জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, ততবারই এ দেশের মানুষের জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। একাত্তরের পরে তারা গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে বাকশাল কায়েম করেছিল। এ দেশের মানুষ যে গণতন্ত্র চেয়েছিল– ’১৪, ’১৮ ও ’২৪-এর নির্বাচন– সে গণতন্ত্রের মুখে চুনকালি দিয়েছে। আমাদের চোখের সামনে যারা মারা গেছে, তাদের রক্তের শপথ– আমাদের শরীরে এক ফোঁটা রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেব না। 
আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে এনসিপি ঢাকা মহানগর শাখা আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। এদিন একই দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। 

আখতার হোসেন বলেন, অভ্যুত্থানের সাত মাস হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার এখনও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কোনো বিচারিক কাজ শুরু করেনি। আমরা বলতে চাই, অবিলম্বে লীগের বিচার শুরু করতে হবে। আওয়ামী লীগের নামে কোনো সাংগঠনিক বা রাজনৈতিক কাজ করতে দেওয়া যাবে না। না হলে ছাত্র-জনতা আবার রাজপথে এসে লড়াই করবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, যে জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করেছিলেন, তাঁকে জীবন দিয়ে তা পরিশোধ করতে হয়েছে। জামায়াত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করেছে, তাদের নেতাকর্মীকে ফাঁসির মাধ্যমে তা পরিশোধ হয়েছে। এর পর আবার আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হয়েছে; পিলখানা, শাপলা গণহত্যা ও দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মাধ্যমে তা পরিশোধ করতে হয়েছে। আবারও যদি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হয়, আপনার-আমার জীবন দিয়ে তার খেসারত দিতে হবে।

রাজধানীর বকশীবাজারে গতকাল বিকেলে কারা কনভেনশন সেন্টারে লালবাগ থানা এনসিপি আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে যারাই পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে, তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে। যদি ক্যান্টনমেন্ট বা ভারত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার পথ করে দিতে চায়, তবে তাদেরও প্রতিহত করা হবে। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, ফ্যাসিবাদের দোসরদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কেবল আওয়ামী লীগকেই বিদায় করা হয়নি উল্লেখ করে এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে আমরা বলেছিলাম, আওয়ামী লীগ এবং এই ফ্যাসিবাদী ১৫ বছরের যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই এক-এগারোর বন্দোবস্ত থেকে। সেই এক-এগারোর বন্দোবস্তের ফলেই কিন্তু আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা ক্ষমতা পেয়েছিল। আরেকটি এক-এগারো আমরা কখনও বাংলাদেশে হতে দেব না।

আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানে আহতরা। তা না হলে সারাদেশ থেকে ঢাকামুখী হয়ে আরেকটি গণঅভ্যুত্থানের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে ‘ওয়ারিয়রস অব জুলাই’ প্ল্যাটফর্ম থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সমাবেশে আহতরা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি প্রত্যাখ্যান করে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তা না হলে ৬৪ জেলা থেকে জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবার ঢাকামুখী হয়ে আরেকটি গণঅভ্যুত্থান হবে। 

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও গণহত্যার বিচারের দাবিতে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করে গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ। ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পরিকল্পনা সরকারের নেই’– প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্য প্রত্যাহার ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানান দলের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যারা করেছে, তাদের আবার কীসের ক্লিন ইমেজ? গণহত্যার বিচার শেষ হওয়ার আগে যতই ক্লিন ইমেজ হোক না কেন, বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগের নামে কেউ রাজনীতি করতে পারবে না।

গতকাল গণসংহতি আন্দোলন পাবনা জেলার উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও এর রূপরেখা শীর্ষক আলোচনা ও ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের সাত মাস পার হওয়ার পরও বিচারকাজ এখনও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় এগোয়নি। আওয়ামী লীগের যে নেতৃবৃন্দের নির্দেশে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে, অবিলম্বে তার বিচার করতে হবে। একই সঙ্গে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে।

আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে গতকাল বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে এনসিপি। স্থানীয় পৌর মুক্তমঞ্চ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে কিশোরগঞ্জে ‘ওয়ারিয়রস অব জুলাই’ সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। গতকাল শহরের সরকারি গুরুদয়াল কলেজের শহীদ মিনার চত্বরে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

মেহেরপুরে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ও ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির আয়োজনে গতকাল মিছিলটি প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে শুরু হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। 

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের এক দফা দাবিতে ফেনীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।

এদিকে, গণভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান। গত শুক্রবার এক ফেসবুক পোস্টে তিনি এ দাবি জানান। নাসের রহমান লেখেন, গণভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যবস্থা করা হোক। এই গণহত্যাকারী দলকে কোনো সুস্থ, বিবেকবান ও সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ কখনোই সমর্থন করতে পারে না।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সমকাল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক; নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ গণহত য র স মন র জন ত আওয় ম এনস প গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬৫ হাজার ছাড়াল
  • গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের ‘কঠোরতম ভাষায়’ নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব
  • যারা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ চায়, তারা আদালতে অভিযোগ দিতে পারে: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
  • ‘গাজায় গণহত্যা চলছে, আমি সেই গণহত্যার নিন্দা করছি’