কুমিল্লায় এনজিওর দুই কর্মীকে তুলে নিয়ে নির্যাতন, নগ্ন করে ভিডিও, টাকা আদায়
Published: 18th, March 2025 GMT
কুমিল্লার চান্দিনায় ঋণের কিস্তি আদায় শেষে ফেরার পথে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) দুই কর্মীকে তুলে নিয়ে নির্যাতন ও টাকা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী দুজন অভিযোগ করেছেন, এলাকার চার বখাটে তাঁদের দুজনকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। পুরুষ কর্মীকে গাছে বেঁধে বিদ্যুতের শক দেওয়া হয়। আর নারী কর্মীকে নগ্ন করে ভিডিও করা হয়। ওই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাঁর বোনের কাছ থেকে বিকাশে টাকা আদায় করা হয়।
চান্দিনা পৌরসভার তুলাতলী দক্ষিণপাড়া দিঘির পাড়ের একটি বাগানে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এই ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় লোকজন টের পেয়ে বখাটেদের ধাওয়া দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ওই দুজনকে উদ্ধার করে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভুক্তভোগী পুরুষ কর্মী বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছেন।
আসামিদের বাড়ি তুলাতলী ও এর আশপাশের এলাকায়। তবে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে আসামিদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হয়নি। এ বিষয়ে আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, নির্যাতিত পুরুষ কর্মী অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলাটি করেছেন। আসামিরা পলাতক। তাঁদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ভুক্তভোগী দুজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোমবার ইফতারের পর তাঁরা দুজন উপজেলার তুলাতলী গ্রামে ঋণের কিস্তি আদায় করতে যান। সেখান থেকে বের হতেই চার বখাটে যুবক তাঁদের আটক করে তুলাতলী গ্রামের শেষে এতবারপুর গ্রামের মালিবাড়ি–সংলগ্ন একটি মৎস্য খামারের পাড়ে নিয়ে যান। তাঁদের আদায় করা কিস্তির টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এমন সময় স্থানীয় রুহুল আমিন নামে এক ব্যক্তি তাঁদের দেখে ফেলেন। তখন সেখান থেকে তাঁদের তুলাতলী দক্ষিণপাড়া দিঘির পাড়ে নির্জন বাগানে নিয়ে আটকে রাখা হয়। এ সময় পুরুষ কর্মীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে বিদ্যুতের শক দেওয়া হয় আর নারী কর্মীর হাত-পা ও মুখ বেঁধে নগ্ন করে মুঠোফোনে ভিডিও করা হয়। ওই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আবার চাঁদা দাবি করা হয়। ওই নারী কর্মী তাঁর বোনকে মুঠোফোনে কল করে বখাটেদের বিকাশ নম্বরে ২০ হাজার টাকা পাঠাতে বলেন। ওই টাকা পাওয়ার পরও তাঁদের নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে গ্রামের লোকজন টের পেয়ে ডাকাত বলে ধাওয়া করলে বখাটেরা পালিয়ে যান।
মামলার বাদী বলেন, ‘আমাকে এত নির্যাতন করা হয়েছে যে আমি চিৎকার করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমার সহকর্মীর মুখ বেঁধে রাখায় সে–ও চিৎকার করতে পারেননি। একপর্যায়ে মুখের বাঁধন খুলে গেলে আমার সহকর্মী জোরে জোরে চিৎকার করেন। তখন গ্রামবাসী এসে আমাদের উদ্ধার করেন।’
ভুক্তভোগীদের বর্ণনায়—নগ্ন করে নির্যাতনের কথা বলা হলেও মামলার এজাহারে তা উল্লেখ করা হয়নি। এ সম্পর্কে ওসি নাজমুল হুদা বলেন, ‘মামলার বাদী সাংবাদিকদের কাছে নারী কর্মীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের কথা বলেছেন। তবে এজাহারে বাদী সেটি উল্লেখ করেননি। তবে আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র ষ কর ম কর ম ক
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।