যুক্তরাষ্ট্র অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে সামরিক বাহিনীর বিমান ব্যবহারের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে । বুধবার ব্যয় সংকট এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক জটিলতার কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।

সর্বশেষ গত ১ মার্চ মার্কিন সামরিক বাহিনী সি-১৭ এবং সি-১৩০ উড়োজাহাজ ব্যবহার করে অভিবাসীদের ফেরত পাঠায়। তবে পেন্টাগনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আপাতত এ ধরনের কোনো নতুন ফ্লাইটের পরিকল্পনা নেই এবং ভবিষ্যতে এটি স্থায়ীভাবে বন্ধের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের পর নথিবিহীন অভিবাসীদের গ্রেপ্তার ও ফেরত পাঠানোর অভিযান শুরু হয়। এ পর্যন্ত ৩০টি সামরিক ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে, যার মাধ্যমে ভারত, গুয়েতেমালা, ইকুয়েডর, পেরু, হন্ডুরাস, পানামাসহ বিভিন্ন দেশে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।

তবে সামরিক বিমানে প্রত্যাবাসন অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ভারতে পাঠানো প্রতিটি ফ্লাইটে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ ডলার এবং মাথাপিছু ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ডলার। সি-১৭ উড়োজাহাজ প্রতি ঘণ্টায় ২৮,৫০০ ডলার এবং ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) বিমানে প্রতি ঘণ্টায় ৮,৫০০ ডলার ব্যয় হয়।

এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যে হওয়া একটি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, মার্কিন সামরিক উড়োজাহাজ মেক্সিকোর আকাশসীমায় প্রবেশ করতে পারে না। ফলে অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে বিকল্প পথ ব্যবহার করতে হচ্ছে, যা ব্যয় এবং সময় দুটোই বাড়াচ্ছে।

এছাড়া লাতিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশ তাদের বিমানবন্দরে মার্কিন সামরিক বিমানের অবতরণ নিষিদ্ধ করেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

এসব কারণ বিবেচনা করে সামরিক বাহিনীর বিমান ব্যবহার করে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর কার্যক্রম স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন। এটি স্থায়ীভাবে বন্ধের সম্ভাবনাও রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ