যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ফোনালাপ করেছেন। ইউক্রেন যুদ্ধে শান্তি এবং যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেছেন তারা। উভয় নেতাই এই সংঘাতের সমাপ্তি টানতে স্থায়ী শান্তির বিষয়ে একমত হয়েছেন। তারা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে উন্নত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন। কথোপকথনে ৩০ দিনের জন্য ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোয় হামলা বন্ধে ট্রাম্পের প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছেন পুতিন। ফোনালাপ শেষে এক বিবৃতিতে ক্রেমলিন জানিয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট তাৎক্ষণিকভাবে দেশটির সামরিক বাহিনীকে এ-সম্পর্কিত আদেশও দিয়েছেন। পাশাপাশি কৃষ্ণসাগরে নৌ চলাচলের নিরাপত্তা সম্পর্কিত ট্রাম্পের প্রস্তাবেও গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া জানান পুতিন।

গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মধ্যে এটি দ্বিতীয় আলাপ। ফেনালাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যকার ৩০ দিনের প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা আলোচনার মূল বিষয় হিসেবে মনে করা হয়েছিল। গত সপ্তাহে ইউক্রেন এই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছিল। আলোচনায় পুতিন এই যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ এবং ওই সময়ে ইউক্রেনের সেনা সংগ্রহ ও পুনরায় সশস্ত্র হওয়া রোধে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় উত্থাপন করেছেন। পুতিন এ সময় বলেছেন, সংঘাতের সমাধান সমন্বিত, টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি হতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার নিরাপত্তা স্বার্থ ও যুদ্ধের মূল কারণগুলো বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। 

হোয়াইট হাউস একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফোনালাপে দুই নেতা উল্লেখ করেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়েই এই যুদ্ধে প্রচুর সম্পদ ও প্রাণ হারিয়েছে, যা তাদের জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা উচিত ছিল। এই সংঘাত কখনোই শুরু হওয়া উচিত ছিল না এবং এটি বহু আগেই আন্তরিক ও সদিচ্ছাপূর্ণ শান্তি প্রচেষ্টার মাধ্যমে শেষ হওয়া উচিত ছিল। তারা কৌশলগত অস্ত্রের বিস্তার এবং ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বন্ধ করার বিষয়েও আলোচনা করেছেন। এ ছাড়া দুই নেতা একমত হয়েছেন, ইরান কখনোই এমন অবস্থানে থাকা উচিত নয়, যাতে তারা ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে পারে। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, উভয় নেতা বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে উন্নত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বৃহৎ অর্থনৈতিক চুক্তি এবং ভূরাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জিত হবে, যখন শান্তি নিশ্চিত হবে। 

পরে ক্রেমলিনও একটি বিবৃতি দিয়ে জ্বালানি অবকাঠামো সম্পর্কিত যুদ্ধবিরতির তথ্য নিশ্চিত করে। এতে বলা হয়েছে, আলোচনায় ট্রাম্প প্রস্তাব করেন ৩০ দিনের জন্য সংঘর্ষে থাকা পক্ষগুলোকে জ্বালানি অবকাঠামোয় আঘাত থেকে পারস্পরিকভাবে বিরত থাকতে হবে। পুতিন এই উদ্যোগের প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেন এবং রুশ সেনাবাহিনীকে তা বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি কৃষ্ণসাগরে নৌ চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে ট্রাম্পের একটি সুপরিচিত উদ্যোগ বাস্তবায়নের প্রস্তাবেও গঠনমূলকভাবে সাড়া দেন রুশ প্রেসিডেন্ট। উভয় নেতাই এই ধরনের চুক্তির সুনির্দিষ্ট বিবরণ আরও বিস্তারিত আলোচনা শুরু করার বিষয়ে একমত হয়েছেন। 

ক্রেমলিনের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সংঘাতের উত্তেজনা কমাতে এবং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে এর সমাধান খুঁজতে বিদেশি সামরিক সহায়তা ও কিয়েভকে গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করা জরুরি।
 
এদিকে ট্রাম্প-পুতিনের ফোনালাপ নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ইউক্রেন। এর আগে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা মঙ্গলবার বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে কিয়েভ বাধা নয়। তিনি বিশ্বাস করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে তারা ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তি অর্জন করতে পারবেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন ইউক র ন র কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনসহ ১১ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন ও এবি পার্টির ঐকমত্য

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনপদ্ধতি চালুসহ ১১টি বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে এবি পার্টি। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছে দল দুটি।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও এবি পার্টির মধ্যে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। আজ বুধবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলে সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করার পরিবেশ তৈরি হবে। সম্প্রতি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা ধর্মবিরোধী, ইসলামবিরোধী ও দেশবিরোধী। কমিশনের প্রস্তাবগুলো বাতিল করতে হবে। এ বিষয়ে এবি পার্টিও একমত।

বৈঠক সম্পর্কে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, তাঁরা এই বৈঠকের মাধ্যমে দেশবাসীকে বার্তা দিতে চান, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। বাংলাদেশকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বানানো পর্যন্ত এই ঐক্য টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।

দুই দলের বৈঠকে আরও যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো আধিপত্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও সাম্রাজ্যবাদমুক্ত স্বাধীন–সার্বভৌম টেকসই কল্যাণকর বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা; দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি ও টাকা পাচারকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা; ভোটাধিকারসহ সব নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা; দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ এবং আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করে নিয়ে আসা; আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে দেশ পুনর্গঠনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা; আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে আঘাত করে কথা না বলা এবং প্রশাসনে এখনো বিদ্যমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের দ্রুত অপসারণ করা; আগামীতে যাতে আওয়ামী লীগের মতো আর কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকা; দেশের স্থায়ী শান্তি ও মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে সংবিধানে বিদ্যমান শরিয়াহবিরোধী আইন বাতিল এবং ইসলামসহ সব ধর্মের প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য পরিহার করা, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে কোনো কথা বা বক্তব্য না দেওয়া।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা ইমতেয়াজ আলম, মাওলানা সৈয়দ এসহাক মু. আবুল খায়ের ও মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ুম।

অপর দিকে এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম ও বি এস নাজমুল হক, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যোবায়ের আহমেদ ভূইয়া, আবদুল্লাহ আল মামুন, আনোয়ার সাদাত, এ বি এম খালিদ হাসান, শ্যাডো অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি আব্বাস ইসলাম খান, সংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) গাজী নাসির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ সব সুপারিশে একমত নয় ইসি
  • তিন বিষয়ে একমত এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন
  • সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনসহ ১১ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন ও এবি পার্টির ঐকমত্য
  • চলছে বৈঠকের রাজনীতি
  • বৈঠকে আওয়ামী লীগের বিচার ও মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে একমত এনসিপি ও গণসংহতি আন্দোলন
  • কানাডার প্রধানমন্ত্রী কার্নিকে অভিনন্দন জানালেন ট্রাম্প
  • জাতীয় স্বার্থে আমরা কি একমত হতে পারি না
  • গণভোটে সংস্কার চায় নুরের গণঅধিকার
  • সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর বয়স ন্যূনতম ২৩ করার প্রস্তাব গণ অধিকার পরিষদের