বাগেরহাটের রামপালে বিএনপির ওয়ার্ড-ইউনিয়ন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৭ জন আহত হয়েছেন। 

বৃহস্পতিবার সকালে ঝনঝনিয়া চেয়ারম্যান মোড় এলাকায় রামপাল উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান তুহিন ও সদস্য সচিব কাজী জাহিদুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় ক্যাডাররাও অংশগ্রহণ করেছে বলে দাবি বিএনপি নেতাদের।

আহতরা হলেন, উপজেলার ঝনঝনিয়া গ্রামের আল আমিন, আজমল শেখ, শহিদ ব্যাপারী, আবুল কালাম, বাবুল শেখ, শামীম শেখ, আহম্মদ আলী, ইসমাইল শেখ, আশরাফ আলী, তাহিদুল ইসলাম, হোসাইন শেখ, তারেক শেখ, ফারুক হোসেন, আবুল কালাম, শহিদুল ইসলাম, মাহিদ শেখ ও নজরুল ইসলাম। আহতরা রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় শহিদুল ইসলাম, মাহিদসহ ৮ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রামপাল উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব কাজী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান তুহিন আমাদের লোকজনের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। এর জেরে তিনি ও তার লোকজন আমাদের নেতাকর্মীদের হুমকিও দিয়েছেন। সকালে তার লোক আশা, মনা, মিশকাত ও ছাত্রদল নেতা আবু তালেব চেয়ারম্যানের মোড় এলাকায় আমাদের লোকজনের উপর হামলা করে। এতে আমাদের অন্তত ১৬ জন নেতাকর্মী আহত হন। হামলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের ক্যাডাররাও অংশগ্রহণ করেছেন। পরে আহতদের স্বজনরা ছাত্রদল নেতা আবু তালেবের বাবা নজরুল ইসলামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করেছে বলে শুনেছি। ছাত্রদল নেতা আবু তালেব এখনও আমাকে মারধরের হুমকি দিচ্ছে। পুলিশকে পুরো বিষয় জানানো হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।   

সংঘর্ষের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ হাফিজুর রহমান তুহিন বলেন, ছাত্রদল নেতা আবু তালেবের বাবাকে মারধর করেছে একটি পক্ষ। এই নিয়ে মূলত ঝামেলা তৈরি হয়েছে। রামপাল উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হালিম পাটোয়ারি ও সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলামের লোকজন এই মারধর করেছে। আমি পুলিশকে জানিয়েছি এবং নেতাকর্মীদের শান্ত থাকতে বলেছি।

রামপাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

সেলিম রেজার বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। ফের সংঘর্ষ এড়াতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছ। মামলা বা অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপির নিজ দলের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন শুরু হলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়। কমিটি গঠন নিয়ে গেল তিন মাসে বিএনপির নিজ দলের নেতাকর্মীদের মাঝে সংঘর্ষে অন্তত ২০০ জন আহত এবং ২ জন নিহত হয়েছেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ স ঘর ষ ছ ত রদল ন ত হ দ ল ইসল ম ন ত কর ম র ল কজন ব এনপ র আম দ র স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।

মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা  মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?

তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।

সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি  যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?

সরকারের পক্ষ থেকে  রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।

দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।

এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন,  সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।

এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!

এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ