জাতীয় নাগরিক পার্টির জন্য শুভকামনা জানিয়ে আসিফ নজরুল লিখলেন, ‘বুঝতে আমি-ই পারিনি’
Published: 28th, February 2025 GMT
আত্মপ্রকাশ করা তরুণদের নতুন দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’র জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে আজ শুক্রবার দুপুরের দিকে নতুন এই দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্রের ছবি দিয়ে একটি পোস্ট দেন তিনি। ওই পোস্টের একটি অংশে তিনি লিখেছেন, ‘বুঝতে আমি-ই পারিনি’।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল নিজের ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘২০২৪–এর ভুয়া নির্বাচনের পর খুব মন খারাপ করে থাকতাম। এমন সময় আখতার একদিন আইন বিভাগে এল। বলে কয়ে আমি তাকে বাড়ি থেকে ঢাকায় আনিয়ে মাস্টার্স শেষ করতে রাজি করিয়েছিলাম। কিন্তু এরপরও ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার কোনো লক্ষণ নাই তার মধ্যে।’
ওই সময়ের ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমার গাড়ি থামিয়ে সে সালাম দিল। তারপর বেশ কিছুক্ষণ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে রইল। আমি বিরক্ত হলাম। আরও বিরক্ত হলাম যখন সে বলল, নুর-রাশেদদের দল ত্যাগ করে নতুন সংগঠন করবে!
‘আমি বললাম, আবার নতুন দল! আর কতোবার মার খেতে চাও তুমি! সে মাথা নিচু করে মৃদু হাসতে থাকে। এই অদ্ভূত হাসির কোনো মানে খুঁজে পেলাম না। বেশি কথা না বলে বাসায় চলে এলাম। কয়েক দিন পর ছাত্রলীগের হাতে মার খেয়ে তার রক্তাক্ত ছবি দেখে দুঃখ আর হতাশায় বুক বিদীর্ণ হলো। সে কি বুঝতে পারছে না কিছু হবে না আর এসব করে!
‘বুঝতে আমি-ই পারিনি। নতুন সংগঠন করার কয়েক মাসের মাথায় তারা এক অসম্ভবকে সম্ভব করল। প্রবল প্রতাপশালী আর নির্মম ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটাল। আখতারের সংগঠনের নাহিদ হয়ে উঠল এই গণ–অভ্যুত্থানের প্রধান নেতা। উত্তাল জুলাই-এ আমার এবং আমার মতো লক্ষ মানুষের নেতা!
‘তারপর নাহিদের সাথে কাজ করলাম নতুন সরকারে। কতবার যে সে আমাকে বিস্মিত করল তার যোগ্যতা, বাকসংযম, ব্যক্তিত্ব আর অকল্পনীয় ম্যাচিউরিটি দিয়ে! নাহিদ থাকে আমার পাশের বাসায়। সে সরকার থেকে পদত্যাগ করার দিন গভীর রাতে তার সবুজ লনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম অনেকক্ষণ। মায়া বড় বিচিত্র বিষয়!
‘আজ নাহিদ আর আখতার শুরু করছে নতুন যাত্রা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ছাত্র-তারুণ্যের প্রত্যাশা পূরণে শুরু হলো তাদের নতুন দলের অভিযাত্রা। জাতীয় নাগরিক পার্টির সবার জন্য অনেক দোয়া, শুভকামনা।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।