সৌদি আরব যেভাবে ফিলিস্তিন প্রশ্নে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে
Published: 14th, February 2025 GMT
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সৌদি আরবের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন বলে দাবি করেছিলেন। বহু বছর ধরে গড়া সম্পর্ক মাত্র কয়েক দিনে ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। সৌদি রাজতন্ত্র ও ইসরায়েলের সম্পর্ক কেবল রাষ্ট্রীয় স্বার্থের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠেনি, বরং ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাষও এতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) একসময় রাজপরিবারের শক্তিশালী সদস্যদের তীব্র বিরোধিতার মুখে ছিলেন। তখন তিনি বুঝতে পারেন যে ক্ষমতার পথ সুগম করতে হলে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পেতে হবে। ২০১৭ সালে তিনি গোপনে ইসরায়েল সফর করে প্রভাবশালী ইহুদি গোষ্ঠীর মন জয়ের চেষ্টা চালান। ফিলিস্তিন ইস্যুতে প্রকাশ্য অবজ্ঞা দেখিয়ে তিনি পশ্চিমা বিশ্বকে আকর্ষণ করেন।
এর এক বছর পর, তিনি ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করে বলেন, ফিলিস্তিনিদের উচিত ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করা, নতুবা ‘চুপ করে থাকা’। হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে হামলা চালানোর আগপর্যন্ত এমবিএস ক্রমেই আব্রাহাম চুক্তিতে স্বাক্ষর করার কাছাকাছি চলে এসেছিলেন। আব্রাহাম চুক্তি হচ্ছে ইসরায়েল এবং বেশ কয়েকটি আরব রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য চুক্তি। এমনকি হামলার পরও সৌদি আরব তাদের স্বাভাবিক নীতিতেই অটল ছিল। টানা ১৫ মাস ধরে সৌদি আরবে কোনো ফিলিস্তিনপন্থী প্রতিবাদ করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি মক্কায় হাজিদেরও ফিলিস্তিনি পতাকা ওড়ানো বা গাজার জন্য প্রার্থনা করা নিষিদ্ধ ছিল।
সৌদি যুবরাজ এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে অপমানও সহ্য করেছেন। প্রেসিডেন্ট হয়ে ট্রাম্প প্রথমে কোন দেশে সফর করবেন, এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, প্রথমে সৌদি আরব ভ্রমণ করলে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করতে হবে। এমবিএস তা মেনে ট্রাম্পকে ফোনকল করে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ট্রাম্প দাবি আরও বাড়িয়ে চুক্তির পরিমাণ এক ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি নিয়ে যান।
ট্রাম্প ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দিয়ে গাজাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। আর জানান যে গাজা পুনর্গঠনের খরচ বহন করবে উপসাগরীয় দেশগুলো, অর্থাৎ মূলত সৌদি আরব। এই দাবি সৌদি আরবের জন্য বিশেষভাবে অপমানজনক ছিল। এ ছাড়া ট্রাম্প দম্ভের সঙ্গে বলেন যে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের দাবি ছাড়াই সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে। কিন্তু এই বক্তব্যের ৪৫ মিনিটের মধ্যেই সৌদি আরব এর জবাব দেয়। এতে স্পষ্ট জানানো হয়, সৌদি আরব নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে, যাতে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায়। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ছাড়া সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবে না।
এর জবাবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু চ্যানেল ফোরটিঙ্কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যেন বিদ্রূপ করেই বলেন, সৌদিরা চাইলে সৌদি আরবেই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারে, ওদের কাছে অনেক জমি আছে! সপ্তাহের দ্বিতীয় বিবৃতিতে, রিয়াদ আরও কঠোর ভাষায় জানায়, ফিলিস্তিনিরা তাদের নিজ ভূমির মালিক। তারা কোনো অনুপ্রবেশকারী বা অভিবাসী নয় যে ইসরায়েলি দখলদারেরা ইচ্ছেমতো তাদের উচ্ছেদ করবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সুদান ও মরক্কোকে তারা চাপের মুখে ফেলে আব্রাহাম চুক্তিতে স্বাক্ষর করিয়েছিল। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু একদম স্পষ্ট করেই বলেছেন, এই চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল ফিলিস্তিনিদের রাজনৈতিকভাবে একঘরে করে দেওয়া। এত দিন তিনি সৌদি যুবরাজ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টকে আশ্বস্ত করছিলেন যে ইসরায়েল তাদের মিত্র হিসেবে বিবেচনা করবে। কিন্তু এখন তিনি বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল নিজের শর্তেই ‘শান্তি’ চাপিয়ে দেবে আর আরব বিশ্ব ইসরায়েলের সামনে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবে।
এমন পরিস্থিতিতে সৌদি পররাষ্ট্রনীতির মোড় ঘুরে গেছে। সে এখন পাঁচ দশক আগের রাজা ফয়সালের আরব জাতীয়তাবাদী অবস্থানে ফিরে যাচ্ছে। ১৫ মাসের নীরবতার পর এখন ফিলিস্তিন ইস্যুতে আরব দেশগুলোর একটি সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। গত রোববার গভীর রাতে মিসর ঘোষণা করেছে যে ২৭ ফেব্রুয়ারি তারা এক জরুরি আরব সম্মেলনের আয়োজন করবে। সম্মেলনের উদ্দেশ্য হবে ট্রাম্পের ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে উচ্ছেদ করে পুনর্বাসনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা।
এই নাটকীয় পরিবর্তনের কারণ কী? কারণ হলো, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক নীতিতে গণহারে ফিলিস্তিনি জনগণকে স্থানান্তরের বিষয়টি যুক্ত হওয়া। গাজার প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনিকে জোর করে বিতাড়িত করলে তা প্রতিটি আরব দেশকে প্রভাবিত করবে। বিশেষত সৌদি আরবের ওপর এর গভীর প্রভাব পড়বে। ইসরায়েলের আগ্রাসীভাবে এই ভূখণ্ড দখল সমগ্র অঞ্চলকে অস্থির করে তুলতে পারে। আর তা হয়তো এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র। এর ভয়াবহ পরিণতি সৌদি আরবের জন্যও বিপজ্জনক হবে।
আরও পড়ুনসৌদি আরবের সামনে নেতৃত্ব দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫২০১৭ সালে উপসাগরীয় দেশগুলো যে কারণে ফিলিস্তিন সংকটে নীরবতা বজায় রাখতে বাধ্য হয়েছিল, সে পরিস্থিতি এখন আর নেই। অন্যদিকে, সিরিয়ায় অবস্থান হারানোর পর এবং হিজবুল্লাহর সাম্প্রতিক ক্ষয়ক্ষতির কারণে ইরানের প্রতিরোধ জোট দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার বিরুদ্ধে চাপ বাড়ানোর ঝুঁকি নিতে রাজি নয় সৌদি আরব। নতুন ইরানি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক এখন উষ্ণ। সৌদি যুবরাজ এমবিএস চান এই সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে।
এমবিএস নিজেও এখন দেশের ভেতর শক্ত ও দৃঢ় পরিস্থিতিতে আছেন। তাঁর ক্ষমতা এখন দৃঢ়। তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি আধুনিক ও সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে জনপ্রিয়। এমবিএসের ক্ষমতার শুরুর দিকে সৌদি আরব মুসলিম বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। এখন আর তেমনটা নেই। সব মিলিয়ে ট্রাম্প ও ইসরায়েল থেকে দূরত্ব বজায় রাখার ঝুঁকি সৌদি আরব নিতে পারে। তাহলে তারা নিজেদের নৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে আবারও আরব ও মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রে নিয়ে আসার সুযোগ পাবে।
ডেভিড হার্স্ট মিডল ইস্ট আই-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক
মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া ইংরেজির সংক্ষেপিত অনুবাদ জাভেদ হুসেন
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল য বর জ র জন য আরব র ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
পুতিন এমন কিছু চান, যা তিনি কখনোই পাবেন না
ভ্লাদিমির পুতিন নিজেই বলেছেন, তিনি কোনো সাধারণ নেতা নন, সিংহাসনে আসীন একজন আইনজ্ঞ শাসক। শুরু থেকেই তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের পরিচিতির অংশ হিসেবে একসময় যে তিনি আইনশাস্ত্র পড়েছেন, সেটা ভুলে যাননি। গত মে মাসে একদল ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি তাঁদের বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত তো আমি আইনশাস্ত্রে ডিগ্রিধারী।’ সেই বৈঠকে ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, একটি শান্তিচুক্তি হলে পশ্চিমা প্রতিযোগীরা রাশিয়ায় ফিরে আসতে পারে। এর উত্তরে পুতিন আরও বলেন, ‘আপনারা যদি আমাকে চুক্তিপত্রটি দেন, তাহলে আমি উল্টেপাল্টে দেখে বলে দেব কী করতে হবে।’
আমরা সাধারণত স্বৈরাচার মানেই এমন একজনকে ভেবে নিই, যিনি আইনকানুনের তোয়াক্কা করেন না। এটা একদম সত্যি। কিন্তু পুতিনের মতো একজন একনায়কের কাছে আইনের লঙ্ঘনের চেয়ে বরং আইনের দোহাই দেওয়াটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সুশৃঙ্খল কাঠামো থেকে নির্দেশ মেনে চলতে চলতে প্রেসিডেন্টের আসন পর্যন্ত পৌঁছেছেন।
আজকের রাশিয়ায় রাজনৈতিক দমন-পীড়নের প্রতিটি নতুন ঢেউয়ের আগে নতুন কোনো আইন পাস হয় অথবা পুরোনো আইনে সংশোধন আনা হয়, যাতে আইন লঙ্ঘন না করেই আরও বেশি মানুষকে ‘আইনের আওতায়’ শাস্তি দেওয়া যায়।
একজন ব্যক্তির ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য আইনি ব্যবস্থাকে সীমাহীনভাবে ব্যবহার করে যাওয়ার ব্যাপারটা ঘটনাক্রমে একটি উচ্চতর বৈধতার দাবি করে। প্রকৃতপক্ষে পুতিনের সমগ্র রাজনৈতিক জীবনই কেটেছে এমন একটি বৈধতার উৎস খুঁজতে খুঁজতে, যেটা আইনের চেয়েও গভীর। নিজের কর্তৃত্ব প্রমাণের এটা একটা ব্যক্তিগত বাতিক। এটা বিজয়ের বাসনার মতোই একটি ব্যাপার। এটাই ইউক্রেন যুদ্ধে তাকে চালিত করেছে। এ যুদ্ধের লক্ষ্য হলো সামরিক বিজয়ের মাধ্যমে রাশিয়াকে আবার বিশ্বশক্তির অভিজাত ক্লাবে ফেরত নিয়ে যাওয়া। কিন্তু এ প্রত্যাবর্তন পশ্চিমা বিশ্বের স্বীকৃতি ছাড়া অসম্ভব। আর দিন দিন এ ধারণা পরিষ্কার হচ্ছে যে পুতিন সেই স্বীকৃতি হয়তো আর কখনোই পাবেন না।
পুতিনের রাজত্ব শুরুর বছরগুলোতে একটি কৌশল কাজ করেছিল। তিনি পশ্চিমা নেতাদের সঙ্গে সম্মেলনে অংশ নিতেন। দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিলেন। কিন্তু ২০১২ সালে তিনি যখন আবার প্রেসিডেন্ট পদে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন, তখন দেশজুড়ে বড় ধরনের প্রতিবাদ শুরু হয়। তখন থেকেই তিনি বিধ্বংসী পশ্চিমা প্রভাবের বিরুদ্ধে তথাকথিত রুশ ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ রক্ষার লড়াই শুরু করেন।
এ দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের অর্থ ছিল সরাসরি পশ্চিমের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়া, যার পরীক্ষাক্ষেত্র হয়ে ওঠে ইউক্রেন। ক্রিমিয়া দখলকে পুতিন একটি ঐতিহাসিক অবিচারের ‘সংশোধন’ বলে তুলে ধরেছিলেন। এর পরপরই পূর্ব ইউক্রেনে হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসন শুরু করেন। এটিকে তিনি চমকপ্রদ বিদ্যুৎ গতির আক্রমণ মনে করেছিলেন। এটা তার পশ্চিমাদের প্রতি বৈরিতাপূর্ণ নীতির চূড়ান্ত রূপ।
পুতিন এখন সেই একই দ্বিধার পড়েছেন। যতটা সম্ভব ভূখণ্ড দখল করে নেওয়া এবং দখল করা অঞ্চলের ওপর বৈধতা প্রতিষ্ঠা—এই দুয়ের মধ্যে কোন পথটি তিনি বেছে নেবেন। স্তালিনও একসময় দ্বিধায় থেকে শেষ পর্যন্ত যে পথ বেছে নিয়েছিলেন, পুতিনও সম্ভবত সেই পথেই হাঁটবেন।এসব প্রচেষ্টা রাশিয়ার ভেতরে পুতিনের সমর্থন জয় করে নেওয়ার জন্য চোখে পড়ার মতো সফল ছিল। তবে একই সঙ্গে এগুলো রাশিয়া ও পশ্চিমের সম্পর্ক ভাঙার নয়; বরং তা নতুনভাবে গড়ে তোলার চেষ্টাও ছিল। এমনকি ক্রিমিয়া দখল ও পূর্ব ইউক্রেনে সংঘাতের পরও ক্রেমলিন আলোচনার পথ অনুসরণ করে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো মিনস্ক চুক্তি। এর লক্ষ্য ছিল কূটনৈতিক একঘরে অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসে প্রধান শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনার টেবিলে নিজের আসন পুনরুদ্ধার করা। সেই প্রচেষ্টাগুলো ব্যর্থ হয় এবং পুতিন আরও ঝুঁকি বাড়ানোর পথ বেছে নেন। এখন ক্রেমলিন কিছু মাত্রায় নমনীয়তা দেখাতে প্রস্তুত।
সব অনমনীয় কথাবার্তার পরও ক্রেমলিন এরই মধ্যে কিছু চরম অবস্থান থেকে সরে এসেছে। মার্চ মাসে পুতিন ইউক্রেনকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে প্রদান কিংবা যেকোনো আলোচনা শুরুর পূর্বশর্ত হিসেবে ইউক্রেনের নির্বাচন দেওয়ার মতো ধারণাগুলো নিয়ে এসেছিলেন। মস্কো এখন আর জোর দিয়ে বলছে না যে ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা অর্থহীন এবং যেকোনো প্রকৃত চুক্তির আগে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে হবে। রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা নিষিদ্ধকারী আইন বাতিলের জন্য ইউক্রেনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে দাবি তোলা হয়েছিল, সেখান থেকেও রাশিয়া নীরবে সরে এসেছে।
নিশ্চয়ই এ নতুন নমনীয়তারও একটা সীমা আছে। মস্কো এর মূল দাবিগুলো এখনো পরিত্যাগ করেনি। কারণ, গত তিন বছরে রাশিয়া এক যুদ্ধরত দেশে পরিণত হয়েছে। শত্রু হয়ে উঠেছে একপ্রকার পৌরাণিক শয়তান, সেনারা এখন নায়ক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত বেশি মানুষ আর কোনো যুদ্ধে নিহত বা আহত হননি। যুদ্ধ-অর্থনীতি সচল হয়ে উঠেছে; ভিন্নমত গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি পুতিন নিজেও এখন প্রায়ই ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ না বলে সরাসরি ‘যুদ্ধ’ শব্দটি ব্যবহার করছেন। যুদ্ধ যত দীর্ঘ ও বিস্তৃত হয়, এর ফলাফল ততই বিশ্বাসযোগ্য ও জোরালো হতে হয়।
এখানেই আসে দর-কষাকষির বিষয়টি। ক্রেমলিন স্পষ্টতই দর–কষাকষির বিষয়টাকে এমন একটা হিসেবে দেখছে, যেন সেখানে তারা একটি বিজয় দাবি করতে পারে, যেটা তারা যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জন করতে পারেনি। রাশিয়া কেন ইউক্রেনকে এমন সব এলাকা থেকেও সরে যাওয়ার দাবি তুলেছে, যেগুলোর ওপর দেশটির নিয়ন্ত্রণই নেই—এর ব্যাখ্যা এখান থেকে পাওয়া যায়। পুতিনের কাছে বিজয় মানে শুধু ভূখণ্ড দখল নয়। তাঁর কাছে বিজয় মানে, শর্ত চাপিয়ে দেওয়া, নতুন করে সীমান্ত আঁকা এবং সেই নতুন বাস্তবতার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়। এভাবেই পুতিন তাঁর কাঙ্ক্ষিত বৈধতা নিশ্চিত করতে পারেন।
পুতিনের এ অবস্থান বুঝতে পারাটা মোটেই কঠিন নয়। এমনকি ট্রাম্প প্রশাসনে থাকা পুতিনের প্রতি সবচেয়ে সহানুভূতিশীল ব্যক্তিরাও মনে করেন যে পুতিন অনেক বেশি দাবি করছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হতাশা স্পষ্টতই বাড়ছে। শান্তির জন্য তাঁর ৫০ দিনের সময়সীমা এখন কমে এসে ‘১০ বা ১২ দিনে’ দাঁড়িয়েছে, যা তাঁর ধৈর্য ফুরিয়ে আসারই প্রমাণ। অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধক্লান্তির লক্ষণ ও বেদনাদায়ক আপসের বিষয়টি বিবেচনা করা সত্ত্বেও এটা বিশ্বাস করার এমন কোনো কারণ নেই যে মস্কোর চূড়ান্ত শর্ত মেনে নেবে। এমনকি এর কিছু অংশে যদি ওয়াশিংটন সমর্থন দেয়, তারপরও সেটা নয়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হতাশা স্পষ্টতই বাড়ছে।