সাড়া ফেলেছে প্রদীপ বিশ্বাসের কচুরিপানা কাটার যন্ত্র
Published: 6th, March 2025 GMT
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার প্রদীপ বিশ্বাস দেশে প্রথম শেওলা ও কচুরিপানা কাটার যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন। যে যন্ত্র ১০০ জন শ্রমিকের ১ মাসের কাজ করতে পারে মাত্র একদিনে। ইন্টারনেটে এ যন্ত্র দিয়ে কচুরিপানা কাটার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
ডিঙ্গি নৌকার ওপর বিশেষ কায়দায় ইঞ্জিনসহ অন্যান্য উপকরণ বসিয়ে কচুরিপানা কাটার মেশিন আবিষ্কার করা হয়েছে। মেশিন চলছে আর কচুরিপানা কেটে দুই পাশে পড়ছে। ফাঁকা হয়ে যাওয়া কচুরিপনাভর্তি জলাশয়ের মধ্যে দিয়ে ছুটে চলছে ডিঙ্গি নৌকা।
প্রদীপ বিশ্বাসের তৈরিকৃত যন্ত্র গোপালগঞ্জ পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড) কিনে নিয়ে গেছে। দেশের নানা প্রান্ত হতে যোগাযোগ করে মেশিন ভাড়া, কেনা বা তৈরির অর্ডার পাচ্ছেন তিনি।
প্রদীপ বিশ্বাস যশোরের মনিরামপুর উপজেলার কুচলিয়া গ্রামের মৃত.
সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালিন বাবা প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাসের হাত ধরে মেকানিক পেশায় আসেন প্রদীপ বিশ্বাস। যশোর সদর হতে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সুন্দলী বাজারে গেলে দেখা যায়, নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘কুচলিয়া পিকেবি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্ক’-এ বসে একমনে কাজ করছেন তিনি।
কচুরিপানা কাটা যন্ত্র বিষয়ে জানতে চাইলে প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা ভবদহ জলাবদ্ধ অঞ্চলের মানুষ। বিল বছরের ৯ মাস পানির নিচে থাকে। ফলে জলাশয় কচুরিপানায় ভর্তি থাকে। ভবদহের প্রভাবে এ অঞলের নদী-খালে পলি জমায় নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় কচুরিপানা জন্মায়। এতে করে খাল-বিল ও নদীতে নামা কঠিন হয়ে পড়ে। মূলত এই কচুরিপানা থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করার চিন্তায় আমার এ মেশিন তৈরিতে নেমে পড়া।’’
তিনি জানান, দুই বছর আগে ২২ হর্স-পাওয়ারের ইঞ্জিন, এঙ্গেল, পাত, কাঠ, চেইন, পেনিয়াম, গিয়ারবক্স, প্লেনসিড ও ১৯টি বিচালি কাটা ছুরি দিয়ে যন্ত্র বানালেও ঘন কচুরিপানা কাটতে গেলে মেশিন বন্ধ হয়ে যেত। এরপর ডিঙ্গি নৌকা চালাতে ১১ হর্সপাওয়ার ও কচুরিপানা কাটতে ২২ হর্সপাওয়ারের দুটি ইঞ্জিন, ৯টি ছুরি পাতের মধ্যে বিশেষ কায়দায় সেট করে যন্ত্রটি বানানো হয়। প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যয় করে মাসখানেক কাজ করে তৈরিকৃত যন্ত্র কচুরিপানা কাটার উপযোগী হয়।
তার যন্ত্র দিয়ে কুচি কুচি করে কাটা কচুরিপানা জৈব সার তৈরি সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। প্রদীপ বিশ্বাসের একমাত্র সন্তান জনতা ব্যাংকে কর্মরত রণজিত বিশ্বাস জানান, সরকারি-বেসরকারি পর্যায় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ ধরনের উন্নতমানের যন্ত্র তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে তৈরি করা সম্ভব।
ঢাকা/বকুল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ভারী বর্ষণে ভবদহের গ্রামে গ্রামে জলাবদ্ধতা
যশোরের মনিরামপুর, অভয়নগর, কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল গঠিত। এ অঞ্চলের অনেক গ্রাম বছরে চার মাস জলাবদ্ধ থাকে। সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণে যশোরের মনিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার ৩০টির বেশি গ্রামে পানি ঢুকেছে। এসব গ্রামের বেশিরভাগ ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। নদী দিয়ে ঠিকমতো পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
ভবদহ এলাকার পানি নিষ্কাশন হয় মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদ-নদী দিয়ে। পলি পড়ে নদীগুলো নাব্য হারিয়েছে। ফলে, ভারী বৃষ্টির পানি সহজে ও দ্রুত নিষ্কাশন হচ্ছে না।
যশোরের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, যশোরে জুন মাসে স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাত ধরা হয় ২৯৮ দশমিক ৭ মিলিমিটার এবং জুলাই মাসে ৩০৪ দশমিক ১০ মিলিমিটার। গত জুন মাসে যশোরে ২৯৯ মিলিমিটার এবং চলতি জুলাই মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত ৫১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে, ভবদহ অঞ্চলের ৫২টি বিল প্লাবিত হয়েছে। বিল উপচে পানি ঢুকতে শুরু করেছে আশপাশের গ্রামগুলোতে।
সুন্দলী গ্রামের তন্ময় বিশ্বাস বলেছেন, “উঠোনে প্রায় হাঁটুজল। আরেকটু বাড়লে ঘরে জল উঠে যাবে। ঘরে জল উঠলে রাস্তায় ওঠা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।”
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী বলেছেন, “ভবদহের ২১ ভেন্ট স্লুইসগেটের মধ্যে মাত্র ছয়টি গেট খোলা হয়েছে। সবগুলো গেট খুলে দিলে আরো বেশি জল নামত। কিন্তু, পানি উন্নয়ন বোর্ড সব গেট খুলছে না। এলাকার বিলে টাইডল রিভার ম্যানেজমেন্ট (জোয়ারাধার) চালু না করলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি নেই।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেছেন, “নদীতে জোয়ারের সময় ভবদহ স্লুইসগেটের ২১ ভেন্টের ওপর চারটি বড় ও ১৫টি ছোট বৈদ্যুতিক যন্ত্র দিয়ে পানি সেচে বের করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, ভাটির সময় ছয়টি গেট খুলে দেওয়া হচ্ছে। গেটগুলো দিয়ে প্রচুর পানি বের হচ্ছে। এতে এলাকার পানি দ্রুত সরে যাবে।”
তিনি বলেন, “ভবদহ এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য সেনাবাহিনী আগামী মাসে ছয়টি নদীর ৮১ দশমিক ৫ কিলোমিটার খননে কাজ শুরু করবে। এছাড়া, আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। দুই-এক মাসের মধ্যে আমডাঙ্গা খাল সংস্কারে কাজ শুরু হবে।”
ঢাকা/প্রিয়ব্রত/রফিক