চীনের কুনমিং প্রদেশের সেরা তিনটি হাসপাতালকে বাংলাদেশের রোগীদের চিকিৎসাসেবার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসার ধরন, ভিসাপ্রক্রিয়া সহজীকরণ, দোভাষী নির্বাচনসহ সামগ্রিক চিকিৎসাসেবার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কাজ করছেন। সবকিছু ঠিকভাবে এগোলে মার্চের শুরুতে বাংলাদেশের রোগীদের প্রথম দলটি চিকিৎসাসেবা নিতে কুনমিংয়ে যাবে—এমনটাই আশা করছে চীন।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় চীনা দূতাবাস আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এ কথা জানান।
গত মাসে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.

তৌহিদ হোসেন বেইজিং সফর করেছিলেন। ওই সফরের প্রেক্ষাপটে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে চীনের দূতাবাস এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে।

গত মাসে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বেইজিং সফরের সময় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এখন ঢাকায় ওই হাসপাতাল তৈরির জন্য বাংলাদেশের কাছ থেকে বিস্তারিত প্রস্তাবের অপেক্ষায় আছে চীন। এ ছাড়া চীন তাদের আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য বিশেষায়িত আধুনিক সরঞ্জাম দেবে। ঢাকার একটি হাসপাতালে স্থাপিত ওই চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের জন্য রোবট নিয়ন্ত্রিত ২০টি আধুনিক সরঞ্জাম আগামী মাসের শুরুতে ঢাকায় পৌঁছাবে।

চীনের রাষ্ট্রদূত জানান, কুনমিংয়ে তিনটি হাসপাতাল বাংলাদেশিদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এ তিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আগ্রহীদের জন্য ভিসা সহজেই দেওয়া হবে।

চীনের রাষ্ট্রদূত তিনটি হাসপাতালের নামও উল্লেখ করেন। হাসপাতাল তিনটি হলো: দ্য ফার্স্ট পিপলস হসপিটাল অব ইউনান প্রভিন্স; দ্য ফার্স্ট অ্যাফিলিয়েটেড হসপিটাল অব কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটি; এবং ফাওয়াই ইউনান হসপিটাল, চাইনিজ একাডেমি অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস।

বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ায় চীনের সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, সংস্কার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে মন্তব্য করবে না বেইজিং। বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা, ঐক্য এবং উন্নয়ন দেখতে আগ্রহী চীন। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি এ দেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক রাখতে চায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ