একজন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার জন্য সরব হয়ে উঠেছেন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার সব শিক্ষক। তারা বলছেন সৎ, দক্ষ ও কর্মঠ এই শিক্ষা কর্মকর্তার সময় এখানকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্নীতি কমে গেছে।

প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সোলেমান মিয়ার বদলি ঠেকাতে উপজেলার প্রায় সব শিক্ষক এরই মধ্যে আবেদন করেছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে। ওই উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বদলি রহিত করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে সোমবার আবেদন করেছেন তারা।

শিক্ষকদের আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা থেকে দিরাই উপজেলায় বদলি করা হয়েছে সোলায়মান মিয়াকে। এখানে যোগদানের একের পর এক ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। এক বছর তিন মাসের মাথায় তাঁর বদলিতে শিক্ষকরা ব্যথিত। তারা বলছেন, অবহেলিত হাওরের উপজেলা দিরাইয়ের প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য তাঁর বদলি রহিত করা জরুরি। 

দিরাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি দিবাকর দাস জানান, ২৬ বছর হয় শিক্ষকতা করছেন। এতো সৎ, দক্ষ ও কর্মঠ কর্মকর্তা এর আগে পাননি। শিক্ষকদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করেও যে কাজ আদায় করা যায়, সেটি তাঁর সময়কালে দিরাইয়ের প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার দেখতে পেয়েছে। শিক্ষাবান্ধব এই মানুষটি অন্যায় তদবির শোনেন না বলেই হয়তো কেউ ক্ষমতা দেখিয়ে তাঁকে সরিয়ে দিতে চাইছে। উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকার পরেও তাঁকে নেত্রকোনার খালিয়াজুড়িতে বদলি করা হয়েছে।

উপজেলার আরেক শিক্ষক নেতা জসিম উদ্দিন জানান, শিক্ষকদের মধ্যে মতভিন্নতা আছে। শিক্ষা কর্মকর্তা সোলেমান মিয়ার কারণে একদিনে ৪৮৩ জন শিক্ষক একসঙ্গে জড়ো হয়ে তাঁর বদলি ঠেকাতে আবেদন করেছেন। এর অর্থ তিনি সবাইকে এক পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলেন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহন লাল দাস জানান, সৎ কর্মকর্তা অনেকেই আছেন। তবে সোলেমান মিয়ার মতো চৌকস ও বিনয়ী কর্মকর্তা কম। তিনি যেখানেই কাজ করেছেন সুনামের সঙ্গে করেছেন। বদলির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছেন সোলেমান। সেটি গ্রহণ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত জানা যাবে শিগগিরই।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ কর মকর ত র ই উপজ ল উপজ ল র র বদল

এছাড়াও পড়ুন:

মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিল র‍্যাব, চায় সাইবার ইউনিট

অপরাধের ধরন বদলে যাচ্ছে। অভিনব কৌশলে সক্রিয় সাইবার অপরাধীরা। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলা করা নতুন চ্যালেঞ্জ। এ জন্য স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট চেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার কর্মপরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। সেখানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), র‍্যাবসহ একাধিক ইউনিট একুশ শতকের জটিল অপরাধ ও তা নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির বিষয়টি সামনে আনে। গতকাল পুলিশের যে ইউনিটগুলো পরিকল্পনা তুলে ধরেছে, তা হলো হাইওয়ে পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), নৌ পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), শিল্প পুলিশ, র‍্যাব, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট, রেলওয়ে পুলিশ ও সিআইডি।

কীভাবে প্রত্যন্ত এলাকার ভুক্তভোগী র‍্যাবের সহযোগিতা পেতে পারেন, সে বিষয়টি উপস্থাপন করেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি দ্রুত গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থার ওপর জোর দেন। র‍্যাবের জন্য আলাদা একটি সাইবার ইউনিটের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। র‍্যাব জনবান্ধব হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিজি বলেন, ‘কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও মানবাধিকার বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ র‌্যাব। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে তদন্ত সেলকে শক্তিশালী করা হয়েছে। একটি মানবাধিকার সেলও গঠন করা হয়েছে।’
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত সূত্রের মতে, র‍্যাব ডিজির উপস্থাপনায় মূলত বাহিনীর অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিআইডি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়। সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি (ভারপ্রাপ্ত) গাজী জসীম অনুষ্ঠানে জানান, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী মামলার অনুসন্ধানে সিআইডি বিশেষ টিম গঠন করেছে। সাবেক মন্ত্রী, প্রভাবশালীদের সন্দেহজনক সম্পদের উৎস ও প্রকৃতি নিয়ে নিবিড়ভাবে চলছে তদন্ত। এস আলম, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, নাবিল, ইউনিক, সিকদার গ্রুপসহ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এ সময় প্রায় ৫ হাজার ৮০০ শতাংশ জমি ও হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ শনাক্ত করা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের একটি মামলায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

সিআইডির উপস্থাপনায় আরও বলা হয়, ফরেনসিক শাখা দিন দিন অপরাধ বিশ্লেষণের নির্ভরযোগ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। জনবল, সরঞ্জাম এবং অর্থের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি সিআইডিতে আছে কাঠামোগত ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ। কোনো জেলা ইউনিটে একটিও অপারেশনাল যানবাহন নেই। এ ছাড়া অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অনিয়মিত বদলি আতঙ্ক রয়েছে। সাইবার পুলিশ সেন্টারে রয়েছে সরঞ্জামের অভাব। ফরেনসিক ল্যাবে সফটওয়্যারের জন্য বাজেট-স্বল্পতার কথা তুলে ধরেন তারা।

হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়। মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে মহাসড়কের সিসিটিভি থেকে হাইওয়ে পুলিশ ডিজিটাল অটো ফাইন সিস্টেম, ট্রাফিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, ক্লোন নাম্বারপ্লেট শনাক্ত, হাইস্পিড ডিটেকশন করে থাকে।

এর আগে মঙ্গলবার পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পক্ষ থেকে তাদের কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারায় তালিকাভুক্ত ব্যক্তিকে ডিটেনশনে (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনা বিচারে আটক রাখা) নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সে জন্য তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ডিটেনশনে নেওয়া উচিত। সরকারের অনুমতি পেলে এসবির পক্ষ থেকে তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিস্তারিত জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। ডিটেনশনে নেওয়ার জন্য যাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তাদের কেউ কেউ পেশাদার অপরাধী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ