বরিশালের উজিরপুরে পাঁচটি বোমাসদৃশ বস্তু উদ্ধারের ঘটনায় ৭৫ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় এক সাংবাদিক, দিনমজুরসহ বেশ কয়েকজন বিএনপির নেতা-কর্মীকেও আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

১৮ ফ্রেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে পূর্ব ধামসর সোনার বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়-সংলগ্ন একটি বাগানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাঁচটি ‘বোমাসদৃশ’ বস্তু পাওয়া যায়। এর আগে ওই স্থানে বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন স্থানীয় লোকজন। পরে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় উজিরপুর মডেল থানার পুলিশ সেগুলো উদ্ধার করে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগকে অভিযুক্ত করে বিক্ষোভ মিছিলও করে বিএনপি। এ ঘটনায় বামরাইল ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সবুজ হাওলাদার বাদী হয়ে গতকাল শনিবার থানায় মামলা করেন।

এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, আসামিরা স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং কুপ্রবৃত্তির লোক। ১৮ ফ্রেব্রুয়ারি আসামিরা বোমা, ককটেল এবং অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে স্থানীয় বাংলাবাজার–সংলগ্ন এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে অবস্থান নেন। এ সময় তাঁরা যানবাহনের পথ রোধ করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান এবং স্লোগান দেন। তাঁরা কয়েকটি গাছে আগুন ধরিয়ে দেন। বাদী মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় তাঁরা পথ রোধ করে গালাগাল করেন। একর্পযায়ে মোটরসাইকেলটি পেট্রলবোমা দিয়ে পুড়িয়ে দিতে উদ্যত হন। পরে সাক্ষীরা ছুটে এসে তাঁকে রক্ষা করেন।

মামলায় উজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মজিদ সিকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দীনসহ ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য আসামিদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। তবে এজাহার ঘেঁটে আসামি হিসেবে বিএনপির নেতা-কর্মী এবং এক সাংবাদিকের নামও পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এলাকায় সমালোচনা চলছে।

বিএনপির নেতা–কর্মীদের আসামি করার বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী বিএনপি নেতা সবুজ হাওলাদার পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘এটা আপনি কেমন কথা বললেন, বিএনপির কেউ কি এটা করেছেন?’ পরে কয়েকটি নাম উল্লেখ করে প্রশ্ন করা হলে বলেন, ‘হতে পারে, তবে এজাহার দেখে বলতে হবে।’

সারা জীবন আমার বাবা বিএনপির রাজনীতি করেছেন। আমিও ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম। কিন্তু এখন বিএনপি নেতার মামলায় আসামি করা হয়েছেজাফরুল নাদিম, ছাত্রদলের সাবেক নেতা

আসামি তালিকা ঘেঁটে দেখা যায়, ৪৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে জাফরুল নাদিম নামের একজনকে। তিনি ২০১৮ সালে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজিব হল ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়কও ছিলেন। তাঁর বাবা শাজাহান হাওলাদার উজিরপুর উপজেলা বিএনপির দীর্ঘদিন সহসভাপতি ও বরিশাল জেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি ছিলেন। মামলায় ৪৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে মিরণ ফকির নামের অপর এক বিএনপির কর্মীকে। তাঁর বাবা প্রয়াত হাবিবুর রহমান ফকির উজিরপুর উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। মামলায় ১২ নম্বর আসামি করা হয়েছে সাইদুর রহমান ইকবালকে। তিনি উজিরপুর উপজেলা জিয়া মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক।

আরও পড়ুনউজিরপুরে পাঁচটি বোমাসদৃশ বস্তু উদ্ধার, প্রতিবাদে মহাসড়কে বিএনপির বিক্ষোভ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

১৮ নম্বর আসামি করা হয়েছে দেশ রূপান্তর ও বরিশালের আঞ্চলিক দৈনিক আজকের পরিবর্তনের উপজেলা প্রতিনিধি শাকিল মাহমুদকে। এ ছাড়া আসামির তালিকায় আছেন স্থানীয় জয়শ্রী এলাকার পান আড়তদার ও বিএনপির সক্রিয় কর্মী আনোয়ার মল্লিক, উজিরপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য হানিফ হাওলাদার, দিনমজুর সেলিম খানসহ অনেকে।

ছাত্রদলের সাবেক নেতা জাফরুল নাদিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা জীবন আমার বাবা বিএনপির রাজনীতি করেছেন। আমিও ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম। কিন্তু এখন বিএনপি নেতার মামলায় আসামি করা হয়েছে, এই দুঃখ কোথায় রাখব!’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার এক চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে বাদীর জমিজমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এই বিরোধের সূত্র ধরে আমাকে ও আমার সেই ভাইকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।’

মামলার অপর আসামি ইউপি সদস্য হানিফ হাওলাদার বলেন, মামলার ২ নম্বর সাক্ষী সৈয়দ ইউসুফের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে দিনমজুর সেলিম খানসহ অনেককেই আসামি করা হয়েছে।

সাংবাদিক শাকিল মাহমুদ বলেন, ‘জীবনে কোনো দিন কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। সাংবাদিকতার পাশাপাশি ব্যবসা পরিচালনা করে আমি জীবিকা নির্বাহ করছি। আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখলের জন্যই নাটকীয়ভাবে আমাকে মামলার আসামি করা হয়েছে।’ মামলার পর গ্রেপ্তারের আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আরেক ব্যবসায়ী আনোয়ার মল্লিক।

এ বিষয়ে উজিপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তৌহিদ করিম বলেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনটি ককটেল ও দুটি পেট্রলবোমাসদৃশ্য বোতল উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলাটি তদন্তাধীন। বাদী যাঁদেরকেই আসামি করুন না কেন, তদন্তে যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে, তাঁদের বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর বাইরে কাউকে হয়রানি করা হবে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র র র জন ত ন ব এনপ ব এনপ র বর শ ল কর ছ ন ব যবস আওয় ম ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

হিন্দুদের ভাগ্যোন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামি সরকার: গোলাম পরওয়ার

স্বাধীনতার পর যারাই দেশ চালিয়েছে, তারা সবাই হিন্দুদের ব্যবহার করে শুধু নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেছেন, হিন্দুদের ভাগ্যোন্নয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামি সরকার।

আজ শুক্রবার খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাধীনতা চত্বরে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর হিন্দু কমিটির উদ্যোগে হিন্দু সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন। তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাগ্যোন্নয়ন ও ডুমুরিয়া-ফুলতলাসহ দেশের সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নে এখন প্রয়োজন ইসলামি সরকার। যাঁরা দাঁড়িপাল্লার জোয়ার দেখে ভয়-হুমকি দিচ্ছে, তাদের হুমকিতে হিন্দুরা আর ভয় পাবে না। হিন্দুদের বাধা দিলে জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

গোলাম পরওয়ার বলেন, ৫৪ বছর যারা দেশ চালিয়েছে তারা সন্ত্রাস, দখলদারি ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে হিন্দুদের শোষণ করেছে। জামায়াত রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে দেশ থেকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও দখলদারদের নির্মূল করা হবে। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়, আমরা সেই পরিবর্তন আনতে চাই। লাঙলের শাসন দেখেছি, ধানের শীষের শাসন দেখেছি, নৌকার শাসনও দেখেছি। একটি দলই বাকি—জামায়াতে ইসলামী, তার প্রতীক দাঁড়িপাল্লা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ছাত্রশিবিরের জয়ের বিষয়টি তুলে ধরে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিবর্তনের বার্তা দিয়েছে, আগামীতেও সেই বার্তা জনগণ দেবে।’

চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে দেড় হাজার শহীদ ও ৪০ হাজার আহতের কথা উল্লেখ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নভেম্বরে গণভোট দিয়েই ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।

উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি বাবু কৃষ্ণ নন্দীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি দেব প্রসাদ মন্ডলের সঞ্চালনায় সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসভাপতি আবুল খায়ের, শোভনা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দিন, শরাফপুর সর্বজনীন পূজা মন্দিরের গোঁসাই সাধু প্রমথ গাইন, ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সহসভাপতি হরিদাস মন্ডল, কানাই লাল কর্মকার ও প্রশান্ত কুমার মন্ডল, কোষাধ্যক্ষ গৌতম কুমার মন্ডল, পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সুভাষ সরদার, মাগুরখালী ইউনিয়ন সহসভাপতি সুজিৎ কুমার সরকার, ধামালিয়া ইউনিয়ন সভাপতি গোবিন্দ কুন্ডু, রুদাঘয়া ইউনিয়ন সভাপতি বিপ্লব সরকার, রঘুনাথপুর ইউনিয়ন সভাপতি কার্তিক চন্দ্র সরকার, খর্ণিয়া ইউনিয়ন সভাপতি নারায়ণ রাহা, মাগুরঘোনা ইউনিয়ন সভাপতি বিশ্বনাথ দাস, সাহস ইউনিয়ন সভাপতি তন্ময় মন্ডল, ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন সভাপতি নিরঞ্জন রায়, রংপুর ইউনিয়ন সভাপতি তরুন কুমার মন্ডল, শোভনা ইউনিয়ন হিন্দু কমিটির মহিলা সম্পাদক প্রিয়ংকা মন্ডল, মাগুরখালী ইউনিয়ন সভাপতি প্রদীপ কুমার সরকার, আটলিয়া ইউনিয়ন সভাপতি অনিমেষ মন্ডল, গুটুদিয়া ইউনিয়ন সভাপতি মনোরঞ্জন মন্ডল, শরাফপুর ইউনিয়ন সভাপতি গোবিন্দ কুমার বিশ্বাস, শোভনা ইউনিয়ন সভাপতি স্বদেশ হালদার, ডুমুরিয়া ইউনিয়ন সভাপতি অরুন কুমার আচার্য প্রমুখ।

হিন্দু সম্মেলন ঘিরে ডুমুরিয়ার ১৪টি ইউনিয়ন থেকে বর্ণিল মিছিল এসে জমায়েত হয়। সমাবেশ শেষে একটি গণমিছিল ডুমুরিয়া সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

হিন্দু সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, নতুন প্রজন্মের প্রথম ভোট দাঁড়িপাল্লার পক্ষে হোক। আগামী নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ারকে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত করতে সবার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
মতুয়া সংঘের সভাপতি সুদীপ্ত কুমার সুন্দর মন্ডল বলেন, ‘আমরা আর সংখ্যালঘু বলে পরিচয় শুনতে চাই না। আমরা সবাই বাংলাদেশি। স্বাধীনতার পর কোনো সরকার হিন্দুদের দাবিতে কাজ করেনি। এবার প্রমাণ হবে, হিন্দু মানেই একটি নির্দিষ্ট দল নয়।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছাত্রদলের কমিটি নেই ১৪ মাস, স্থবির কার্যক্রম
  • মামলায় ঝুলে গেছে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন
  • গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করলেন সিলেট-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আদিবা হোসেন
  • সম্মেলনের প্রায় তিন মাস পর রাজশাহী মহানগর বিএনপির আংশিক কমিটি
  • হিন্দুদের ভাগ্যোন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামি সরকার: গোলাম পরওয়ার