আবদুল্লাহ আল নোমানের মৃত্যুতে চট্টগ্রামে শোকের ছায়া
Published: 25th, February 2025 GMT
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমানের মৃত্যুতে চট্টগ্রামে বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীসহ সর্বমহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে তার মৃত্যু সংবাদ চট্টগ্রামে পৌঁছালে সবাই শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন সবাই। নোমান চট্টগ্রামে দলমত নির্বিশেষে সবার কাছেই ছিলেন জনপ্রিয়।
এদিকে নোমানের মৃত্যুতে চট্টগ্রামের কাজীল দেউড়ি চত্বরে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির পূর্ব নির্ধারিত জনসভা স্থগিত করা হয়েছে। এতথ্য নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার।
আরো পড়ুন: বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান মারা গেছেন
আরো পড়ুন:
বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান মারা গেছেন
বাসায় ফেরার পথে নারী শ্রমিকের মৃত্যু, সড়ক আটকে বিক্ষোভ
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমানের মৃত্যুতে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “তিনি (আবদুল্লাহ আল নোমান) বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে দলকে সুসংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তিনি গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সাহসী নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি ছিলেন দলের অন্তঃপ্রাণ নেতা। তার মৃত্যুতে দেশ ও জাতীয়তাবাদী দল এক ত্যাগী, সাহসী, সংগ্রামী সজ্জন ও বর্ণাঢ্য রাজনীতিবিদকে হারালো।”
তিনি আরো বলেন, “দেশের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে আবদুল্লাহ আল নোমানের অবদান জাতি ও দল চিরদিন মনে রাখবে। তার মৃত্যুতে দলের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। নিজের কর্মের মধ্যে দিয়ে তিনি নেতাকর্মীদের কাছে অমর হয়ে থাকবেন।”
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত ড.
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, “আবদুল্লাহ আল নোমানের মৃত্যুতে আমরা একজন অভিভাবক হারিয়েছি। দেশ হারিয়েছে একজন দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতাকে। তার মৃত্যুতে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা কখনো পূরণ হবার নয়। আবদুল্লাহ আল নোমানের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোকাহত পরিবারের সবার প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।”
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “আবদুল্লাহ আল নোমান ভাই ছিলেন বীর চট্টলার অবিসংবাদিত নেতা। তার মৃত্যুতে আমরা একজন দেশপ্রেমিক নির্লোভ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে হারিয়েছি।”
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া বলেন, “আবদুল্লাহ আল নোমানের মৃত্যুতে যে শূন্যতা তৈরি হলো তা অপূরণীয়। তিনি ছিলেন আমাদের সাহস, আমাদের পথ প্রদর্শক, আমাদের অভিভাবক।”
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান।
ব্যক্তিগত সহকারী নুরুল আজিম হিরু বলেন, “আজ ভোরে রাজধানীর ধানমন্ডির বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন আবদুল্লাহ আল নোমান। দ্রুত তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার জানাজাসহ পরবর্তী কার্যক্রম দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
ষাটের দশকের শুরুতে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে আবদুল্লাহ আল নোমান যোগ দেন ছাত্র ইউনিয়নে। মেননপন্থি ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক, বৃহত্তর চট্টগ্রামের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
ছাত্রজীবন শেষে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর হাত ধরে তিনি যোগ দেন শ্রমিক রাজনীতিতে। পূর্ববাংলা শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান। গোপনে ভাসানীপন্থি ন্যাপের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত হন। ১৯৭০ সালে তাকে ন্যাপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। যুদ্ধ শেষে আবারও ন্যাপের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৮১ সালে বিএনপিতে যোগ দেন আবদুল্লাহ আল নোমান।
১৯৯১ সালে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবদুল্লাহ আল নোমান। ওই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর মৎস্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এই বিএনপি নেতা।
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ আবদ ল ল হ আল ন ম ন র ম ত য ত ন আবদ ল ল হ আল ন ম ন ব এনপ র মন ত র র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে
আগামী জাতীয় নির্বাচন দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ‘দেশে যাতে আর কখনো ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সে বিষয়ে নারীসমাজকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। আমি বাংলাদেশের মা-বোনদের আহ্বান জানাই, আপনারা সচেতন ও সজাগ থাকুন।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ মিলনায়তনে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নারীদের অবদান’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তারেক রহমান। তিনি লন্ডন থেকে সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দল এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পটভূমিতে নারীসমাজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে উল্লেখ করে সভায় তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা চাই, একজন মায়ের চোখে যেমন বাংলাদেশ হওয়া উচিত, তেমনই একটি ইনসাফভিত্তিক, গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে।’
তারেক রহমান বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামে যেসব পরিবার আপনজন হারিয়েছে, তাদের আত্মত্যাগের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। এসব পরিবারে একজন পুরুষ সদস্যের মৃত্যুর পর একজন নারী যেভাবে প্রতিদিন সংসার টেনে নিয়ে যাচ্ছেন, তা এক অনবদ্য সংগ্রাম।
নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীকে রাষ্ট্র এবং রাজনীতির মূলধারার বাইরে রেখে কখনোই নিরাপদ বাংলাদেশ গঠন সম্ভব নয়। নারীশক্তিকে কর্মপরিকল্পনার বাইরে রেখে কোনো রাষ্ট্রই এগিয়ে যেতে পারে না। তিনি বলেন, নারী-পুরুষ ভেদাভেদ না করে সবাইকে শিক্ষা ও দক্ষতার মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে।
নারীর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তারেক রহমান বলেন, নারীদের স্বাবলম্বী করা গেলে বৈষম্য কমবে, পারিবারিক সহিংসতাও রোধ হবে। তাই বিএনপির স্লোগান হচ্ছে—‘ক্ষমতায়িত নারীশক্তি, পরিবারের মুক্তি।’
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি আগামী দিনে ক্ষমতায় এলে প্রান্তিক ৫০ লাখ পরিবারের জন্য ‘ফ্যামিলি কার্ড’ চালু করবে। এই কার্ড নারীদের নামে ইস্যু করা হবে। ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে প্রান্তিক পরিবারগুলোকে প্রতি মাসে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আর্থিক বা খাদ্যসহায়তা দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন ঘটবে এবং পরিবারগুলো ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হবে।
তারেক রহমানের বক্তব্যের আগে সভায় একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এই তথ্যচিত্রে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নারীদের অবদান তুলে ধরা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আফরোজা খানম বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা ছিল অসামান্য। এই লড়াইয়ে সবচেয়ে সাহসী ভূমিকা রেখেছে নারীসমাজ।
যাঁরা রক্ত-অশ্রু ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, সেই নারীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস।
সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও সেলিমা রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তাজমেরি এস এ ইসলাম ও তাহসীনা রুশদির, বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া রব প্রমুখ।
এ ছাড়া বক্তব্য দেন মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম, টক শো উপস্থাপক হাসিনা আখতারের ধারণ করা বক্তব্য সভায় প্রচার করা হয়। সভার সঞ্চালক ছিলেন মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান। সভায় শহীদ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা জানানো হয়।