নারায়ণগঞ্জের বন্দরে মিশুক ও অটোগাড়ী ছিনতাইয়ের ঘটনা ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ধারাবাহিকতা গত বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারী) রাত সাড়ে ৮টায়  বন্দর উপজেলার তালতলা এলাকায় ফরহাদ (২২) নামে এক মিশুক চালককে হত্যার উদ্দেশ্য বেদম ভাবে কুপিয়ে মিশুক গাড়ী ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়েছে যাত্রীবেশী অজ্ঞাত ছিনতাইকারী দল। আহত মিশুক চালক ফরহাদ বন্দর থানার সোনাকান্দা হাটসংলগ্ন এলাকার শাহীন মিয়ার ছেলে। পথচারীরা মারাত্মক জখম অবস্থায় মিশুক চালককে উদ্ধার করে মদনপুর আল বারাকা হাসপাতালে প্রেরণ করেছে। এ ঘটনায় মিশুক চালকের মামা শুভ বাদী হয়ে গত শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারী) রাতে অজ্ঞাত নামা আসামী করে বন্দর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।


অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বন্দর থানার সোনাকান্দা হাটসংলগ্ন এলাকার শাহীন মিয়ার ছেলে মিশুক চালক  ফরহাদ মিয়া দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া মিশুক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এর ধারাবাহিকতা গত বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারী) রাত সাড়ে ৭টায় বন্দর থানাধীন বন্দর ঘাট হইতে অজ্ঞাতনামা ২জন লোক একরামপুর পৌরসভার সামনে যাবার কথা বলে যাত্রী সেঁজে ফরহাদ মিয়ার মিশুকে উঠে। পরে মিশুক চালক মিশুক নিয়ে একরামপুর পৌছলে ওই সময় মিশুক চালক ফরহাদকে   নবীগঞ্জ স্ট্যান্ডে নিয়ে যেতে বলে। মিশুক চালক ফরহাদ  তাহাদের কথা মত নবীগঞ্জ স্ট্যান্ডে পৌছুলে সেখান থেকে অজ্ঞাত আরো ১ জন ব্যাক্তি মিশুকে উঠে। পরে তাহাদের ৩ জনকে বন্দর থানাধীন নবীগঞ্জ তালতলা নিয়ে যাতে বলে। মিশুক চালক  তাহাদের কথামত তালতলা যাবার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দাঁসেরগাও স্টান্ড পার করলে তালতলার কাছাকাছি জায়গায় এসে অজ্ঞাত যাত্রীবেশী ৩ ছিনতাইকারি মধ্যে একজন ছিনতাইকারী  পেছন থেকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো সুইচ গিয়ার দিয়ে মিশুক চালক ফরহাদকে  কোপ মেরে  মাথায় এবং বাম হাতের কনুইয়ের উপরে রক্তাক্ত কাটা জখম করে। অন্যান্য অজ্ঞাত ছিনতাইকারিরা মিশুক চালককে  এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকলে মিশুক চালক  হাত দিয়ে ছিনতাইকারী কোপ প্রতিহত করতে গেলে বাম হাতের আঙ্গুল কেটে রক্তাক্ত কাটা জখম হয়। মিশুক চালকের চিৎকারের শব্দ পেয়ে পথচারিরা তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে মদনপুর বারাকাহ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করে। খবর পেয়ে ধামগড় ফাঁড়ি  পুলিশ মিশুক চালকের  জ্ঞান ফেরার পর তাহাকে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরে প্রস্তুতি চলছে।

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ চ লকক ত লতল

এছাড়াও পড়ুন:

দুনিয়ায় প্রত্যেক মুসলিমকে যেসব পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে

জীবন একটি পরীক্ষার ময়দান, যেখানে আমরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও কষ্টের মুখোমুখি হই। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষতি, জীবন ও ফসলের ক্ষতি দিয়ে। আর যারা ধৈর্য ধরে, তাদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫)

এই পরীক্ষাগুলো প্রায়ই আমাদের হতাশ বা বিমর্ষ করে তুলতে পারে, কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায় যে এই কষ্টগুলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম এবং পরকালে চিরস্থায়ী সুখের পথ প্রশস্ত করে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এই দুনিয়ার জীবন তো কেবল ক্ষণস্থায়ী ভোগ, আর পরকালই হলো চিরস্থায়ী আবাস।’ (সুরা গাফির, আয়াত: ৩৯)

পরীক্ষার উদ্দেশ্য

ইসলামে পরীক্ষা বা কষ্টকে আল্লাহর রহমতের অংশ হিসেবে দেখা হয়। এগুলো আমাদের পাপ থেকে মুক্তি, আল্লাহর ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি, নিজেকে নম্র করা এবং তাঁর নৈকট্য লাভের মাধ্যম।

আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষতি, জীবন ও ফসলের ক্ষতি দিয়ে। আর যারা ধৈর্য ধরে, তাদের সুসংবাদ দাও।সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫

পরীক্ষা আমাদের ধৈর্য ও বিশ্বাস যাচাই করে এবং এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে উচ্চ মর্যাদা লাভ করতে পারি। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখনই তুমি আল্লাহর জন্য কিছু ত্যাগ করবে, আল্লাহ তা তোমার জন্য আরও উত্তম কিছু দিয়ে প্রতিস্থাপন করবেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৩,০৭৪)

আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য

দুনিয়ার জীবন সাময়িক এবং এর কষ্টগুলো ক্ষণস্থায়ী। আমরা প্রায়ই দুনিয়ার সমস্যায়, যেমন অর্থনৈতিক সংকট, সম্পর্কের জটিলতা বা সামাজিক চাপ, এতটাই মগ্ন হয়ে পড়ি যে আমাদের মূল উদ্দেশ্য ভুলে যাই। পবিত্র কোরআন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ‘কিন্তু যে ব্যক্তি তার প্রভুর সামনে দাঁড়ানোর ভয় করেছে এবং নিজের নফসকে অবৈধ কামনা থেকে বিরত রেখেছে, তার জন্য জান্নাতই হবে আশ্রয়।’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত: ৪০–৪১)

ইবন কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন, ‘যদি আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য পর্দা তুলে দিতেন এবং তাকে দেখাতেন, কীভাবে তিনি তার জন্য সবকিছু পরিচালনা করেন, তবে তার হৃদয় আল্লাহর প্রতি ভালোবাসায় গলে যেত এবং কৃতজ্ঞতায় টুকরা টুকরা হয়ে যেত। তাই যদি দুনিয়ার কষ্ট তোমাকে ক্লান্ত করে, তবে দুঃখ করো না। হয়তো আল্লাহ তোমার দোয়ার কণ্ঠ শুনতে চান।’ (ইবন কাইয়্যিম, আল–ফাওয়ায়িদ, পৃষ্ঠা ১২৮, বৈরুত: দারুল কুতুব আল–ইলমিয়্যাহ, ১৯৯৬)

পরীক্ষা আমাদের ধৈর্য ও বিশ্বাস যাচাই করে এবং এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে উচ্চ মর্যাদা লাভ করতে পারি।

পরীক্ষা আমাদের আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়। এটি আমাদের নম্র করে, আমাদের পাপমুক্তি ঘটায় এবং আল্লাহর ওপর নির্ভরতা বাড়ায়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ায় যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি কষ্ট ও পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছে, তাকে জান্নাতে একবার ডুবিয়ে দেওয়া হবে এবং জিজ্ঞাসা করা হবে, ‘হে আদম সন্তান, তুমি কি কখনো কোনো কষ্ট দেখেছিলে? তুমি কি কখনো দুঃখ অনুভব করেছিলে?’ সে বলবে, ‘না, হে আমার রব! আমি কখনো কোনো কষ্ট দেখিনি, কখনো কোনো দুঃখ অনুভব করিনি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর–২৮০৭)

আরও পড়ুনবালকের ঈমানের পরীক্ষা ও বাদশাহের নির্মম পরিণতি০৪ মে ২০২৪আল্লাহর পরিকল্পনায় ভরসা

পরীক্ষার সময় মনে রাখতে হবে যে আল্লাহর পরিকল্পনা আমাদের পরিকল্পনার চেয়ে উত্তম। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হয়তো তোমরা এমন কিছু অপছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর এমন কিছু পছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ জানেন, আর তোমরা জানো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৬)

এই আয়াত আমাদের শেখায় যে কষ্টের পেছনে আল্লাহর একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্য রয়েছে।

হয়তো তোমরা এমন কিছু অপছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর এমন কিছু পছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ জানেন, আর তোমরা জানো না।সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৬

আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি পরকালের জন্য চিন্তিত থাকে, আল্লাহ তার বিষয়গুলো সহজ করে দেবেন, তার হৃদয়ে তৃপ্তি দেবেন এবং দুনিয়া তার কাছে আসবে, যদিও সে তা অপছন্দ করে।’ (ইবন মাজাহ, হাদিস: ৪১০৫)

পরীক্ষায় ধৈর্য ও দোয়া

পরীক্ষার সময় ধৈর্য ধরা এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তিনি তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক, আয়াত: ৩) দোয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের হৃদয়ের কথা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করি এবং তাঁর রহমতের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করি।

ইবন কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন, ‘যদি দুনিয়ার কষ্ট তোমাকে ক্লান্ত করে, তবে সিজদায় তোমার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করো এবং জেনে রাখো, আল্লাহ কখনো ভোলেন না।’ (আল–ফাওয়ায়িদ, পৃষ্ঠা ১৩০, বৈরুত: দারুল কুতুব আল–ইলমিয়্যাহ, ১৯৯৬)

আমরা যদি আল্লাহকে আমাদের হৃদয়ের কেন্দ্রে রাখি, তবে কোনো পরীক্ষাই আমাদের ভেঙে দিতে পারবে না।

জীবনের পরীক্ষাগুলো আমাদের আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়, আমাদের হৃদয়কে বিশুদ্ধ করে এবং পরকালে জান্নাত লাভের পথ প্রশস্ত করে। দুনিয়ার কষ্ট ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু আল্লাহর ভালোবাসা ও রহমত চিরস্থায়ী।

আমরা যদি আল্লাহকে আমাদের হৃদয়ের কেন্দ্রে রাখি, তবে কোনো পরীক্ষাই আমাদের ভেঙে দিতে পারবে না; বরং নবীজি (সা.)–এর শিক্ষা ও ধৈর্য, দোয়া এবং আল্লাহর ওপর ভরসার মাধ্যমে আমরা জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় বিজয়ী হতে পারব।

আরও পড়ুনত্যাগের পরীক্ষা, সফলতার উদ্যাপন০১ আগস্ট ২০২০

সম্পর্কিত নিবন্ধ