আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাংবাদিকও আসামি
Published: 23rd, February 2025 GMT
বরিশালের উজিরপুরে পাঁচটি বোমাসদৃশ বস্তু উদ্ধারের ঘটনায় ৭৫ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় এক সাংবাদিক, দিনমজুরসহ বেশ কয়েকজন বিএনপির নেতা-কর্মীকেও আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
১৮ ফ্রেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে পূর্ব ধামসর সোনার বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়-সংলগ্ন একটি বাগানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাঁচটি ‘বোমাসদৃশ’ বস্তু পাওয়া যায়। এর আগে ওই স্থানে বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন স্থানীয় লোকজন। পরে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় উজিরপুর মডেল থানার পুলিশ সেগুলো উদ্ধার করে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগকে অভিযুক্ত করে বিক্ষোভ মিছিলও করে বিএনপি। এ ঘটনায় বামরাইল ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সবুজ হাওলাদার বাদী হয়ে গতকাল শনিবার থানায় মামলা করেন।
এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, আসামিরা স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং কুপ্রবৃত্তির লোক। ১৮ ফ্রেব্রুয়ারি আসামিরা বোমা, ককটেল এবং অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে স্থানীয় বাংলাবাজার–সংলগ্ন এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে অবস্থান নেন। এ সময় তাঁরা যানবাহনের পথ রোধ করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান এবং স্লোগান দেন। তাঁরা কয়েকটি গাছে আগুন ধরিয়ে দেন। বাদী মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় তাঁরা পথ রোধ করে গালাগাল করেন। একর্পযায়ে মোটরসাইকেলটি পেট্রলবোমা দিয়ে পুড়িয়ে দিতে উদ্যত হন। পরে সাক্ষীরা ছুটে এসে তাঁকে রক্ষা করেন।
মামলায় উজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মজিদ সিকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দীনসহ ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য আসামিদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। তবে এজাহার ঘেঁটে আসামি হিসেবে বিএনপির নেতা-কর্মী এবং এক সাংবাদিকের নামও পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এলাকায় সমালোচনা চলছে।
বিএনপির নেতা–কর্মীদের আসামি করার বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী বিএনপি নেতা সবুজ হাওলাদার পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘এটা আপনি কেমন কথা বললেন, বিএনপির কেউ কি এটা করেছেন?’ পরে কয়েকটি নাম উল্লেখ করে প্রশ্ন করা হলে বলেন, ‘হতে পারে, তবে এজাহার দেখে বলতে হবে।’
সারা জীবন আমার বাবা বিএনপির রাজনীতি করেছেন। আমিও ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম। কিন্তু এখন বিএনপি নেতার মামলায় আসামি করা হয়েছেজাফরুল নাদিম, ছাত্রদলের সাবেক নেতাআসামি তালিকা ঘেঁটে দেখা যায়, ৪৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে জাফরুল নাদিম নামের একজনকে। তিনি ২০১৮ সালে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজিব হল ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়কও ছিলেন। তাঁর বাবা শাজাহান হাওলাদার উজিরপুর উপজেলা বিএনপির দীর্ঘদিন সহসভাপতি ও বরিশাল জেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি ছিলেন। মামলায় ৪৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে মিরণ ফকির নামের অপর এক বিএনপির কর্মীকে। তাঁর বাবা প্রয়াত হাবিবুর রহমান ফকির উজিরপুর উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। মামলায় ১২ নম্বর আসামি করা হয়েছে সাইদুর রহমান ইকবালকে। তিনি উজিরপুর উপজেলা জিয়া মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক।
আরও পড়ুনউজিরপুরে পাঁচটি বোমাসদৃশ বস্তু উদ্ধার, প্রতিবাদে মহাসড়কে বিএনপির বিক্ষোভ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫১৮ নম্বর আসামি করা হয়েছে দেশ রূপান্তর ও বরিশালের আঞ্চলিক দৈনিক আজকের পরিবর্তনের উপজেলা প্রতিনিধি শাকিল মাহমুদকে। এ ছাড়া আসামির তালিকায় আছেন স্থানীয় জয়শ্রী এলাকার পান আড়তদার ও বিএনপির সক্রিয় কর্মী আনোয়ার মল্লিক, উজিরপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য হানিফ হাওলাদার, দিনমজুর সেলিম খানসহ অনেকে।
ছাত্রদলের সাবেক নেতা জাফরুল নাদিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা জীবন আমার বাবা বিএনপির রাজনীতি করেছেন। আমিও ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম। কিন্তু এখন বিএনপি নেতার মামলায় আসামি করা হয়েছে, এই দুঃখ কোথায় রাখব!’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার এক চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে বাদীর জমিজমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এই বিরোধের সূত্র ধরে আমাকে ও আমার সেই ভাইকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।’
মামলার অপর আসামি ইউপি সদস্য হানিফ হাওলাদার বলেন, মামলার ২ নম্বর সাক্ষী সৈয়দ ইউসুফের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে দিনমজুর সেলিম খানসহ অনেককেই আসামি করা হয়েছে।
সাংবাদিক শাকিল মাহমুদ বলেন, ‘জীবনে কোনো দিন কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। সাংবাদিকতার পাশাপাশি ব্যবসা পরিচালনা করে আমি জীবিকা নির্বাহ করছি। আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখলের জন্যই নাটকীয়ভাবে আমাকে মামলার আসামি করা হয়েছে।’ মামলার পর গ্রেপ্তারের আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আরেক ব্যবসায়ী আনোয়ার মল্লিক।
এ বিষয়ে উজিপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তৌহিদ করিম বলেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনটি ককটেল ও দুটি পেট্রলবোমাসদৃশ্য বোতল উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলাটি তদন্তাধীন। বাদী যাঁদেরকেই আসামি করুন না কেন, তদন্তে যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে, তাঁদের বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর বাইরে কাউকে হয়রানি করা হবে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র র র জন ত ন ব এনপ ব এনপ র বর শ ল কর ছ ন ব যবস আওয় ম ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
সংস্কারের প্রশ্নে ব্যক্তি–দলের স্বার্থের চেয়ে দেশকে প্রাধান্য দিতে হবে: নুরুল হক
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেছেন, আর কোনো শাসক যাতে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পথ অনুসরণ করে নাগরিকদের নিপীড়নসহ দেশকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে না পারে, সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সংস্কার প্রশ্নে ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থের চেয়ে দেশকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে।
আজ সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে সংস্কার প্রশ্নে গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের শুরুতে নুরুল হক এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে আজ গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
বৈঠকের শুরুতে নুরুল হক বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গণ অধিকার পরিষদের আহ্বান থাকবে, যে সংস্কারগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হবে, সেগুলো যেকোনো মূল্যে এই সরকারের অধীনেই বাস্তবায়ন করতে হবে।
নুরুল হক বলেন, বিগত ১৬ বছরে দেশের স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হয়ছিল। গণ অধিকার পরিষদ নবীন রাজনৈতিক দল হলেও ২০১৮ সাল থেকে তাঁরা মামলা, হামলা ও নির্যাতনের শিকার।
বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের নতুন অধ্যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন হয়েছে।
সম্মিলিতভাবে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, তাঁদের লক্ষ্য দ্রুততম সময়ে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা।
সংস্কার প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, শুধু আলোচনার মধ্য দিয়েই সংস্কার বাস্তবায়ন হবে না। সবার একত্রিত থাকার তাগিদ সব সময় জারি রাখতে হবে।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, সাবেক বিচারপতি এমদাদুল হক ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।
আলোচনায় গণ অধিকার পরিষদের ১০ সদস্যদের প্রতিনিধিদল অংশ নিচ্ছে। নুরুল হক ছাড়া প্রতিনিধিদলে রয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, সিনিয়র সহসভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র ফারুক হাসান, গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর সদস্য খালিদ হোসেন, হাবিবুর রহমান রিজু, সাকিব হোসেন, দপ্তর সম্পাদক শাকিলুজ্জামান, সহমানবাধিকার–বিষয়ক সম্পাদক ফাতেমা দিশা, যুব উইংয়ের সদস্য মুমতাজুল ইসলাম, গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ।