“ওসিকে বলেন আসতে, আমি মনজিল ভাইয়ের শ্যালক; আমি ইউনিয়ন ছাত্রদলের প্রেসিডেন্ট-” এই দম্ভের কারণে গ্রেপ্তার হওয়ার পর দলীয় পদ-পদবিও হারালেন তিনি।

ইউনিয়ন পর্যায়ের এই ছাত্রদল নেতার নাম শাওন কাবী। তিনি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৬ নম্বর রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি।

বুধবার (১২ মার্চ) বিকালে শাওনা কাবীকে বহিষ্কারের তথ্য দেন চাঁদপুর জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল। ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সাংগঠনিক পদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে তাকে।

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে ‘ধর্ষণ’ মামলার আসামি গ্রেপ্তার

মেঘনার তীরে মা-মেয়ের লাশ, ৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

শাওন কাবীর মুখে উচ্চারিত মনজিল ভাই ফরিদগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক।

তদন্তে যাওয়া ফরিদগঞ্জ থানার এসআই খোকন চন্দ্র দাশ তাকে থানায় যেতে বলায় উল্টো তাকে হুমকি-ধমিক দেন শাওন কাবী। দাপট দেখাতে গিয়ে বলেন, ওসিকে বলেন এখানে আসতে। তারপর তিনি তার রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরে এসআই খোকন চন্দ্র দাশকে লাঞ্ছিত করেন। মঙ্গলবারের এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। 

ভিডিওতে দেখা যায়, শাওন কাবীকে এসআই খোকন কিছু জিজ্ঞাসা করছেন। এতে শাওন কাবী দাম্ভিকতার সঙ্গে সেই এসআইকে বলেন, “আমি যাব না; আপনার ওসি স্যাররে বলেন, এখানে আসতে। আমি মনজিল ভাইয়ের শ্যালক, আমি ইউনিয়ন ছাত্র দলের প্রেসিডেন্ট।”

এসময় তিনি সবার উপস্থিতিতেই ওই এসআইকে বারবার ধমক দিতে থাকেন এবং দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার (১১ মার্চ) ফরিদগঞ্জের বর্ডার নাম স্থানে ওভারটেকিংয়ের সময় একটি প্রাইভেটকার আটকে যাওয়ায় রাস্তায় জটলা সৃষ্টি হওয়াকে কেন্দ্রকরে। যেখানে একটি মোটরসাইকেল নিয়ে আরোহীরা আটকে ছিলেন। এ নিয়ে নিরাপত্তাহীনতা পড়লে থানায় যোগাযোগ করেন প্রাইভেটকারে থাকা নুরে আলম নামে এক ব্যক্তি।

থানায় অভিযোগ দেওয়া নুরে আলম বলেন, “আমরা প্রাইভেটকার যোগে লক্ষীপুরের রায়পুর থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় ফরিদগঞ্জে আমার বোনের বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছিলাম। সেখানে বর্ডার নামক স্থানে আমাদের গাড়ীর সামনে থাকা একটি লরিকে আমরা ওভারটেক করার চেষ্টা করলে সামনে হঠাৎ ডানপাশে আরো একটি গাড়ি চলে আসায় আমাদের গাড়ি সামনে এগুতে পারছিল না। এসময় আমাদের গাড়ির পেছনে আরেকটি মোটরসাইকেল ছিল, যা আমরা মোটেও অবগত ছিলাম না।”

অভিযোগে নুরে আলম বলেন, “পরে আমরা আমাদের মতো যখন ওখান থেকে চলে যাচ্ছিলাম তখন হঠাৎ করেই গৃদকালিন্দিয়ার জোড় কবর নামক স্থানে এসে সেই বাইকের আরোহীরা আমাদের গাড়ির গতিরোধ করে। একপর্যায়ে ওদের কেউ খবর দিলে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ওই শাওন নামের ছেলেটি ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেল যোগে এসে আমাদের সাথে বাকবিতণ্ডা শুরু করেন এবং এক পর্যায়ে দলবলসহ আমাদের মারধরসহ হেনস্তা করে গাড়ির চাবিসহ টাকা পয়সা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করতে থাকেন। 

“পরে বাধ্য হয়ে নিরপত্তা পেতে বিষয়টি আমরা থানা পুলিশকে অবগত করি এবং এর প্রেক্ষিতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে সে পুলিশের সাথেও দাম্ভিকতার সাথে বাকবিতণ্ডা করে পুলিশকে হেনস্তার চেষ্টা করে। যা ভিডিও করে আমাদের সাথেরই একজন। তা আমরা সামাজিক মাধ্যমে ছাড়ার পরই বিষয়টি সবার সামনে আসে এবং তার শাস্তির দাবি উঠে।”

ঘটনাস্থলে হেনস্তার শিকার হওয়ার বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার এসআই খোকন চন্দ্র দাশ বলেন, প্রাইভেটকারে থাকা ব্যক্তিদের অভিযোগের ভিত্তিতেই আমরা ঘটনাস্থলে গেলে অভিযুক্ত শাওন কাবী আমাদের সাথেও খারাপ আচরণ শুরু করেন; আমার মুঠোফোন কেড়ে নিতে চেষ্টা করেন। এরপর তাকে থানায় আসতে বললে তিনি বলেন, আমি যাব না। আপনার ওসি স্যাররে বলেন, এখানে আসতে। পরে ঊর্ধ্বতনের নির্দেশে আমরা তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি।”

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানার ওসি শাহ আলম বলেন,  “রাতেই শাওন নামের ওই ছাত্রদল নেতাকে আমরা আটক করেছি। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।”

চাঁদপুর জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে চাঁদপুর জেলা শাখার অধীনস্থ ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৬ নম্বর রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি শাওন কাবীকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। 

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মো.

জাহাঙ্গীর আলমের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের শাওন কাবীর সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা/অমরেশ/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল ছ ত রদল র স আম দ র গ ড় পর য য় গঠন ক

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ