কিলিয়ান এমবাপ্পে ও ভিনিসিয়াস জুনিয়রের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে রায়ো ভায়োকানোর বিপক্ষে ২-১ গোলের জয় তুলে নিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। যদিও পুরো ম্যাচে ভায়োকানো দারুণ লড়াই করেছে, তবে শেষ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছেড়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল।

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে লা লিগার ম্যাচে প্রথমার্ধেই রিয়ালের হয়ে জাল কাঁপান এমবাপ্পে ও ভিনিসিয়াস। ভায়োকানোর একমাত্র গোলটি আসে পেদ্রো দিয়াসের পা থেকে। এই জয়ের মাধ্যমে ২৭ ম্যাচে ৫৭ পয়েন্ট সংগ্রহ করে পয়েন্ট তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে রিয়াল মাদ্রিদ। তবে এক ম্যাচ কম খেলে সমান পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে বার্সেলোনা। অন্যদিকে, ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে ভায়োকানো।

ম্যাচের শুরুতে রিয়াল বল দখলে এগিয়ে থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে পাল্টে যায় চিত্র। আক্রমণে ধার বাড়িয়ে দেয় ভায়োকানো এবং গোলে শট নেওয়ার দিক থেকেও তারা ছিল এগিয়ে। তবে চার মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা।

৩০তম মিনিটে ডি-বক্সে ঢুকে দুর্দান্ত শটে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন এমবাপ্পে। এরপর লুকা মদ্রিচের পাস থেকে বল পেয়ে একক নৈপুণ্যে দ্বিতীয় গোলটি করেন ভিনিসিয়াস। ডি-বক্সে প্রতিপক্ষকে ফাঁকি দিয়ে নিচু শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই ব্রাজিলিয়ান তারকা।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে দুর্দান্ত এক গোল করে ব্যবধান কমান পেদ্রো দিয়াস। তার বুলেট গতির শট ক্রসবারে লেগে গোললাইনের ভেতর ঢুকে পড়ে, পরে ভিএআরের সাহায্যে গোল নিশ্চিত করেন রেফারি।

এর আগে দিনের অন্য ম্যাচে শীর্ষে ওঠার সুযোগ হারায় অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। গেটাফের মাঠে হেরে গিয়ে তারা ২৭ ম্যাচে ৫৬ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে নেমে গেছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এমব প প

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ

বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।

এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্‌ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।

কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ