যতদিন খুনি হাসিনার ফাঁসি না দেখছি, ততদিন যেন কেউ নির্বাচনের কথা না বলে: সারজিস আলম
Published: 4th, March 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘যতদিন না পর্যন্ত খুনি হাসিনার ফাঁসি দেখছি, ততদিন যেন কেউ ভুলক্রমেও নির্বাচনের কথা না বলে।’
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থানে জুলাই শহীদদের কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সারজিস বলেন, ‘খুনি হাসিনা লাশ কই ফেলেছে, তা জানা যায়নি। মায়েরা লাশ খুঁজতে ছুটে বেড়াচ্ছেন। খুনির বিচার না হওয়া পর্যন্ত কীভাবে এই বাংলাদেশে অন্যকিছু চিন্তা করব।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে যে দমন–পীড়ন হয়েছে, তার দ্রুত বিচার চাই। ন্যায়বিচারের মধ্য দিয়ে যারা আত্মত্যাগ করেছেন এবং আহত হয়েছেন, তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও দূর করা সম্ভব। এই বিচার যেন নিদর্শন হয়ে থাকে, আর যেন কোনো ফ্যাসিজম গড়ে না ওঠে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান ও প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণে সহায়তা করবে। জাতীয় নির্বাচনে গণপরিষদ নির্বাচন ও সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে হতে পারে। এর মাধ্যমেই নতুন কাঠামো এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’
মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘সরকার ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর এসেছে। তাদের মনে রাখতে হবে বিচার নিশ্চিত করতে না পারলে পুরো প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হবে। দ্রুততম সময়ে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষভাবে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
এর আগে সকাল সাড়ে আটটার দিকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ত য় ন গর ক প র ট এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে মানবিক করিডরের সিদ্ধান্ত নিতে হতো: নাহিদ ইসলাম
মানবিক করিডরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন ছিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
আজ বুধবার বিকেলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় শেষে এক প্রশ্নের জবাবে এনসিপির নাহিদ এ কথা বলেন। রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুই দলের বৈঠক হয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক বলেন, এই সরকার একটি ঐকমত্যের ভিত্তিতেই তৈরি হয়েছে এবং পরিচালিত হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি একটা সমর্থন আছে। ফলে জাতীয় সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন। এই করিডর বা রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি কীভাবে থাকবে, তা তারা (এনসিপি) এখনো স্পষ্ট নয়। তবে মানবিক করিডরের বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দল যে বক্তব্য–বিবৃতি দিচ্ছে, তার সঙ্গে তারা একমত।
জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশা এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যের জায়গাটা ধরে রাখতে হবে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, সে উদ্দেশ্যই মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসা। ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে বিচার, সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচনের এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন নিম্ন ও উচ্চ উভয় কক্ষেই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের কথা বলছে। কিন্তু এনসিপি উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের কথা বলেছে। ইসলামী আন্দোলন নিজেদের যুক্তি উপস্থাপন করেছে। আমরা বলেছি, আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করব। সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের জন্য কেন গণপরিষদ নির্বাচন প্রয়োজন, আমরা সে বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছি। উনারা বলেছেন, বিষয়টি ভেবে দেখবেন।’
বৈঠকে দলগতভাবে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার চলার সময় তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, নিবন্ধন স্থগিত করাসহ বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বেশির ভাগ বিষয়ে দুই দল একমত।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সারা দেশে চাঁদাবাজি, লুটপাট এবং জনগণের অধিকার হরণের মতো কর্মকাণ্ড বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ নতুন বাংলাদেশের জন্য, রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্যই জুলাই অভ্যুত্থানে রাজপথে নেমে এসেছিল। যদি পুরোনো বন্দোবস্তের জন্য কেউ চেষ্টা করে, জনগণ তা মেনে নেবে না।
সভায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে তিনটি বিষয়ে ঐকমত্য হয় জাতীয় নাগরিক পার্টির।
বিষয়গুলো হলো দ্রুত স্থানীয় নির্বাচনের আয়োজন; গণহত্যা ও ফ্যাসিজমের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার করা এবং দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার ও বিচার চলাকালে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রাখা এবং সর্বশেষ মৌলিক সংস্কার শেষ করে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা।
মতবিনিময় সভায় এনসিপির পক্ষ থেকে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, আতিক মুজাহিদ, সরোয়ার তুষার, আশরাফ উদ্দিন মাহদী, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক সাদ্দাম হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য আল আমীন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, আশরাফুল আলম প্রমুখ।