ক্ষমতার অপব্যবহারের চেষ্টা করলে আরেকটা গণবিপ্লব : সারজিস
Published: 16th, February 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কেউ ক্ষমতার অপব্যবহারের চেষ্টা করলে দেশে আরেকটা গণবিপ্লব হবে। তার দাবি, আগামী নির্বাচন হতে হবে ৫৩ বছরের ইতিহাসে সম্পূর্ণরূপে নিরপেক্ষ।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রির্সোট অডিটোরিয়ামে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের লক্ষে জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সোনারগাঁও উপজেলা আয়োজিত ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ক্যাম্পেইনে তিনি এসব কথা বলেন।
ফেব্রুয়ারি মাসেই দেশে ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা হবে জানিয়ে সারজিস বলেন, যদি সুষ্ঠু নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দল ৩০০ আসনও পায় এতে আমরা কিছু মনে করবো না। যারা গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে তারাই নতুন বাংলাদেশের নেতৃত্বের সামনের সারিতে থাকবে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টদের বিরোধী ছাত্রদের যে নতুন রাজনৈতিক দল হবে, সেই দলে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, খুনি হাসিনা লেজ গুটিয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছে। সে শুধু নিজের মুখেই না, দলের নেতাকর্মীদের মুখেও চুনকালি মাখিয়েছে। সেটা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন। আমাদের রাজনৈতিক দল এই ফেব্রুয়ারি মাসেই আসছে। আমাদের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।
বিগত ১৬ বছর যে চর্চাগুলো ছিল আমরা এখন আবার সে চর্চাগুলো নতুন করে দেখতে পারছি। স্পষ্ট কথা যারা এসব চর্চাগুলো করে এসেছে তাদের রক্তে ওই চর্চা একদম মিশে গেছে। সেই চর্চা থেকে বের হয়ে আসতে তাদের নেতৃত্ব দিতে হবে যারা এ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিল।
সোনারগাঁয়ের শিল্প নগরীর বিভিন্ন জায়গায় দখলদারিত্ব যা ছিল তাই আছে। বিভিন্ন প্লট থেকে শুরু করে যতো টাকার ভাগ বাটোয়ারা হতো এখন তার চেয়ে কম হয়না বরং আরও বেশি হয়। মনে রাখতে হবে অভ্যুত্থানের লড়াইয়ে ৫-৬ জুনে আমরা ৫০০ জনও রাজপথ ছিলাম না।
কিন্তু ৫ আগস্টে আমরা ৫ কোটি মানুষ পুরো বাংলাদেশের রাজপথে নেমেছিলাম। এ জন্য সময় দিতে হবে, সাহসিকতার সঙ্গে রাজপথ থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের লড়াইয়ে খুনি হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। খুনি হাসিনা নিজে বাঁচার জন্যে এবং পরিবারকে বাঁচানোর জন্যে পালালেও তার নেতাকর্মীদের নিয়ে যাননি। এককথায় খুনি হাসিনা তার দলীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগকে টিসুর মতো ব্যবহার করেছেন। এখন অনেকে রাজনীতি করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে। এখন চেনার সময় হয়েছে।
বিগত ১৫-১৬ বছরে কোন নেতাকে কাছে পেয়েছেন এবং কোন নেতা আত্মগোপন কিংবা দেশের বাহিরে থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সুবিধা আদায় করেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বহু নেতা আছে যাদের বিগত ১৬ বছর জনগণ খুঁজেও পায়নি। তারা এখন নতুন করে নতুন রূপে এ বাংলাদেশে এসেছেন। তারাই এখন আপনাদের মাঝে হাত গোলাচ্ছেন।
কঠিন সময়ে যাদের পাশে পাওয়া যায়নি তাদের নেতা হিসেবে মেনে নেওয়ার দয়া দেখাবেন না। যদি তা দেখান তাহলে শেখ হাসিনা যেভাবে কঠিন সময়ে তার নেতাদের ফেলে পালিয়েছে আপনাদের অবস্থাও একই হবে। আপনাদের ফেলে অনেক নেতা আবার জান নিয়ে পালাবেন।'
এসময় জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য তুহিন মাহামুদ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নারায়ণগঞ্জের যুগ্ম আহবায়ক শাকিল সাইফুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক জাহিদুল হক বাঁধন,সদস্য অনিক খাঁন সিয়াম সহ জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন স্থানীয় নেতাকর্মী, শহীদ পরিবার ও আহতরা উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ র জন ত ক দ ন র জন ত ক আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ পাকিংয়ে তীব্র যানজট, জনদুর্ভোগ চরমে
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যানজট। এ যানজটের কারণে মাত্র ৫ মিনিটের রাস্তা পেরুতে সময় লেগে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। ফলে প্রতিনিয়ত চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসীকে।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগ কিংবা সিটি কর্পোরেশন এ যানজট থেকে জেলাবাসীকে পরিত্রাণ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে দিন যতই বড়ছে ততই বাড়ছে নারায়ণগঞ্জবাসীর দুর্ভোগ।
নারায়ণগঞ্জে এমন কোন সড়ক নাই সেই সড়কে যানজট নাই। মূল সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলি সব জায়গায়ই যানজট আর যানজট। তবে এ যানজটের পেছনে মূল সড়কের যানজটকেই দায়ি করছেন অনেকে।
তারা বলছেন, মূল সড়ক যদি যানজট মুক্ত থাকতো তাহলে এর আশেপাশের সড়কগুলো যানজটের সুষ্টি হতো না। মূল সড়কে তীব্র যানজটের কারণেই এর প্রভাব পড়ছে অন্য সড়কগুলোতেও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে শহরের চাইতে চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণে করেছে। এ সড়ক দিয়ে চলাচলের কথা শুনলেই মানুষ আতকে উঠে। কারণ, যানজটের মাত্র পনেরো মিনিটের রাস্তা পাড় হতে সময় লাগে ঘন্টার পর ঘন্টা।
এ রাস্তায় এ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ীকেও যানজটে আটতে থাকতে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। একবার যানজটে আটকা পড়লেই দিন শেষ। কখন বাড়ী কিংবা অফিসে যাবেন তার কোন ঠিক নেই।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, এ যানজটের প্রধান কারণ হচ্ছে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। ফ্লাইওভারের কর্মযজ্ঞের ফলে যানবাহনগুলোকে একটু ধীর গতিতে যেতে হয়। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।
তবে এ যানজটের আরও একটি বড় কারণ চোঁখে পড়ে, আর তা হলো পঞ্চবটি এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে এবং চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কের দু’পাশে ট্রাক ও কভার্ডভ্যানগুলো অবৈধভাবে পাকিং করে রাখা।
এসব যানবাহনগুলো সড়কের দু’পাশে পার্কিং করে রাখার কারণে মূল সড়ক অনেকটাই সরো হয়ে যায়। ফলে এ সড়ক দিয়ে অন্যসব যানবাহনগুলো ঠিকমত চলাচল করতে পারে না। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
অথচ, পঞ্চবটির খুব কাছেই রয়েছে ট্রাক ও কভার্ডভ্যান স্ট্যান্ড। যানবাহনের চালকরা ওই স্ট্যান্ডে গাড়ী না রেখে সড়কের পাশে অবৈধভাবে বাঁকাত্যাঁড়া গাড়ীগুলো রাখছেন। এর ফলে যে, ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং যানজটের কবলে পড়ে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে, এ বিষয়ে যেন তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।
তাদের ভাব-নমুনা দেখা মনে হয় যে, তারাই যেন এ সড়কটির মূল মালিক। না পুলিশে তাদের কিছু বলে, না তারা জনগণের কোন কথা শোনে। তারা তাদের ইচ্ছেমত গাড়ীগুলো রেখে যানজটের সৃষ্টি করছেন।
চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে চলাচল করা ভুক্তভোগী পথচারিরা বলছেন, এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করাটা বর্তমানে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এত ভয়াবহ যানজট আমরা কখনোই চোঁখে দেখিনি। পঞ্চবটি ফ্লাইওভারের নিচে যেভাবে ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো রাখা হয় পুরো সড়কটা তারা কিনে নিয়েছে। পুলিশও কিছু বলে না।
এছাড়া চাষাঢ়া থকে পঞ্চবটি পর্যন্ত পুরো সড়কে দু’পাশেই তারা গাড়ীগুলো রাখছেন। রাস্তাটি পাশে এমনিতেই জায়গা কম, আবার যদি তারা এভাবে গাড়ী রাখেন তাহলে যানজটের সৃষ্টিতো হবেই। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল বলেন, আসলে নিতাইগঞ্জ এলাকা থেকে ট্রাক স্ট্যান্ডটি সরিয়ে নেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আইভী একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। তিনি শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে পঞ্চবটি এলাকাতে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে একটি ট্রাক স্ট্যান্ড গড়ে তোলেন এবং সেখানে এ স্ট্যান্ডকে স্থানান্তর করেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
এখন তারা কিছু গাড়ী ওই স্ট্যান্ডে রাখে বাকি গাড়ীগুলো সড়ক দখল করে এলোপাথারিভাবে রাখে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলেও যেন কারো কোন কিছু বলার নেই। কারণ, এ সমস্যা নিয়ে বহুবার ডিসি-এসপির সাথে বসা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে কিন্তু সুরাহা হয় নাই।
তবে, ৫ আগস্টে দেশে একটি বড় পরিবর্তনের পর আশা করছিলাম এবার হয়তো এর একটা সুরাহা হবে। কিন্তু না। সড়ক দখল করে রাখা ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে মানুষকে বাধ্য হয়েই যানজটের মত দুর্ভোগ দুর্দশাময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পথ চলতে হচ্ছে।
তারা বলেন, আসলে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সেদিন ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এতবড় একটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু দেশের মানুষ যদি সেই শান্তি শৃঙ্খলা ভোগই করতে না পারে, তাহলে এত প্রাণ দিয়ে কি লাভ হলো?
আমরা জানিন না, প্রশাসন আসলে কাদেরকে খুশি করাতে চাচ্ছেন? মুষ্টিম কিছু চালকদের জন্য হাজার হাজার মানুষের এ কষ্ট কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি করবো, তারা যেন খুব শীঘ্রই এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়। নারায়ণগঞ্জবাসীকে যেন কিছুটা স্বস্তি দেয়।
এ বিষয়ে টিআই করিম বলেন, ৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জে যানজটের যে ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়েছিলো বর্তমানে তা কমে আসছে। আশাকরছি, আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। পঞ্চবটি সড়কে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এজন্য এ রুটে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এমতাবস্তায় যদি কোন চালক রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে গাড়ী পার্কিং করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।