নাটোরে সাংবাদিকদের ওপর বরখাস্ত এসপির চড়াও হওয়ার ঘটনায় থানায় অভিযোগ
Published: 12th, March 2025 GMT
বরখাস্ত পুলিশ সুপার (এসপি) ফজলুল হকের (৪৫) বিরুদ্ধে পেশাগত কাজে বাধা প্রদান, মারপিট ও হুমকির অভিযোগে নাটোর সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নাটোর আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এ অভিযোগ করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। ওই সাংবাদিকের নাম কাউছার হাবীব। তিনি ভয়েস অব এশিয়া ও দৈনিক প্রান্তজনের নাটোর প্রতিনিধি। অভিযুক্ত ফজলুল হক ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত (বরখাস্ত)।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, নিজের স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলায় বরখাস্ত এসপি ফজলুল হক মঙ্গলবার দুপুরে নাটোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তাঁর জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন এবং তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বেলা দুইটার দিকে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা তাঁকে কারাগারে নেওয়ার জন্য আদালতের বারান্দা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় অভিযোগকারীসহ অন্য সাংবাদিকেরা তাঁর ছবি ও ভিডিও ধারণ করছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে যান এবং ছবি তুলতে বাধা দেন। তিনি সাংবাদিকদের ও তাঁদের ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির ওপর কিলঘুষি মারতে থাকেন। চিৎকার করে সাংবাদিকদের গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন তিনি। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাসদস্যরা এসে তাঁকে কারাগারে নিয়ে যান।
আরও পড়ুননাটোরে আদালতে ছবি তোলায় সাংবাদিকের ওপর হামলা বরখাস্ত পুলিশ সুপারের১৯ ঘণ্টা আগেঅভিযোগকারী কাউছার হাবীব বলেন, গভীর রাতে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে তিনি অভিযোগটি জমা দিয়েছেন।
নাটোর সদর থানার ওসি বলেন, সাংবাদিকের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।