জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘গত ১৬ বছর জুলুম-নির্যাতন ও জুলাই গণহত্যা চালানোর পর আওয়ামী লীগ দল হিসেবে বৈধতা রাখতে পারে না। এদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।’ সোমবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ শহরের বাংলা ভবন কমিউনিটি সেন্টারে জেলা এনসিপির আয়োজনে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা মানুষের প্রত্যাশা এবং ভালোবাসা নিয়ে নতুন রাজনীতি করতে চাই। যা বাংলাদেশকে নতুনভাবে তৈরি করবে। এনসিপি এখন তিনটি বিষয় নিয়ে কাজ করছে। তা হচ্ছে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, রাষ্ট্রের সংস্কার ও সংবিধান সংস্কারের জন্য গণপরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনের আগে দৃশ্যমান বিচার নিশ্চিত করা আমাদের অন্যতম দাবি। আমরা দেখতে পাচ্ছি, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার প্রক্রিয়া চলছে, যা নিয়ে এনসিপি তাদের সুস্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করেছে। যেকোনো উপায়ে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে জাতীয় নাগরিক পার্টি তা প্রতিহত করবে।’

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘এ দেশের মানুষ চায় না জুলাই অভ্যুত্থানের পর পুরোনো রূপেই দেশের রাজনীতি চলুক। আমরা দেশের সংস্কার ও সংবিধান পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করে যাব। এই সংবিধান সংস্কারের জন্য গণপরিষদ নির্বাচন প্রয়োজন।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই গণপরিষদ নির্বাচনে যেতে হবে। গণপরিষদ ছাড়া আর কোনো নির্বাচনের কোনো ম্যান্ডেট নাই। এই সংবিধান একটি প্রশ্নবিদ্ধ সংবিধান। এই সংবিধান অভিশপ্ত সংবিধান। এখানে বেশির ভাগ মানুষের মতামতের জায়গা রাখা হয় নাই। এই সংবিধানে তরুণ প্রজন্মের লড়াই–সংগ্রামের কোনো ছিটেফোঁটা নাই। মোটাদাগে এই সংবিধান একদলীয় সংবিধান। এই পার্লামেন্ট এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক পার্লামেন্ট ছিল। আমরা যদি তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতিতে আগ্রহী করতে চাই, তাহলে এখানে যে মাসল পাওয়ার পলিটিকস রয়েছে, তা পরিবর্তন করে দায়িত্বের রাজনীতি করতে হবে। এই দায়িত্ব শুধু এনসিপির না। কারণ, অভ্যুত্থ্যান ছিল সব দলের অংশগ্রহণে। তাই এই দায়িত্ব সব দলকেই নিতে হবে।’

ইফতার অনুষ্ঠানে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল আমিনের সভাপতিত্বে ও তামীম আহমেদের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ অঞ্চলের সংগঠক শওকত আলী, সদস্য আহমেদুর রহমান প্রমুখ। ইফতারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম এই স ব ধ ন এনস প র র র জন র জন ত আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে

জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।

রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।

বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।

বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।

বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।

এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।

অবরোধকারীদের দাবি

অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে