বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কেউ ক্ষমতার অপব্যবহারের চেষ্টা করলে দেশে আরেকটা গণবিপ্লব হবে। তার দাবি, আগামী নির্বাচন হতে হবে ৫৩ বছরের ইতিহাসে সম্পূর্ণরূপে নিরপেক্ষ। 

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রির্সোট অডিটোরিয়ামে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের লক্ষে জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সোনারগাঁও উপজেলা আয়োজিত ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক  ক্যাম্পেইনে তিনি এসব কথা বলেন।

ফেব্রুয়ারি মাসেই দেশে ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা হবে জানিয়ে সারজিস বলেন, যদি সুষ্ঠু নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দল ৩০০ আসনও পায় এতে আমরা কিছু মনে করবো না। যারা গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে তারাই নতুন বাংলাদেশের নেতৃত্বের সামনের সারিতে থাকবে।  

তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টদের বিরোধী ছাত্রদের যে নতুন রাজনৈতিক দল হবে, সেই দলে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, খুনি হাসিনা লেজ গুটিয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছে। সে শুধু নিজের মুখেই না, দলের নেতাকর্মীদের মুখেও চুনকালি মাখিয়েছে। সেটা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন। আমাদের রাজনৈতিক দল এই ফেব্রুয়ারি মাসেই আসছে। আমাদের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।

বিগত ১৬ বছর যে চর্চাগুলো ছিল আমরা এখন আবার সে চর্চাগুলো নতুন করে দেখতে পারছি। স্পষ্ট কথা যারা এসব চর্চাগুলো করে এসেছে তাদের রক্তে ওই চর্চা একদম মিশে গেছে। সেই চর্চা থেকে বের হয়ে আসতে তাদের নেতৃত্ব দিতে হবে যারা এ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিল।

সোনারগাঁয়ের শিল্প নগরীর বিভিন্ন জায়গায় দখলদারিত্ব যা ছিল তাই আছে। বিভিন্ন প্লট থেকে শুরু করে যতো টাকার ভাগ বাটোয়ারা হতো এখন তার চেয়ে কম হয়না বরং আরও বেশি হয়। মনে রাখতে হবে অভ্যুত্থানের লড়াইয়ে ৫-৬ জুনে আমরা ৫০০ জনও রাজপথ ছিলাম না।

কিন্তু ৫ আগস্টে আমরা ৫ কোটি মানুষ পুরো বাংলাদেশের রাজপথে নেমেছিলাম। এ জন্য সময় দিতে হবে, সাহসিকতার সঙ্গে রাজপথ থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের লড়াইয়ে খুনি হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। খুনি হাসিনা নিজে বাঁচার জন্যে এবং পরিবারকে বাঁচানোর জন্যে পালালেও তার নেতাকর্মীদের নিয়ে যাননি। এককথায় খুনি হাসিনা তার দলীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগকে টিসুর মতো ব্যবহার করেছেন। এখন অনেকে রাজনীতি করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে। এখন চেনার সময় হয়েছে।

বিগত ১৫-১৬ বছরে কোন নেতাকে কাছে পেয়েছেন এবং কোন নেতা আত্মগোপন কিংবা দেশের বাহিরে থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সুবিধা আদায় করেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বহু নেতা আছে যাদের বিগত ১৬ বছর জনগণ খুঁজেও পায়নি। তারা এখন নতুন করে নতুন রূপে এ বাংলাদেশে এসেছেন। তারাই এখন আপনাদের মাঝে হাত গোলাচ্ছেন।

কঠিন সময়ে যাদের পাশে পাওয়া যায়নি তাদের নেতা হিসেবে মেনে নেওয়ার দয়া দেখাবেন না। যদি তা দেখান তাহলে শেখ হাসিনা যেভাবে কঠিন সময়ে তার নেতাদের ফেলে পালিয়েছে আপনাদের অবস্থাও একই হবে। আপনাদের ফেলে অনেক নেতা আবার জান নিয়ে পালাবেন।'

এসময় জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য তুহিন মাহামুদ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নারায়ণগঞ্জের যুগ্ম আহবায়ক শাকিল সাইফুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক জাহিদুল হক বাঁধন,সদস্য অনিক খাঁন সিয়াম সহ জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন স্থানীয় নেতাকর্মী, শহীদ পরিবার ও আহতরা উপস্থিত ছিলেন। 
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ র জন ত ক দ ন র জন ত ক আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ

ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না। 
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস চালু হচ্ছে ১০ মাস পর
  • অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে, দুই বন্ধু নিহত
  • আজমির ওসমান বাহিনীর অন্যতম ক্যাডার মাসুম প্রকাশ্যে. আতঙ্ক
  • মে দিবসের সমাবেশকে সফল করতে মহানগর বিএনপির মতবিনিময় সভা 
  • নারায়ণগঞ্জে বালক (অনূর্ধ্ব-১৫) ফুটবল প্রতিযোগিতা ও প্রশিক্ষণের উদ্বোধন
  • নারায়ণগঞ্জে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে তরুণের মৃত্যু
  • নারায়ণগঞ্জের কদম রসুল সেতুর সংযোগ সড়কের প্রবেশমুখ পুনর্নির্ধারণের দাবিতে স্মারকলিপি
  • জেলা প্রশাসককে ২৪’র শহীদদের স্মারক দিল জামায়াত
  • কমিউনিষ্ট পার্টির হাফিজের বিরুদ্ধে ইসমাইলের সংবাদ সম্মেলন
  • কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ