চট্টগ্রামে বিমানবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিবাদ কর্মসূচি
Published: 17th, March 2025 GMT
বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি ফোর্স গঠনের প্রস্তাব বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রামে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচকের) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের আওতাধীন ‘এভিয়েশন সিকিউরিটি’ বিভাগ অত্যন্ত দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশের সব বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বিধানে কাজ করে আসছে। এ বিভাগ থাকার পরও বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সিকিউরিটি ফোর্স নামের নতুন একটি বিভাগ গঠনের প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়েছে। বেবিচকের পর্ষদ সভায় আলোচনার জন্য এ প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে দাবি করেন বক্তারা।
কর্মসূচিতে বিমানবন্দরের বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নেন। এ সময় তাঁরা ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন। এই দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—এভিয়েশন সিকিউরিটি বিভাগকে অকার্যকর করার সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। বেবিচকের অর্গানোগ্রাম পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে প্রতিষ্ঠানটির কাঠামোগত শক্তিশালীকরণ নিশ্চিত হয়। বেবিচকের অধীন বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ২০১৬ সালে চালু করা ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’–এর আওতায় জনবল মোতায়েন কার্যক্রম থেকে খুব দ্রুত বেরিয়ে আসার সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের স্বনির্ভরতা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ছাড়া ১০ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করতে হবে, বেবিচকের প্রকৃত প্রতিনিধি নিশ্চিত করতে হবে।
কর্মসূচির সময় এই ছয় দফা দাবিসংবলিত বেবিচকের চেয়ারম্যান বরাবর একটি স্মারকলিপি বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আবদুল্লাহ আলমগীরের হাতে দেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে দাবি মেনে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান তাঁরা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত
এছাড়াও পড়ুন:
আইন যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাতিয়ার
এটা অনস্বীকার্য যে মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য আইন তৈরি করা হয়, অন্যভাবে বললে মানুষের অধিকার সুরক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী আইনি কাঠামোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে সেই আইনই মানুষের অধিকার লঙ্ঘনের সহযোগী উপাদান বা হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে, বিশেষত আইন যখন এমনভাবে প্রণয়ন করা হয়, যাতে অতিবিস্তৃত, অস্পষ্ট এবং অসংগতিপূর্ণ ধারা থাকে কিংবা আইনের দুর্বল এবং ‘সিলেকটিভ’ প্রয়োগ হয়; আইনকে ইচ্ছাকৃতভাবে এমনভাবে ব্যবহার করা হয়, যা নির্বিচার আটকের ন্যায্যতা দেয়, মৌলিক স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করে এবং বৈষম্যমূলক চর্চাকে উৎসাহিত করে।
আইনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে সেসব দেশে, যেখানে আইনের শাসন ভঙ্গুর, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সীমিত এবং গণতন্ত্রের ঘাটতি থাকে। বাংলাদেশ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
২.
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন অধ্যায়, যেখানে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ঘটে। সরকারি চাকরিতে অন্যায্য কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলেও তৎকালীন সরকারের ব্যাপক দমন-পীড়ন এবং সহিংস আক্রমণের ফলে পরবর্তীকালে তা গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়। গণ-অভ্যুত্থানে সমাজের সব স্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে এবং একটি স্বৈরাচারী বা কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন হয়।
জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধানী মিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ১ হাজার ৪০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, যার মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে ১২-১৩ শতাংশ ছিল শিশু। আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের বিগত সরকার এবং নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা বিচারবহির্ভূত হত্যা, সহিংসতা, নির্বিচার আটক ও নির্যাতনের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে জড়িত ছিল।
আন্দোলন চলাকালীন হাজার হাজার আন্দোলনকারীকে নির্বিচার আটক করা হয়েছিল, যা বাংলাদেশের সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে স্বীকৃত ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার এবং আটকের ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া (ডিউ প্রসেস) অনুসরণের যে বিধান, তার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গণগ্রেপ্তার অভিযানের সময় আটক হওয়া প্রায় ৮৫ শতাংশ ছিল শিক্ষার্থী এবং সাধারণ নাগরিক আর ১৫ শতাংশ বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে যুক্ত ছিল। হত্যা, নির্বিচার আটক এবং নির্যাতনের পাশাপাশি গণ-অভ্যুত্থানের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করে মানুষের যোগাযোগের অধিকার, তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।
এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তা, জননিরাপত্তা, আত্মরক্ষায় বলপ্রয়োগ কিংবা জনস্বার্থের মতো ‘অস্পষ্ট’ বিষয়ের কথা বলা হয়েছে এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিপীড়ন, হয়রানি ও নির্যাতনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। এসব ক্ষেত্রে আইন সহযোগী উপাদান বা অনুঘটক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। যেমন, কারফিউ জারি, প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বা দেখামাত্রই গুলির নির্দেশকে ন্যায্যতা দিতে জননিরাপত্তা এবং জনস্বার্থের মতো বিষয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে মূলত আইন রাষ্ট্রের দমনমূলক কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দিতে সহায়তা করেছে, যা মানবাধিকারের মানদণ্ডের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
৩.
জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানেই নয়, বছরের পর বছর ধরে দেশের শাসনব্যবস্থায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাতিয়ার হিসেবে আইনকে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন বিগত সময়ে কিছু কঠোর ও দমনমূলক আইন প্রণয়ন করেছিল, যা স্পষ্টভাবে মানবাধিকারের পরিপন্থী। এই আইনগুলো ভিন্নমত দমন, নির্যাতন এবং নিপীড়ন করে কর্তৃতবাদী শাসন টিকিয়ে রাখতে সহায়ক ছিল। বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) ছিল এমন একটি আইন (যা পূর্ববর্তী আইসিটি আইনের বিতর্কিত এবং দমনমূলক ৫৭ ধারার একটি পদচিহ্ন)। এ আইন বাংলাদেশে ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করেছিল, যার ভুক্তভোগী ছিলেন অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, এমনকি সাধারণ নাগরিকও।
এই দমনমূলক ডিএসএ আইনটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল যে আইনের অপব্যবহারের প্রয়োজন ছিল না, বরং আইনটি ব্যবহার করেই অর্থাৎ আইনের মধ্যে থেকেই মানুষকে হয়রানি এবং নির্যাতন করা সম্ভব ছিল। ডিজিটাল আইনের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ছিল ভীতি এবং সেলফ-সেন্সরশিপের সংস্কৃতি তৈরি করে ভিন্নমতকে দমন করা, যা সংবিধান প্রদত্ত বাক্স্বাধীনতা, মতপ্রকাশ এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে। লক্ষণীয়, নিপীড়নমূলক ডিজিটাল আইন প্রণয়নে এবং প্রয়োগে বিগত সরকার ডিজিটাল মাধ্যমে মানবাধিকার রক্ষার চেয়ে রাজনৈতিক এজেন্ডাগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে যখন ডিজিটাল মাধ্যমে মানবাধিকারের ধারণা ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে, বাংলাদেশে দমনমূলক ডিজিটাল আইন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছে এবং বিরোধী কণ্ঠ দমন করে কর্তৃত্ববাদী শাসনকে পাকাপোক্ত করতে সহায়তা করেছে।
বিগত সরকারের আমলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হয়ে উঠেছিল ভিন্নমত দমনের বড় অস্ত্র