বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ জাসদ গঠনের কাজ শুরু হয়েছে: ব্যারিস্টার ফারাহ খান
Published: 22nd, February 2025 GMT
বাংলাদেশের স্বাধীনতার রূপকার ও জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল আলম খানের (দাদা ভাই) ভাতিজী ব্যারিস্টার ফারাহ খান বলেছেন, বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ জাসদ গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী বিরোধী দল হিসেবে জাসদ সৃষ্টি হয়েছিল। খণ্ড বিখণ্ড হয়ে দল আজকের অবস্থানে এসেছে। খণ্ডিত জাসদ নয়, সব গ্রুপকে এক করে আমরা ঐক্যবদ্ধ জাসদ গঠন করতে চাই। এজন্য তৃণমূল কর্মীদের আগে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কর্মীরা এক হলে নেতারা এক হতে বাধ্য।
শনিবার সকালে খুলনা প্রেস ক্লাবে বিভাগীয় মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
জাসদের সব গ্রুপের তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে এই আয়োজন করেন ব্যারিস্টার ফারাহ খান।
সভায় জাসদ (ইনু), বাংলাদেশ জাসদ এবং জেএসডির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ব্যারিস্টার ফারাহ খান বলেন, জাসদ কোনো নেতার দল নয়, জাসদ কর্মীদের দল। কর্মীরাই সময়ের প্রয়োজনে নেতা তৈরি করেছেন। কিন্তু নেতারা ঐক্য ধরে রাখতে পারেনি। নেতৃত্বের জন্য দল ভেঙে টুকরো হয়েছে। আমরা প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের মাথায় রেখে জাসদকে ঐক্যবদ্ধ করতে চাই। কর্মীরা এক হলে নেতারা কর্মীদের কথা শুনতে বাধ্য।
তিনি বলেন, আমাদের নেতারা কখনও শেখ হাসিনা, কখনও খালেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করেছে। আমরা অন্য দলের প্রতীক নিয়ে কোনো নেতাকে নির্বাচন করতে দেব না। আসুন এবার দলকে শক্তিশালী করি। ৬ মাস আমরা কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকি, কিছু করতে পারি কি না দেখি।
ফারাহ খান বলেন, সারাদেশে জাসদের হাজার হাজার কর্মী জেএসডি, জাসদ (ইনু), বাংলাদেশ জাসদের ব্যানারে রাজনীতি করছে। কিন্তু তৃণমূলের নিষ্ক্রিয় কর্মীরা এটা দেখতে চায় না। তারা ৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত আগের মতো একটি শক্তিশালী দল গঠনে আগ্রহী। তারই অংশ হিসেবে খুলনা বিভাগে মতবিনিময় সভা হলো। একে একে দেশের সব বিভাগে এ ধরনের মতবিনিময় সভা হবে। সারাদেশ থেকে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। অচিরেই জাসদের সব নেতাকর্মী এক হয়ে শক্তিশালী দল হিসেবে সিরাজুল আলম খানের (দাদা ভাই) ১৪ দফার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ জাসদের নতুন জন্ম হবে।
প্রবীণ জাসদ নেতা এম এ আউয়াল সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় ঐক্য জাসদ গঠনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন আ ফ ম মহসীন, এ টি এম মহব্বত আলী, গোলাম মোর্তজা, রফিকুল হক খোকন, আশেক ই এলাহী, ফকির শওকত, দিদারুল আলম, স ম রেজাউল, ইদ্রিস আলী, আব্দুল্লাহ বিশ্বাস, এম নিজাম উদ্দিন, মোস্তাকুজ্জামান, মো.
এছাড়া ইউসুফ আলী ভূঁইয়া, সাংবাদিক শেখ আবু হাসান, আবু কাজী, ওয়াহেদুজ্জামান বুলু, মুনসুর আহমেদ, এম এ সবুর, আব্দুর রাজ্জাক মন্টুসহ খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে শতাধিক জাসদ নেতা এ সভায় যোগ দেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত
বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ।
সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।
আরো পড়ুন:
একা বাস করতে পারে যে পাখি
কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?
সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।
তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না।
এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস।
তিনি জানেন, প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে। বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।
সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন।
একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।
সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।
চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।
গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা/লিপি