যুদ্ধবিরতির জন্য যেসব দাবি মানতে হবে, তার তালিকা দিয়েছে রাশিয়া
Published: 13th, March 2025 GMT
ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করতে একটি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নিজেদের দাবিদাওয়ার একটি তালিকা উপস্থাপন করেছে রাশিয়া। এ বিষয়ে জানেন, এমন দুটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
তবে মস্কো ওই তালিকায় ঠিক কী কী অন্তর্ভুক্ত করেছে অথবা সেগুলো মেনে না নেওয়ার আগে তারা কিয়েভের সঙ্গে কোনো ধরনের শান্তি আলোচনায় বসতে আগ্রহী কি না, সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ওই সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া ও মার্কিন কর্মকর্তারা মুখোমুখি বৈঠকে চুক্তির শর্ত নিয়ে কথা বলেছেন এবং তিন সপ্তাহ ধরে তাঁদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলেছে।
কর্মকর্তারা এটাও বলেছেন, এর আগে ক্রেমলিন ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর কাছে তাদের যেসব দাবি জানিয়েছিল, এবারের দাবিও কমবেশি সে রকমই।
আগে রাশিয়া যে দাবি জানিয়েছিল তাতে বলা হয়েছিল, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যপদ নিতে পারবে না। এ ছাড়া ইউক্রেনে কোনো বিদেশি সেনা মোতায়েন করা যাবে না এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্রিমিয়াসহ ইউক্রেনের আরও যে চারটি অঞ্চলের দখল নিয়েছেন, সেগুলোকে রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর কাছে আরও একটি দাবি জানিয়ে আসছে রাশিয়া। সেটা হলো, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর ‘মূল কারণগুলোর’ সমাধান করা, যার মধ্যে ন্যাটোর পূর্ব দিকে বিস্তারের বিষয়টিও রয়েছে।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি ইউক্রেন১১ মার্চ ২০২৫যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনে ৩০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি একে ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে শান্তি আলোচনার পথে প্রথম পদক্ষেপ বলে বিবেচনা করছেন এবং এই প্রস্তাবে রাজি আছেন। ট্রাম্প এখন পুতিনের জবাবের অপেক্ষায় আছেন।
সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে পুতিনের মনোভাব এখনো অস্পষ্ট। তাই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের বিস্তারিতও চূড়ান্ত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন কর্মকর্তা, আইনপ্রণেতা ও বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইউরোপকে ভাগ করতে এবং যেকোনো আলোচনায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে পুতিন সম্ভাব্য এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে ব্যবহার করতে চাইবেন।
ওয়াশিংটনে রাশিয়ার দূতাবাস এবং হোয়াইট হাউস থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কথা বলতে রাজি হয়নি।
আরও পড়ুনযুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় মস্কো যাচ্ছেন মার্কিন প্রতিনিধিরা, পুতিন গেলেন কুরস্কে৪ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন
এছাড়াও পড়ুন:
পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা বাড়ল
ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা ঘিরে আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে দুই দেশ। ইসরায়েলে গত শনিবার রাতভর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। একই রাতে ইরানের গ্যাসক্ষেত্র ও তেল শোধনাগারে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় ইরানের কতজন নিহত হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
গতকাল রোববার ছিল দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার তৃতীয় দিন। শনিবার রাতের পর রোববার দিনের বেলায়ও পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ও ইরান। এদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র
গোষ্ঠী হুতি। চলমান সংঘাতে এই প্রথম ইরানপন্থী কোনো গোষ্ঠী যোগ দিল। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশকে শান্ত করার জন্য প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ।
গতকাল রাত একটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল। এ রাতেও তেহরানের নিয়াভারান, ভালিয়াসর ও হাফতে তির স্কয়ার এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইরানের পূর্বাঞ্চলে মাশহাদ বিমানবন্দরে একটি ‘রিফুয়েলিং’ উড়োজাহাজে আঘাত হানার কথা জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই উড়োজাহাজগুলো আকাশে থাকা অবস্থায় অন্য উড়োজাহাজে জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম। ইরান থেকেও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা ইরানেরইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকানোর কথা বলে গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশটিতে প্রথমে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই রাতে ইসরায়েলের দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান ইরানের ‘পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র’ স্থাপনায় আঘাত হানে। শুক্র ও শনিবারও ইরানে হামলা চলে। পাল্টা জবাব দিচ্ছে তেহরানও। তবে ইসরায়েলে শনিবার রাতভর ইরান যে হামলা চালিয়েছে, তা ছিল সবচেয়ে ব্যাপক।
ইসরায়েলে শনিবার প্রথম দফায় ইরানের হামলা শুরু হয় রাত ১১টার পরপর। এ সময় ইসরায়েলের জেরুজালেম ও হাইফা শহরে বেজে ওঠে সাইরেন। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাইফায় অবস্থিত তেল শোধনাগার। পরে রাত আড়াইটার দিকে দ্বিতীয় দফায় হামলা শুরু করে ইরান। তখন তেল আবিব ও জেরুজালেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শনিবার রাতে দুই দফায় ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। প্রথম দফায় ছোড়া হয় ৪০টি। এতে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের তামরা শহরে চারজন নিহত হন। দ্বিতীয় দফায় ছোড়া হয় ৩৫টি ক্ষেপণাস্ত্র। এর একটি আঘাত হানে তেল আবিবের কাছে বাত ইয়াম এলাকায়। এতে অন্তত ছয়জন নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হন। এ ছাড়া রেহভোত শহরে আহত হয়েছেন ৪০ জন।
ইসরায়েলি হামলায় জ্বলছে ইরানের শাহরান তেলের ডিপো। গতকাল দেশটির রাজধানী তেহরানের কাছে।