সংস্কার এবং নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে: তারেক রহমান
Published: 22nd, March 2025 GMT
সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, বিএনপি দুই থেকে আড়াই বছর আগেই সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। তখনই এ ব্যবস্থার পরিবর্তনের কথা বলেছে।
রাজধানীর মালিবাগে একটি রেস্তোরাঁয় আজ শনিবার ১২–দলীয় জোটের ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশ ও দেশের জনগণ। দেশ ও জনগণের যে ক্ষতিগুলো হয়েছে, সে ক্ষতিগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর সুযোগ এলে পরিবর্তন করতে হবে। আর এই পরিবর্তনটাকে আমরা রাষ্ট্রকাঠামোর মেরামত বলেছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘আমরা স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে দুই থেকে আড়াই বছর আগে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, এ ব্যবস্থার পরিবর্তন হওয়া উচিত।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন যে সংস্কার শেষ হবে, তারপরে নির্বাচন হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি যে সমস্ত কাজ, যেটা শেষ হয়েছে, সেটাতে সংস্কার হতে পারে না। এটি আসলে একটি চলমান প্রক্রিয়া।’
সংস্কার প্রসঙ্গে বিএনপির ৩১ দফার কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ২০০৮ সাল থেকে ফ্যাসিবাদ ও মাফিয়া সরকার জনগণের কাঁধে চেপে বসেছিল। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সেটি অর্থনৈতিক বলি, শিক্ষাব্যবস্থা বলি, সমাজব্যবস্থা বলি, প্রশাসন, সিভিল প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন হোক; চিকিৎসাব্যবস্থাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রকে একদম ধ্বংস করে দিয়েছিল। মানুষের প্রত্যাশার সম্পূর্ণ বিপরীতে নিয়ে গিয়েছিল পুরো পরিস্থিতি।’
তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্র বলতে একজন সাধারণ মানুষের কাছে এককথায় নির্বাচন। নিরপেক্ষ, নির্ভয়ে ভোট দেওদার যে ব্যবস্থা, সেটাই গণতন্ত্র। এটি বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র হিসেবে প্রচলিত বা স্বীকৃত। তিনি বলেন, ‘যে ঐক্য নিয়ে আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করেছিলাম, সেই ঐক্য ধরে রাখতে হবে। .
তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের মতের ভিন্নতা থাকবে, আমরা বসব, আলোচনা করব। এমন কিছু আমরা বলব না বা এমন কিছু করা থেকে আমরা বিরত থাকার চেষ্টা করব, যাতে করে কোনোভাবেই স্বৈরাচার বা তার পেতাত্মারা আবার এ দেশের মানুষের কাঁধে চেপে বসতে পারে।’
১২–দলীয় জোটের সমন্বয়ক জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে এবং মুখপাত্র জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদার সঞ্চালনায় ইফতারপূর্ব আলোচনায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, গণ অধিকার পরিষদের ফারুক হাসান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) কাজী নাহিদ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণতন ত র ব এনপ র ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
ড. ইউনূসকে দেশের কাজে যুক্ত রাখতে চায় বিএনপি
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ আছে। বিএনপিকে জনগণ যদি ভোট দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আনে, তাহলে অবশ্যই দেশের জন্য ড. ইউনূসকে কাজে লাগানো হবে। দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়– এ ব্যাপারে তাঁর পরামর্শ নেওয়া হবে। এ রকম আরও যারা আছেন তাদের মতামত নিয়ে কাজ করতে চান তারেক রহমান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্র-বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির গতকাল শুক্রবার সমকালকে এ কথা বলেন। লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে আলোচনার প্রথম পর্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে দলের প্রতিনিধি হিসেবে হুমায়ুন কবিরও ছিলেন।
তারেক রহমানের পররাষ্ট্র-বিষয়ক উপদেষ্টা আরও বলেন, তারেক রহমান মনে করেন, জাতীয় স্বার্থে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রয়োজন আছে। যদি জনগণের ভোটে বিএনপি নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারে, তাহলে তারেক রহমান সবাইকে নিয়ে কাজ করবেন। তিনি সেটাই উপস্থাপন করেছেন।
এর আগে গত বুধবার লন্ডনে চ্যাথাম হাউসে অনুষ্ঠিত সংলাপে এক প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নির্বাচনের পর গঠিত পরবর্তী সরকারের অংশ হওয়ার কোনো আগ্রহ তাঁর নেই। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ হলো সফল ও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা, যা নির্বাচন দ্বারা সম্পন্ন হবে।’
গতকালের বৈঠক সূত্র জানায়, আলোচনায় তারেক রহমান বিএনপির পূর্বঘোষণা এবং ৩১ দফা অনুযায়ী সব দলমতের মানুষকে নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন। সেখানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিকে আগামীর রাষ্ট্র বিনির্মাণে পাশে চান তিনি। তাঁর মতো অন্য যোগ্যদেরও দেশ গঠনে সম্পৃক্ত করার আগ্রহ প্রকাশ করেন তারেক রহমান।
নির্বাচনের বাইরে আর কী বিষয়ে আলাপ হয়েছে– জানতে চাইলে হুমায়ুন কবির বলেন, স্বাভাবিকভাবে ব্যক্তিগত আলাপে অনেক কিছু উঠে এসেছে। যেটা জেনেছি, খুবই ফলপ্রসূ ও আন্তরিক আলাপ হয়েছে। দেশ নিয়ে গঠনমূলক চিন্তা বিনিময় হয়েছে। কীভাবে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়েও কথা হয়েছে।
হুমায়ুন কবির বলেন, ‘জাতীয় স্বার্থে নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা একটা জায়গায় আসতে পেরেছি। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’