চট্টগ্রামে আসা অনেক পর্যটক ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি এখানকার খাবার স্বাদ নেওয়ার জন্য বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় ঢুঁ মারেন। নামী রেস্তোরাঁর পাশাপাশি অনেকের তালিকায় থাকে ভাবির হোটেলের নামও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর ফুড ব্লগারদের কল্যাণে এখন অনেকেই ভাবির হোটেলের নাম জানেন। সীতাকুণ্ডে মহাসড়কের পাশে জৌলুশহীন একটা ছোট খাবার হোটেলের এমন নাম ছড়িয়ে পড়ার পেছনে রয়েছে এখানকার চুইঝালে রান্না মাংস, বিশেষ করে গরুর মাংসের অতুলনীয় স্বাদ।

যে ভাবির হোটেল নিয়ে এত কথা, এত রিভিউ ফুড ব্লগারদের—সেটা যে নেহাতই আলগা উচ্ছ্বাস নয়। সেখানকার খাবার একবার চেখে দেখলেই বোঝা যাবে সেটা। যাঁরা ভাবির হোটেলে খেয়েছেন তাঁদের মতে, এখানকার রান্না খেলে মুখে লেগে থাকে। একবার যিনি খেয়েছেন, তিনি স্বজন ও বন্ধুদের নিয়ে ফের আসেন।

গত শনিবার সীতাকুণ্ডের পৌর সদরের বায়তুশ শরফ মসজিদের বিপরীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনের ধারে ভাবির হোটেলে ঢুকতেই পাওয়া গেল শিল-পাটায় মসলা বাটার শব্দ। এক পাশে দুটো বড় হাঁড়িতে রান্না হচ্ছিল গরু ও খাসির মাংস। যার নামে হোটেলটি পরিচিতি পেয়েছে, সেই ভাবিকে খুঁজে পেতেও সময় লাগল না। মসলাবাটা, কোটা-বাছা, রান্নায় কোনো মসলা যোগ করা—সব কাজেই নির্দেশনা দিচ্ছিলেন তিনি। আর তিনিই যে ভাবি, তা রেস্তোরাঁর কর্মীদের দেখিয়ে দিতে হলো না। নাম শরিফা বেগম। ১৬ বছর আগে সাতক্ষীরা জেলা থেকে স্বামীর হাত ধরে চট্টগ্রামে আসেন। অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছেন। তবে সাফল্য ধরা দিয়েছে শেষমেশ।

সকাল ১০টার দিকে হোটেলে তখনো ‘কাস্টমাররা’ আসেনি কেউ। রান্নার কাজ চলছিল পুরোদমে। লাকড়ির চুলার গনগনে তাপে খুন্তি নাড়তে নাড়তে ভাবি শরিফা বেগম কথা বলে যান। হাঁড়ি থেকে বলক ছড়িয়ে উঠছিল মাংসের সুঘ্রাণ।

শরিফা বেগম বললেন, শিলপাটায় বাটা পেঁয়াজ, মরিচ, চুইঝাল, বিশেষ মসলা আর রান্নার নিজস্ব কৌশলের কারণে এখানকার গরু ও খাসির মাংস লোকে পছন্দ করেছে। কথা বলতে বলতে শরিফা টুকরা করে কাটা চুইঝাল ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন মাংসের হাঁড়িতে। পাশাপাশি দুটি লাকড়ির চুলার একটিতে বড় কড়াইয়ে ২০ কেজি গরুর মাংস, অন্যটিতে ৮ কেজি খাসির মাংস রান্না হচ্ছিল।

সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা গ্রামে ভাবি ও তাঁর স্বামীর বাড়ি। বর্তমানে যেখানে হোটেল রয়েছে, সেখানে তিনি দোকান দেন ৯ বছর আগে। প্রথম দিকে দোকানের কোনো নাম ছিল না। তখন এক কেজি গরুর মাংস রান্না করলে তিন দিনেও শেষ হতো না। কিছু কিছু গাড়ির চালকেরা গাড়ি থামিয়ে খেতেন। তাঁরা একবার খেয়ে গেলে আবারও আসতেন।

যেভাবে শুরু ভাবির হোটেল

তাঁর দোকানে আনিসুর রহমান নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা নিয়মিত চুইঝালের মাংস খেতেন। তিনি একদিন খাবারের ভিডিও করে ফেসবুকে ও ইউটিউবে ছাড়েন। এরপর ভিডিওগুলো তিনি বিভিন্ন পর্যটকের ফেসবুক গ্রুপে ছড়িয়ে দেন। এরপর এক গ্রুপ, দুই গ্রুপ করে পর্যটকেরা আসতে শুরু করেন। হোটেলটিও জনপ্রিয়তা পায়। পর্যটকেরা নিজেরাই হোটেলটির নাম দেন ভাবির হোটেল। এরপর থেকে বিভিন্ন ইউটিউবার এসে ভিডিও করেন।

তবে হোটেল খোলার কাজটি এত সহজ ছিল না। শরিফা বেগম বলেন, ২০০৯ সালে সাতক্ষীরা থেকে তিনি ও তাঁর স্বামী–সন্তান নিয়ে কাজের সন্ধানে সীতাকুণ্ডে আসেন। শুরুতেই কয়েক মাস দৈনিক ভিত্তিতে বিভিন্ন স্থানে কাজ করেন। পরে একটি হোটেলে কাজ নেন। সেখানে চার মাস কাজ করার পর সীতাকুণ্ড পৌর সদরের কলেজ রোড এলাকায় নিজেরাই একটি হোটেল খোলেন।

ওই এলাকাটি হিন্দু অধ্যুষিত হওয়ায় সেখানে গরুর মাংস চলে না। দুপুরের খাবার হিসেবে ভর্তা, শুঁটকি, ডাল, মাছ ও মুরগির মাংস রান্না করা হতো। তবে ভাতের খাওয়ার গ্রাহক তেমন পাওয়া যেত না। ওই এলাকায় বেশি চলত বিভিন্ন ধরনের নাশতার আইটেম। সাত বছর সেখানে কোনোমতে দোকান চালান। এরপর তাঁরা একটা প্রতারকের খপ্পরে পড়ে পুঁজিসহ সব হারিয়ে ফেলেন। ফিরে যান সাতক্ষীরায়। এরপর কয়েক মাস সাতক্ষীরায় থেকে আবারও সীতাকুণ্ডে আসেন।

এবার নতুন করে বায়তুশ শরফ মসজিদ এলাকায় দোকান দেন। সাতক্ষীরা থেকে চুইঝাল এনে সীতাকুণ্ডের মানুষকে পরিচয় করানোর চেষ্টা করেন। শুরুতেই তাঁর সঙ্গে সীতাকুণ্ডের মানুষের বাগ্‌বিতণ্ডা হতো। বেচাকেনাও তেমন ভালো হতো না।

এরপর ফেসবুকে প্রচারণার পর ক্রেতা বেড়ে যায়। এখন তিনি গড়ে প্রতিদিন ৮০ কেজি গরুর মাংস রান্না করেন। এ ছাড়া খাসির মাংস রান্না করেন অন্তত ১৬ কেজি। এখন তাঁর কর্মচারী আছেন ১০ জন। রান্না সহকারীর বেতন মাসে ২১ হাজার টাকা।

চুইঝালে মাংস

ভাবির হোটেলে শুধু মরিচের গুঁড়া ছাড়া বাকি সব মসলা শিলপাটায় বেটে নেওয়া হয়। মাংসের বিশদ রেসিপি তুলে ধরতে গিয়ে শরিফা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, গরু–খাসির মাংসের চুইঝাল রান্নায় আহামরি কৌশল নেই। ঐতিহ্যগতভাবে গ্রামের মানুষ যেভাবে রান্না করেন, তিনিও ঠিক সেভাবে রান্না করেন। এখন যুগ পাল্টে গেছে। রান্নায় এখন আর কেউ কষ্ট করে বাটা মসলা ব্যবহার করতে চান না। সবাই গুঁড়া মসলা ব্যবহার করেন। ফলে স্বাদ অনেকটা কমে গেছে। তিনি নিজে বাটা মসলা ব্যবহার করেন বলে তাঁর তরকারির স্বাদটা অন্যদের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন হয়। এ ছাড়া গতানুগতিক হোটেলে যে পরিমাণ মসলা দেয়, তিনি তত মসলা ব্যবহার করেন না।

ভাবির হোটেলের সব রান্নাই হয় বাটা মসলায়। গত শনিবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর

এছাড়াও পড়ুন:

বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ, চালু হলো ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার

সংস্কার শেষে ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার চালু হয়েছে। আজ শনিবার সকালে বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ করার মধ্য দিয়ে এ কারার যাত্রা শুরু হয়। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের আটটি কারাগারের সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ও ফেনী জজ আদালতে বিচারাধীন মামলার আসামিদের রাখা হবে।

কারা সূত্র জানায়, দেশের পুরোনো চারটি কারাগারের মধ্যে ফেনী-২ কারাগার একটি। শত বছরের পুরোনো এ কারাগার ভবন ছিল জরাজীর্ণ। এ কারণে ২০১৯ সালে ১২ জানুয়ারি এ কারাগার থেকে বন্দীদের ফেনীর শহরতলির রানীরহাট এলাকার নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে কারাগারটি অনেকটা ‘পরিত্যক্ত’ অবস্থায় ছিল।

নতুন করে চালু হওয়া কারাগারটির অবস্থান ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ায়। এটি ১৯১৫ সালে সাবজেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ১৯৯৮ সালে জেলা এটিকে কারাগারে উন্নীত হয়। এ কারাগারের বর্তমান ধারণক্ষমতা ১৭২ জন। এর মধ্যে ১৭০ জন পুরুষ ও ২ জন নারী। কারাগার চালু করার জন্য গতকাল কুমিল্লা জেলা কারাগার থেকে ২৪ জন ও চট্টগ্রাম থেকে চারজন বন্দীকে আনা হয়েছিল। তাঁরা সবাই সশ্রম সাজাপ্রাপ্ত। এ কারাগারে তাঁরা রান্নার দায়িত্বে থাকবেন।

কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, ধাপে ধাপে সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন বন্দীদের ফেনীর দ্বিতীয় কারাগারে আনা হবে। আপাতত এতে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২৬ জন, কুমিল্লা থেকে ৭৪ জন, নোয়াখালী থেকে ১৫ জন, লক্ষ্মীপুর থেকে ৪ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ৩৩ জন বন্দী এখানে স্থানান্তর করা হবে। এতে সেল, রান্নাঘর, কিশোর ওয়ার্ড, মসজিদসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা রয়েছে। এ কারাগার নিয়ে বর্তমানে দেশে কারার সংখ্যা ৭১।

জানতে চাইলে ফেনী-২–এর জেল সুপার মো. দিদারুল আলম বলেন, ‘রাষ্ট্র চায়, কারাগার শুধু শাস্তির জায়গা নয়, সংশোধনের কেন্দ্র হোক। এরই অংশ হিসেবে সংস্কার শেষে ফেনী কারাগার-২ চালু হয়েছে।’

কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার ফেরদৌস মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ কারাগারে স্থানান্তরিত বন্দীদের সব সুযোগ-সুবিধা ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত নার্সও যোগদান করেছেন। বেশির ভাগ পদে কর্মচারীরাও কাজ শুরু করেছেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘দূরে থেকেও আমরা কাছে, এটাই বাস্তব’
  • বিলাসবহুল প্রমোদতরিতে খুন, এরপর...
  • ফাইনালে দ. আফ্রিকাকে ২৯৯ রানের টার্গেট দিল ভারত
  • শাহরুখকে ‘কুৎসিত’ বলেছিলেন হেমা মালিনী, এরপর...
  • প্রথম দেখায় প্রেম নাকি ঝগড়া? আসছে ইয়াশ–তটিনীর ‘তোমার জন্য মন’
  • জেমিনিতে যুক্ত হলো গুগল স্লাইডস তৈরির সুবিধা, করবেন যেভাবে
  • নড়াইলে ৩ দিন ধরে স্কুলছাত্রী নিখোঁজ
  • রোহিতের পর কোহলির রেকর্ডও কাড়লেন বাবর, পাকিস্তানের সিরিজ জয়
  • নাজমুলই থাকছেন টেস্ট অধিনায়ক
  • বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ, চালু হলো ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার