পাকিস্তানে পৃথক বোমা হামলায় ৫ নিরাপত্তারক্ষীসহ নিহত ১২
Published: 16th, March 2025 GMT
পাকিস্তানের সহিংসতাকবলিত বেলুচিস্তানে পৃথক দুটি বোমা হামলায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ফ্রন্টিয়ার কোরের ৫ সদস্যসহ ১২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪৭ জন। রোববার এ হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ এ কথা জানিয়েছে।
বেলুচিস্তানের নুশকি–দলবন্দিন মহাসড়কে একটি যাত্রীবাহী বাসের কাছে বিস্ফোরণে সাতজন নিহত হন। আহত হয়েছেন ৩৫ জন। তবে ঠিক কী ধরনের হামলা হয়েছে, তা তাৎক্ষণিক নিশ্চিত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ বলেছে, বিস্ফোরণের পরপরই আহত ব্যক্তিদের নুশকি হাসপাতালে নেওয়া হয়। আহত ব্যক্তিদের কয়েকজনের অবস্থা সংকটাপন্ন বলেও পুলিশ জানিয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মির গুল খান নাসির টিচিং হসপিটালে জরুরি পরিষেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ জানিয়েছে, আহত ব্যক্তিদের হেলিকপ্টারে করে কোয়েটায় স্থানান্তর করা হচ্ছে।
হামলার পর ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে নুশকিতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী ফ্রন্টিয়ার কোরের গাড়িবহরের কাছে বিস্ফোরণে এই আধাসামরিক বাহিনীর পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১২ জন। নুশকি স্টেশন হাউস অফিসার জাফরুল্লাহ সুমালানি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনাটি আত্মঘাতী হামলা ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
জাফরুল্লাহ বলেন, ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া আলামত দেখে মনে হচ্ছে, আত্মঘাতী হামলাকারী বিস্ফোরকভর্তি গাড়ি নিয়ে ফ্রন্টিয়ার কোরের বহরে হামলা চালিয়েছে।
এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক সরকার। এক বিবৃতিতে সরকারের মুখপাত্র শাহিদ রিন্দ বলেন, ‘শত্রুরা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সন্ত্রাসের মাধ্যমে জনগণের মনোবল দুর্বল করা যাবে না।’
বেলুচিস্তানে সম্প্রতি সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন বালুচ লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) সদস্যরা গত মঙ্গলবার জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে হামলা চালায়। তাঁরা রেললাইন উড়িয়ে দিয়ে ট্রেনের ৪৪০ জন যাত্রীকে জিম্মি করেন।
পরদিন যৌথ বাহিনীর অভিযানে জিম্মিদের উদ্ধার করা হয়। অভিযানে ৩৩ হামলাকারী নিহত হন। তবে সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার আগেই হামলাকারীরা ২৬ যাত্রীকে হত্যা করেন। অভিযানের সময় ফ্রন্টিয়ার কোরের চার সদস্যও নিহত হয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।