ঋণের টাকায় আরও দুই প্রকল্প, ধুঁকছে প্রথমটিই
Published: 16th, February 2025 GMT
ওয়াসা গত এক যুগে ঋণের টাকায় একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। কোনোটিই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। ব্যয় বেড়েছে কয়েক দফা। এখন পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে ঋণের টাকায় আরও দুটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সংস্থাটি। এর আগে ২০১৮ সালে নেওয়া পয়োনিষ্কাশনের প্রথম প্রকল্পটিও নির্ধারিত সময়ের এক বছর পরও শেষ হয়নি। ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে ওই প্রকল্পেরও।
চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) একটি প্রকল্প অনুমোদন পায়। এটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া গত বছরের ২৫ নভেম্বর একনেকের আরেক সভায় অনুমোদন পায় দ্বিতীয় প্রকল্পটি। এটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। এ দুই প্রকল্পে সরকারি-বেসরকারি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার ১০০ টাকা।
চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়োবর্জ্য নিষ্কাশনে মহাপরিকল্পনা তৈরি করেছে। সে অনুযায়ী পুরো শহরকে ছয়টি অঞ্চল বা ক্যাচমেন্টে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো হালিশহর, কালুরঘাট, ফতেয়াবাদ, পূর্ব বাকলিয়া, উত্তর কাট্টলী ও পতেঙ্গা। ইতিমধ্যে হালিশহর ক্যাচমেন্টের জন্য একটি প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। নতুন করে অনুমোদন পাওয়া দুই প্রকল্পে কালুরঘাট, বাকলিয়া ও উত্তর কাট্টলী ক্যাচমেন্টের কাজ হবে। অর্থাৎ মোট চারটি ক্যাচমেন্টের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওয়াসা আগে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্প শেষ করতে পারেনি। ফলে নতুন দুই প্রকল্প ঘিরেও একই শঙ্কা রয়েছে। সরকারকে ওয়াসার কার্যক্রম নিয়মিত তদারক করতে হবে।
নথি অনুযায়ী, গত এক যুগে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা গড়ে তুলতে ১০টি বড় প্রকল্প নিয়েছে ওয়াসা। আট প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। দুটি প্রকল্পের কাজ এখনো চলছে। শেষ হওয়া আট প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। আর চলমান দুই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৫ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, এবারের প্রকল্প দুটি নির্ধারিত মেয়াদেই শেষ হবে। আগে করোনা, জলাবদ্ধতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে ঠিক সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে এবার নির্ধারিত মেয়াদেই কাজ শেষ করার বিষয়ে তাঁরা আশাবাদী।
প্রথমটা ধুঁকছে
পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার প্রথম প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৮ সালে। ওই বছরের ৭ নভেম্বর একনেক সভায় ‘চট্টগ্রাম মহানগরের পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা স্থাপন’ শীর্ষক প্রথম প্রকল্প অনুমোদন পায়। এই প্রকল্পে শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালে। সেটি হয়নি। বর্তমানে প্রকল্পের ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, করোনা মহামারির কারণে প্রকল্পের কাজ ঠিক সময়ে শুরু করা যায়নি। করোনার সময় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জেভি অব এরিনকোর কর্মকর্তারা মালয়েশিয়ায় চলে যান। এ ছাড়া নকশার মধ্যে নতুন স্থাপনা যুক্ত করতে হয়েছে। সব মিলিয়ে কাজটি নির্ধারিত মেয়াদে শেষ হয়নি। তবে বর্তমানে ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। বর্ধিত মেয়াদ শেষ হবে আগামী জুনে। মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম জানান, বাজেটের ঘাটতির কারণে কাজে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছে। চলতি অর্থবছরে যে পরিমাণ টাকার প্রয়োজন ছিল, তা পাওয়া যায়নি।
ওয়াসা সূত্র জানায়, একনেকে অনুমোদনের প্রায় এক বছর পর ২০১৯ সালের ৪ নভেম্বরে প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ঠিকাদার নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০২০ সালের অক্টোবরে। এ ছাড়া ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ার তাইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই মাসেই, অর্থাৎ অনুমোদনের প্রায় তিন বছর পর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ফলে ডিপিপিতে কাজ শুরু ও শেষ করার যে সূচি ধরা হয়েছিল, তা অনুসরণ করতে পারেনি ওয়াসা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প র ক জ দ ই প রকল প ব যবস থ শ ষ কর শ ষ হয় প রথম একন ক
এছাড়াও পড়ুন:
মানুষ চিন্তা করতে পারেনি, তারা মনের কথা নির্বিঘ্নে প্রকাশ করতে পারবে: জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘আমাদের সন্তানেরা জীবন বাজি রেখে রাস্তায় নেমেছিল, আমরাও তাদের সঙ্গে ছিলাম। তারা ফ্যাসিবাদকে বিদায় করেছে। এক বছর আগেও মানুষ চিন্তা করতে পারেনি যে তারা মনের কথা নির্বিঘ্নে প্রকাশ করতে পারবে। কিন্তু আজ সারা দেশের জনগণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই সর্বময় ক্ষমতার মালিক। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন এবং ইচ্ছেমতো কেড়েও নেন। তা আমরা জুলাই বিপ্লবে সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছি।’
আজ সোমবার সন্ধ্যায় খুলনার খানজাহান আলী থানা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ‘সহযোগী সদস্য সংগ্রহ অভিযান-২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কথাগুলো বলেন।
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচন নিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘২০১৪ সালে তারা ষড়যন্ত্র করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন করেছিল। কেউ নির্বাচনে যায়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিল ইতিহাসের আরেক কালো অধ্যায়। যেখানে রাতেই ভোট হয়ে গিয়েছিল। আর এসব নির্বাচনে হাসিনাকে সঙ্গ দিয়েছে জাতীয় পার্টি। আমরা একটা কালো যুগ পার করেছি। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার মানুষের সব অধিকার হরণ করেছিল। মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি। মানুষকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে দেয়নি। তারা মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেয়নি।’ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘যারা হাত-পা হারিয়েছে, যারা নির্যাতিত হয়েছে, তারা কখনোই এসব খুনিকে ক্ষমা করবে না। খুনিদের বিচার করতে হবে এবং সব স্তরে সংস্কার করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে, যেখানে কালোটাকা ও পেশিশক্তির প্রভাব থাকবে না। নির্বাচন জনগণের অধিকার। জনগণই তাঁদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। যাঁরা নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির ব্যবহার করতে চাইবেন, জনগণ তাঁদের প্রতিহত করবেন।’
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতার দম্ভে মানুষের ওপর লাগামহীন জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবিলা না করে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, জেল-জুলম, গুপ্তহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। তারা মনে করেছিল যে তাদের এমন অপশাসন ও দুঃশাসন কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী হবে। কিন্তু আল্লাহ জালিমদের ছাড় দিলেও ছেড়ে দেন না।’
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের প্রসঙ্গে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে ন্যায়বিচার থাকবে, বেকারত্ব ও চাঁদাবাজি থাকবে না। যেখানে মা-বোনেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে না। আমরা সাম্যের ও মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই।’
খানজাহান আলী থানা জামায়াতের আমির সৈয়দ হাসান মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও বায়তুল মাল সেক্রেটারি হাফেজ আমিনুল ইসলাম। গণসংযোগের সময় স্থানীয় মার্কেটের ব্যবসায়ী, পথচারী, স্থানীয় বাসিন্দা, গাড়িচালকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দাওয়াত দেওয়া হয়।