সুদানের এল–ফাশেরে আধা সামরিক বাহিনী ‘র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ)’ হাতে সংঘটিত গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা। তাঁরা নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেছেন, শহরটি ‘আরও গভীর অন্ধকার নরকে ডুবেছে’।

সুদানের সেনাবাহিনীকে পশ্চিম দারফুরে তাদের শেষ ঘাঁটি থেকে পিছু হটতে বাধ্য করার পর গত রোববার আরএসএফ উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল–ফাশেরের নিয়ন্ত্রণ নেয়।

জাতিসংঘের আফ্রিকাবিষয়ক সহকারী মহাসচিব মার্থা আমা আকিয়া পোবি গতকাল বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে বলেন, ‘পরিস্থিতি এক কথায় ভয়াবহ’।

মার্থা আমা জানান, জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পেয়েছে যে এল–ফাশের শহরে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও বাড়ি বাড়ি তল্লাশির ঘটনা ঘটছে। বেসামরিক মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন।

দক্ষিণ সুদান আলাদা হওয়ার এক দশকের বেশি সময় পর আরএসএফের হাতে এল-ফাশরের এ পতন সুদানের নতুন বিভক্তির ইঙ্গিত দিতে পারে। চলমান গৃহযুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে। তখন সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে উত্তেজনা রাজধানী খার্তুমে পূর্ণাঙ্গ সংঘাতে রূপ নেয়। এরপরের সংঘাতে হাজার হাজার মানুষ নিহত ও ১ কোটি ২০ লাখের বেশি লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

‘পরিস্থিতি পুরোপুরি বিশৃঙ্খল। এখন পর্যন্ত কত বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন, তা নির্ধারণ করা কঠিন’, বলেন মার্থা আমা। ‘বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও বাস্তবতা হলো এল–ফাশেরে কেউ নিরাপদ নন। তাঁদের শহর ছাড়ার জন্য কোনো নিরাপদ পথও নেই।’

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাপ্রধান বলেন, ওই শহরের মানুষ এখন ‘ভয়াবহতার’ শিকার হচ্ছেন।

নিরাপত্তা পরিষদে টম ফ্লেচার বলেন, এল–ফাশের আগে থেকেই মানবিক বিপর্যয়ের শিকার ছিল। এখন এটি আরও গভীর অন্ধকার নরকে নেমে গেছে।
ফ্লেচার বলেন, ‘আরএসএফ যোদ্ধারা শহরে প্রবেশের পর ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের বিশ্বাসযোগ্য তথ্য আমরা পেয়েছি। আমরা হয়তো তাঁদের আর্তচিৎকার শুনতে পাচ্ছি না, কিন্তু ভয়াবহতা এখনো চলছে। নারী ও কন্যাশিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, মানুষদের অঙ্গহানি করা হচ্ছে, নির্বিচার হত্যা করা হচ্ছে।’

আরও পড়ুনসুদানের উত্তর দারফুরে আরএসএফের হামলায় নিহত ৬০১২ অক্টোবর ২০২৫

বেঁচে থাকা মানুষের স্মৃতিচারণা

সেনাবাহিনী এল–ফাশের ছাড়ার আগে টানা ১৮ মাস আরএসএফের অবরোধে আটকে ছিলেন লাখো মানুষ। তাঁদের ছিল না পর্যাপ্ত খাবার, পানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পেয়েছে যে এল-ফাশের শহরে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও বাড়ি বাড়ি তল্লাশির ঘটনা ঘটছে। বেসামরিক মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন।মার্থা আমা আকিয়া পোবি, জাতিসংঘের আফ্রিকাবিষয়ক সহকারী মহাসচিব

গত শনিবারের পর থেকে ৩৬ হাজারের বেশি মানুষ প্রধানত হেঁটে তাবিলায় পালিয়ে গেছেন। এল–ফাশের থেকে এটি প্রায় ৭০ কিলোমিটার পশ্চিমে (৪৩ মাইল) অবস্থিত এবং আগে থেকেই প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ এখানে আশ্রয় নিয়ে আছেন।

‘শহরে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ হচ্ছিল’, এল–ফাশের থেকে বাস্তুচ্যুত ফাতিমা আবদুররহমান আল-জাজিরাকে বলেন। তিনি এখন তাবিলায় রয়েছেন। ‘আমি নিজেই গোলায় আহত হয়েছি। গোলার আঘাতে আমার এক মেয়ে মারা গেছে, অন্য মেয়ের চোখে আঘাত লেগেছে, ছেলেটি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গেছে। আমার পুরো শরীরে ক্ষত, ফোলা।’

বোমা হামলা থেকে বাঁচতে অস্থায়ী বাংকার তৈরি করেছেন সাধারণ মানুষ। সুদানের উত্তর দারফুর প্রদেশের রাজধানী এল-ফাশেরে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আরএসএফ র এল ফ শ র

এছাড়াও পড়ুন:

কারাবন্দী সাংবাদিক মনজুরুল আলমকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান আরএসএফের

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দী সাংবাদিক মনজুরুল আলমকে (পান্না) অবিলম্বে বিনা শর্তে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)। সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা বৈশ্বিক সংগঠনটি বলেছে, মনজুরুল আলমের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আনা ‘মিথ্যা অভিযোগ’ অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে।

মঙ্গলবার আরএসএফের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মনজুরুল আলম ‘মানচিত্র’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা করেন। গত ২৯ আগস্ট ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান নিয়ে আয়োজিত একটি গোলটেবিল বৈঠকে তাঁকে কথা বলার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আরএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে কাজ করা ‘মঞ্চ ৭১’ নামের নাগরিক সমাজের একটি প্ল্যাটফর্ম ওই বৈঠকের আয়োজন করেছিল। হঠাৎ একদল ব্যক্তি সেখানে ঢুকলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ‘সহানুভূতিশীল’ বলে অভিযোগ তোলেন তাঁরা। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন ঘটেছিল ২০২৪ সালে কয়েক সপ্তাহের ব্যাপক বিক্ষোভে রক্তক্ষয়ী দমন–পীড়ন চালানোর পরে।

গোলটেবিল বৈঠক ঘিরে পরিস্থিতির অবনতি হলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য পুলিশ ডেকেছিলেন মনজুরুল আলম। সেখানে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের বদলে মনজুরুল আলমসহ গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেওয়া ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তার পর থেকে মনজুরুল আলমসহ গ্রেপ্তার গোলটেবিলের অন্য অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্রের’ ভিত্তিহীন অভিযোগে কারাবন্দী রয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের কাছে এ বিষয়ে বক্তব্য চেয়েছিল আরএসএফ। তবে তিনি তাতে সাড়া দেননি।

আরএসএফের দক্ষিণ এশিয়া ডেস্কের প্রধান সেলিয়া মারসিয়ে বলেছেন, ‘সাংবাদিক মনজুরুল আলমকে আটক বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী আচরণকে তুলে ধরেছে। এই সরকার সমালোচনাকারীদের কণ্ঠ রোধের জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহার করছে। কেবল নিজ দেশের ইতিহাস নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য একজন সাংবাদিককে সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করা হবে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা তাঁর বিরুদ্ধে আনা মিথ্যা অভিযোগগুলো তুলে নেওয়ার এবং অবিলম্বে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

আরএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৪ সেপ্টেম্বর জামিনের জন্য মনজুরুল ইসলামের করা আবেদন খারিজ করা হয়। এখন পর্যন্ত এ মামলার বিচারের কোনো দিনও ধার্য করা হয়নি। জামিনের আবেদন শুনানির সময় মনজুরুল আলমের সাক্ষাৎকার নিতে যাওয়া দুই সাংবাদিক একজন আইনজীবীর আক্রমণের শিকার হন। তাঁদের মধ্যে সময় টিভির আসিফ হোসাইনকে মারধর করেন ওই আইনজীবী। এ ছাড়া বাংলা আউটলুকের সাংবাদিক মুকতাদির রশিদকে হুমকি দেন তিনি।

মনজুরুল আলম ছাড়াও বাংলাদেশে আরও পাঁচ সাংবাদিককে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে আরএসএফের প্রতিবেদনে। তাঁরা হলেন ফারজানা রূপা, শাকিল আহমেদ, মোজাম্মেল বাবু, শাহরিয়ার কবির ও শ্যামল দত্ত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
  • কারাবন্দী সাংবাদিক মনজুরুল আলমকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান আরএসএফের