চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত এই পরীক্ষা হয়। এই পরীক্ষায় গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ও  ফরহাদ হোসেনকে নিয়েও প্রশ্ন এসেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের বিভাগ নিয়ে গঠন করা হয়েছে বি ইউনিট। এতে সাধারণ আসন রয়েছে ৮৯৬টি। এই আসনের  বিপরীতে পরীক্ষার্থী ছিলেন ৭২ হাজার ১৭১ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল ২১ হাজার ৭৭৯ জন। তবে উপস্থিত ছিলেন ১৯ হাজার ২৮১ জন। আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন ১৬ হাজার ৪৪ জন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের বিভিন্ন কেন্দ্রে কতজন পরীক্ষা দিয়েছেন তা গতকাল বিকেল পর্যন্ত জানা যায়নি।

প্রতিবারের মতো এবারও ভর্তি পরীক্ষা বহুনির্বাচনী পদ্ধতিতে হয়েছে। ১০০ নম্বরের এই পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজিতে আর সাধারণ জ্ঞান তিনটি অংশে প্রশ্ন এসেছে। প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সাধারণ জ্ঞানের একটি প্রশ্নে বজানতে চাওয়া হয়েছে  ‘জুলাই বিপ্লব ২০২৪–এর শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ও ফরহাদ হোসেন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন?’ এর চারটি অপশনের মধ্যে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

আবার এতে কোটা আন্দোলন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়েও প্রশ্ন এসেছে। একটি প্রশ্নে সরকারি চাকরির নিয়োগে কোটার নতুন প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ জানতে চাওয়া হয়েছে। এতে অপশনে ছিল  ২০ জুলাই, ২৩ জুলাই, ২৪ জুলাই ও ২৫ জুলাই। আরেকটি ড.

মুহাম্মদ ইউনুস কত তারিখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়েছেন তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আবার সিরিয়ার ক্ষমতা দখলকারী সংগঠনের নাম আর হামাসের প্রতিষ্ঠাতার নাম নিয়েও প্রশ্ন এসেছে।

বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. ইকবাল শাহীন খান প্রথম আলোকে বলেন,‘পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী বুধবার থেকে উত্তরপত্র স্ক্যানিং শুরু হবে। পরে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।’

উল্লেখ্য গত ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে চট্টগ্রাম নগরে গুলিবিদ্ধ হন ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী হৃদয় তরুয়া। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়। অন্যদিকে ৪ আগস্ট সরকার পতনের আন্দোলনে নিহত হন একই বিভাগের শিক্ষার্থী

ফরহাদ হোসেন। হৃদয় ওই বিভাগের তৃতীয় আর ফরহাদ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পরে তাঁদের স্মৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি স্থাপনার নামকরণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় কলা অনুষদ ভবনের পূর্ব নাম আবু ইউসুফ ভবন বদলে শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া রাখা হয়েছে। আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে শহীদ ফরহাদ হোসেন রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফরহ দ হ স ন পর ক ষ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের

আসাম রাজ্যের পর গোটা ভারত থেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশইন) হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রমাণের অভাবে আবার তাঁদের অনেককে ফিরিয়েও আনতে হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই সংবাদমাধ্যম।

দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ চারজনই আবার মুসলমান।

মুম্বাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। কোনো রকম যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছ থেকে ওই তিন নাগরিককে ফেরত নিয়ে বিএসএফ তাঁদের কোচবিহার জেলার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হেফাজতে নেওয়ার পাঁচ দিন পর তাঁদের উদ্ধার করা হলো বলে জানানো হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই দিন ধরে তাঁরা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মুঠোফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাঁদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশও বিষয়টি বিএসএএফকে জানায়।

হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্থানীয় তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তাঁরা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভালো লাগছে।’

সূত্রের খবর, বাংলাদেশি সন্দেহে চারজনকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ১০ জুন বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁদের মুম্বাই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওই শ্রমিকদের টাকা, মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন দুই বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সকালে তাঁর স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারপরই তাঁদের ঘরে ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়।

হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এ দেশেরই নাগরিক। তাঁর বৈধ নথি ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র রয়েছে।

বিধায়ক নিয়ামত শেখ আরও বলেন, ‘তাঁর মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। গতকাল বিকেলে তাঁরা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ঘরে ফিরবেন।’

এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে গতকাল জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের কাগজপত্র রোববার বিএসএফের হাতে তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। এরপরে বিএসএফ যাবতীয় কাগজপত্র রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাইয়ের পরে তা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে তুলে দেয়।

এরপর বিএসএফ সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মুর্শিদাবাদ ও বর্তমানের জেলা পুলিশের একটি দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের নিজে নিজে জেলায় ফেরানো হবে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল।

বাঙালি বলে হেনস্তা পশ্চিমবঙ্গে

তবে শুধু দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকই নন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেকেই সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অন্যভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।

দিল্লির এক অধ্যাপিকা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে চারবার দক্ষিণ কলকাতার প্রধান পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর ২০০৭ সালের পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি।

এই অধ্যাপিকা বলেন, ‘আমাকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের যাঁদের প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদেরও সহজে পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ