মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন সফর করছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলোনস্কি। হোয়াইট হাউজে দুই নেতার বৈঠকের দিকে তাকিয়ে পুরো বিশ্ব, এমন কী গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছে রাশিয়া।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধ বন্ধ করায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ট্রাম্প কি জেলোনস্কির এই সফরে তার সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন? রাশিয়ার ভবিষ্যৎ আগ্রাসন থেকে ইউক্রেনের সুরক্ষার দেওয়ার গ্যারান্টি কি ট্রাম্প দেবেন? এই দুই বড় প্রশ্নের উত্তর দুই নেতার বৈঠক থেকে আসা, না-আসার দিকে নজর রাখছে পুরো বিশ্ব।

জেলোনস্কি এমন এক সময় ওয়াশিংটন সফর করছেন, যার ঠিক আগেই দেশটিতে গেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। ইউক্রেনের পক্ষে জোরালো আওয়াজ তোলা স্টারমারের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক হয়েছে। তবে তারা ইউক্রেনের বিষয়ে কী সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, সে বিষয়ে পরিষ্কার বার্তা পাওয়া যায়নি।

আরো পড়ুন:

তুরস্কে রুশ-মার্কিন বৈঠক, ‘গা জ্বলছে পশ্চিমা এলিটদের’

রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনে নিহত ১৩, আহত ৩০

অবশ্য স্টারমার তার দেশ যুক্তরাজ্যের জন্য সুখবর নিয়ে ফিরছেন বলে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। সেই সুখবর নতুন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে, ট্রাম্পের আগ্রাসী শুল্ক থেকে বেহাই পাওয়ার বার্তা সম্পর্কে। যদিও বাণিজ্য চুক্তির বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করেনি দুই দেশ।

স্টারমারের আগে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতির অন্যতম মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পরিচিত। ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেন নিয়ে তারও কথা হয়েছে। তবে শেষ কথা হবে জেলোনস্কি ও ট্রাম্পের মধ্যে। যেকোনো মূল্যে এই যুদ্ধ বন্ধ করার যে প্রতিশ্রুতি ট্রাম্পের রয়েছে, সে বিষয়ে বৈঠক শেষে কী ঘোষণা আসছে, সেটিই দেখার বিষয়। 

বিবিসি লিখেছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার জেলোনস্কির সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করবেন ট্রাম্প। তারপর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসবেন তারা। যা বলার সেখানেই তারা বলবেন। 
জেলোনস্কির সফরকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে রাশিয়া। ক্রেমলিন বলেছে, বিশ্বের অন্যান্য সরার মতো ক্রিমলিনও দুই নেতার বৈঠকের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছে।

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর পর নির্বাচন না করেই ক্ষমতায় বহাল থাকা নিয়ে জেলোনিস্ককে আক্রমণ করেছিলেন ট্রাম্প। জেলোনস্কিকে ‘স্বৈরশাসক’ হিসেবে বর্ণনা করে এই যুদ্ধে না জড়ানো উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। এ নিয়ে কথা চালাচালির মধ্যে জেলোনস্কির ওয়াশিংটন সফরের মুহূতে সুর নরম করেছেন ট্রাম্প। 

জেলোনস্কি স্বৈরশাসক কি না, বিবিসির এমন প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, “সত্যি কি সেটি বলেছিলাম, আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।” 

স্বৈরশাসক মন্তব্য থেকে সরে এসে একই প্রশ্নের উত্তরে জেলোনস্কিকে ‘খুবই সাহসী নেতা’ হিসেবে বর্ণনা করেন ট্রাম্প। 

এসবের মধ্যে আরো একটি বড় ইস্যু রয়েছে। যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ পুষিয়ে নিতে ইউক্রেন থেকে খনিজ সম্পদ আহোরণ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র, যা ট্রাম্প পরিষ্কার ভাষায় বলে দিয়েছেন। শুক্রবারের বৈঠকে এ বিষয়ে চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আপত্তির জায়গাও রয়েছে জেলোনস্কির। ট্রাম্পের কাছ থেকে ইউক্রেনের সুরক্ষার নিশ্চয়তা না পেলে খনিজ চুক্তি হয় কি না, সেটিও দেখার অপেক্ষা।

ঢাকা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র শ য় ইউক র ন য দ ধ ইউক র ন ইউক র ন র

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ