রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার অভিযান স্থগিত
Published: 4th, March 2025 GMT
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণাত্মক সাইবার অভিযান স্থগিতের রাখার নির্দেশের বিষয়ে পেন্টাগনের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেছেন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা।
ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে মস্কোর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে ওয়াশিংটন। আর এ সময়টায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তাদের সাইবার অভিযান স্থগিত রেখেছে- এই তথ্য সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে আনে দ্য রেকর্ড।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত দুুটি সূত্র বলছে, সংবেদনশীল কূটনৈতিক উদ্যোগের সময় এই ধরনের সাইবার অভিযান বন্ধ থাকা অস্বাভাবিক নয়।
আরো পড়ুন:
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পরিকল্পনা জমা দেবে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য
ট্রাম্পের সঙ্গে ঝড় তুলে লন্ডনে জেলেনস্কি, যুদ্ধের পরিণতি কী
রয়টার্স বলছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন সাইবার অভিযান স্থগিতের বিবরণ জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। তবে এ বিষয়টি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের মস্কোর প্রতি সমঝোতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি আরো স্পষ্ট করেছে, যা ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাদের বিরক্তি বাড়িয়েছে।
সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের নিন্দা করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ রবিবার একটি পোস্টে শুমার বলেন, “পুতিনের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে নিরস্ত্রীকরণ করা ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ভুল। সেরা প্রতিরক্ষা সর্বদা একটি শক্তিশালী আক্রমণ এবং এটি সাইবার নিরাপত্তার জন্যও সত্য।”
সোমবার মার্কিন হাউস আর্মড সার্ভিসেস কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি অ্যাডাম স্মিথ বলেছেন, পেন্টাগনকে কংগ্রেসের কাছে একটি ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত, যার মধ্যে আদেশের পরিধি এবং মার্কিন মিত্রদের ওপর প্রত্যাশিত প্রভাবের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
স্মিথ আরো জিজ্ঞাসা করেন, “আদেশের আগে কোনো ঝুঁকি মূল্যায়ন করা হয়েছিল কিনা অথবা আদেশের ফলে সাইবার অভিযান এখনও বন্ধ রয়েছে কিনা।”
এদিকে, পেন্টাগন এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, “কার্যক্ষম নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে, আমরা সাইবার গোয়েন্দা, পরিকল্পনা বা অভিযান সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করি না বা আলোচনা করি না।”
ট্রাম্প গত সপ্তাহে ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের সময় প্রকাশ্যে বাগবিতণ্ডায় জড়ান। তিনি তিন বছর ধরে রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে ইউক্রেনকে দেওয়া মার্কিন সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন।
ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত অবসানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসার পর ট্রাম্প দ্রুত ইউক্রেনের বিষয়ে মস্কোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। ট্রাম্প তার অন্যান্য পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই ইউক্রেন ইস্যুতে মার্কিন নীতি পরিবর্তন করেছেন।
সোমবার, জেলেনস্কির সাম্প্রতিক মন্তব্যর কড়া সমালোচনা করেন ট্রাম্প। রবিবার এপিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেছিলেন, “আপাতত নিকট ভবিষ্যতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।”
জেলেনস্কির এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সোমবার ট্রাম্প তার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, “জেলেনস্কি এ পর্যন্ত যত বিবৃতি দিয়েছেন, তার মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে জঘন্য এবং যুক্তরাষ্ট্র আর এসব সহ্য করবে না।”
ট্রাম্প আরো লেখেন, “আমি আগেই বলেছিলাম, যতদিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকবে, ততদিন পর্যন্ত এই লোকটি ইউক্রেনে শান্তি চাইবে না।”
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার প্রধান উপদেষ্টার
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আজ বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য (এমইপি) মুনির সাতোরির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিনিধিদলকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করেছি। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ফেব্রুয়ারির শুরুতে, রমজানের ঠিক আগে।’ তিনি উল্লেখ করেন, জনসাধারণ, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে নির্বাচনী উৎসাহ বাড়ছে। কারণ, দীর্ঘদিন পর কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দশকের বেশি সময় পর ছাত্র সংসদ নির্বাচন আবার শুরু হয়েছে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন হবে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর।’ তিনি বলেন, কিছু শক্তি এখনো নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে, তবে অন্তর্বর্তী সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, তরুণ ভোটাররা এবার রেকর্ড সংখ্যায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। কারণ, ১৫ বছরের বেশি সময় পর অনেকেই প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন। তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য এক নতুন সূচনা বয়ে আনবে। এটি আমাদের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে—জাতির জন্য এক নতুন যাত্রা।’
ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা ও ইউরোপীয় আইনপ্রণেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অব্যাহত সমর্থন ও চলমান রোহিঙ্গা মানবিক সংকট নিয়ে মতবিনিময় করেন।
আগামী নির্বাচন বাংলাদেশে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন ইউরোপীয় আইনপ্রণেতারা। এক আইনপ্রণেতা প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সরকারের গত ১৪ মাসের ‘অসাধারণ’ প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
এক ডাচ আইনপ্রণেতা মন্তব্য করেন, বাংলাদেশ কতিপয় দেশের মধ্যে অন্যতম, যেখানে ‘ঘটনাগুলো সঠিক পথে এগোচ্ছে।’
প্রধান উপদেষ্টা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য বাড়তি তহবিল প্রদানের আহ্বান জানান।
বিশেষ করে সম্প্রতি অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্কুলগুলো আবার চালু করতে সহায়তা প্রদানের অনুরোধ জানান প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ শ্রম সংস্কারগুলো তুলে ধরে বলেন, এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশ–ইইউ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।