন। উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, আপনি আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিন। আপনাকে মুখ সামলে কথা বলতে হবে। যদি বাংলাদেশের মুসলমান গর্জে ওঠে, আপনি পালাবার পথ পাবেন না। এ জন্যে আপনি মুখ সামলে কথা বলবেন। আপনি মুসলমানদের উগ্রবাদ বলবেন, এটা ৫ আগস্টের পর এ দেশের জনগণ মেনে নেবে না। তাই পরিষ্কার বলি, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনার এই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় দেশের জনগণ আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’

গত সোমবার এক ফেসবুক পোস্টে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পক্ষে হলে মব করা বন্ধ করেন, আর যদি মব করেন, তাইলে আপনাদেরও ডেভিল (শয়তান) হিসেবে ট্রিট (গণ্য) করা হবে।’

এর আগে গত সোমবার এক ফেসবুক পোস্টে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পক্ষে হলে মব করা বন্ধ করেন, আর যদি মব করেন, তাইলে আপনাদেরও ডেভিল (শয়তান) হিসেবে ট্রিট (গণ্য) করা হবে।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘তৌহিদি জনতা! আপনারা দেড় দশক পরে শান্তিতে ধর্ম ও সংস্কৃতি পালনের সুযোগ পেয়েছেন। আপনাদের আহাম্মকি কিংবা উগ্রতা আপনাদের সে শান্তি বিনষ্টের কারণ হতে যাচ্ছে। জুলুম করা থেকে বিরত থাকেন, নইলে আপনাদের ওপর জুলুম অবধারিত হবে। লা তাজলিমুনা ওলা তুজলামুনা—জুলুম করবেন না, জুলুমের শিকারও হবেন না। এটাই আপনাদের কাছে শেষ অনুরোধ!’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের সতর্ক করে মামুনুল হক বলেন, ‘সুশীলগিরি ভালো। ইন্টেরিম গভার্মেন্টের বিতর্কিত উপদেষ্টাদের স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই। মাত্রাতিরিক্ত সুশীলগিরি করবেন না। মব জাস্টিসের কথা আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করবেন না। আমরা ২০১৩ সাল থেকে রাজপথে রক্ত দিয়ে আজকে এখানে দাঁড়িয়েছি। আপনাদের কোনো করুণার ভিখারি আমরা নই। যদি আমাদের করুণার পাত্র মনে করে থাকেন, ওপেন চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করলাম। আসুন, আমাদের মোকাবিলা করে দেখুন। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলি, এ দেশে আমরা ইসলামকে নিয়ে, ইসলামের গৌরব, জান্দা নিয়ে বাঁচব। ঐতিহাসিকভাবে বিগত আড়াই শ বছরের ইতিহাস প্রমাণ করে, বাংলাদেশ, বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও ইসলাম একসূত্রে গাঁথা। যদি বাংলাদেশের ইসলাম আক্রান্ত হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হবে। সুতরাং বাংলাদেশে যারা ইসলামবিরোধী, তারাই স্বাধীনতা বিপক্ষ শক্তি। যারা ইসলামকে সহ্য করতে পারে না, তারা স্বাধীনতার দুশমন। আমরা ছেড়ে দিয়ে কথা বলব না।’

আরও পড়ুন‘মবে’র মহড়া এখন থেকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করব: উপদেষ্টা মাহফুজ আলম১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আপন দ র উপদ ষ ট করব ন ন আপন র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ

বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।

এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্‌ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।

কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ