শেখ হাসিনার পতন ঘটানো গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করছেন। আজ দলটির আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে। দলটির নাম ঠিক করা হয় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। নতুন এ দলের নামের ইংরেজি রূপ হবে ‘ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি’ (এনসিপি)। আজ শুক্রবার বেলা ৩টায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বড় জমায়েতের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করবে দলটি।

দলটির আত্মপ্রকাশ নিয়ে আজ শুক্রবার নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড.

আসিফ নজরুল। সেখানে তিনি লিখেছেন, ২০২৪-এর ভূয়া নির্বাচনের পর খুব মন খারাপ করে থাকতাম। এমন সময় আখতার একদিন আইন বিভাগে এলো। বলে কয়ে আমি তাকে বাড়ী থেকে ঢাকায় আনিয়ে মাস্টার্স শেষ করতে রাজি করিয়েছিলাম। কিন্তু এরপরও ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার কোনো লক্ষণ নাই তার মধ্যে।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার গাড়ী থামিয়ে সে সালাম দিলো। তারপর বেশ কিছুক্ষণ কাঁচুমাচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। আমি বিরক্ত হলাম। আরও বিরক্ত হলাম; যখন সে বলল, নুর-রাশেদদের দল ত্যাগ করে নতুন সংগঠন করবে!’

ফেসবুকে আইন উপদেষ্টা লিখেছেন, ‘আমি বললাম, আবার নতুন দল! আর কতোবার মার খেতে চাও তুমি! সে মাথা নিচু করে মৃদু হাসতে থাকে। এই অদ্ভূত হাসির কোনো মানে খুঁজে পেলাম না। বেশি কথা না বলে বাসায় চলে এলাম। কয়েকদিন পর ছাত্রলীগের হাতে মার খেয়ে তার রক্তাক্ত ছবি দেখে দুঃখ আর হতাশায় বুক বিদীর্ণ হলো। সে কি বুঝতে পারছে না কিছু হবে না আর এসব করে!’

আসিফ নজরুল লিখেছেন, ‘আমি বুঝতে আমিই পারিনি। নতুন সংগঠন করার কয়েক মাসের মাথায় তারা এক অসম্ভবকে সম্ভব করলো। প্রবল প্রতাপশালী আর নির্মম ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটালো। আখতারের সংগঠনের নাহিদ হয়ে উঠলো এই গণঅভ্যুত্থানের প্রধান নেতা। উত্তাল জুলাইয়ে আমার এবং আমার মতো লক্ষ মানুষের নেতা! তারপর নাহিদের সঙ্গে কাজ করলাম নতুন সরকারে। কতোবার যে সে আমাকে বিস্মিত করলো; তার যোগ্যতা, বাকসংযম, ব্যক্তিত্ব আর অকল্পনীয় ম্যাচিউরিটি দিয়ে!’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইন উপদেষ্টা আরও লিখেছেন, ‘নাহিদ থাকে আমার পাশের বাসায়। সে সরকার থেকে পদত্যাগ করার দিন গভীর রাতে তার বাসার সবুজ লনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম অনেকক্ষণ। মায়া বড় বিচিত্র বিষয়!’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘আজ নাহিদ আর আখতার শুরু করছে নতুন যাত্রা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র-তারুণ্যের প্রত্যাশা পুরণে শুরু হলো তাদের নতুন দলের অভিযাত্রা। জাতীয় নাগরিক পার্টির সবার জন্য অনেক দোয়া, শুভকামনা।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের

গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নে দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণসংযোগের সময় দেওয়া বক্তব্যে এই আহ্বান রাখেন তিনি।

শেখ হাসিনার শাসন আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। গুম, খুন, ভিত্তিহীন মামলা, লুটপাট, টাকা পাচার, বাকস্বাধীনতা হরণ ও ভোট চুরিসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি। 

আরো পড়ুন:

জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা

হাসিনা-রেহানাসহ ২২ জনের গ্রেপ্তার-সংক্রান্ত প্রতিবেদন ১২ মে

শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‍“আমাদের নেতাকর্মীদের গুম করা হয়েছে। লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের ঘরে থাকতে দেননি আপনি। আমরা তো কোথাও পালিয়ে যাইনি। আদালতে মিথ্যা মামলা আইনের মাধ্যমে ফেইস (মোকাবিলা) করেছি। উকিল ধরে জামিন নিয়েছি। আপনি (শেখ হাসিনা) পালিয়ে আছেন কেন? আপনিও মামলা লড়েন। আপনি দেশে এসে দাড়ান না দেখি।”

জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা অনেকে মনে করেন শেখ হাসিনা আবারো দেশে ফিরে আসবেন। তিনি তো ১৫ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান একজন বিখ্যাত মানুষ ছিলেন। তার তো দেশ থেকে পালানোর কথা ছিল না। তিনি পালালেন কেন? কারণ তিনি একজন ডাইনি ছিলেন। জনগণের ওপর এমন নির্যাতন করেছেন যে, তিনি পালাতে বাধ্য হয়েছেন। জনগণ যদি সেদিন তাকে পেত, তাহলে ছিঁড়ে খেত।” 

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “হাসিনা দেশে ফিরে রাজনীতি করলে আমাদের কিছু করতে হবে না, জনগণই তাকে দেখে নেবে।” 

আওয়ামী লীগের শাসনামলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন আওয়ামী লীগের মতো অন্যায় না করে; এতে মানুষ ভালোবাসবে না। দলের কোনো নেতাকর্মীরা অন্যায় করলে যেন জেলার নেতারা তাদের শক্ত হাতে দমন করেন; তারা যেন অন্যায়কারীদের পুলিশের হাতে তুলে দেন। তাই অপকর্ম বন্ধ করুন, না হলে আওয়ামী লীগের মতো অবস্থা হবে।” 

ত্রোদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দৃষ্টি রেখে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। মির্জা ফখরুলসহ দলটির শীর্ষ নেতারা সভা-সমাবেশ করছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা, না রাখা নিয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে; সেই সঙ্গে আইনি ঝক্কিও সামনে আসছে।

গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। এ ছাড়া কয়েক শত ফৌজদারি মামলায় তিনি আসামি। অনেক মামলায় তাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। তবে ভারতের আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর কোনো নিশ্চয়তা এখনো তৈরি হয়নি। 

গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ছোট বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সেদেশে উচ্চনিরাপত্তা শৃঙ্খলে বসবাস করছেন বলে আন্তর্জাতিক সাংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়ে থাকে। সেখান থেকে দেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অনলাইনে তার কথোপকথনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে অস্বস্তির কথা ভারতকে জানিয়ে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার। 

ঢাকা/মঈনুদ্দীন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংস্কারের একাল-সেকাল
  • তরুণ সমাজ দেশপ্রেমে উত্তীর্ণ হয়েছে, বাংলাদেশ উচ্চস্থানে উন্নীত হবে : ডিসি
  • শামীম ওসমানের ছেলে অয়নের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  • শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের
  • গণঅভ্যুত্থানের তরুণ নেতৃত্ব ও রাজনীতিতে প্রাণপ্রবাহ
  • জুলাই বিপ্লবী মেয়েরা আজ নিরাপদ বোধ করছে না: ফরহাদ মজহার
  • আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় জড়িত দুজন শনাক্ত  
  • ড. ইউনূস অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেননি, আমাদের হাতে বিপ্লবের দলিল নেই: ফরহাদ মজহার
  • ড. ইউনূস গণঅভ্যুত্থানের ফসল, নেতা নন: ফরহাদ মজহার
  • গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রিজভীর ভাইকে কুপিয়ে জখম, গ্রেপ্তার ৩