চট্টগ্রামের আনোয়ারার কোরীয় রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (কেইপিজেড) পাহাড়ে ঘেরা এলাকায় আটকে পড়ে আছে তিনটি হাতি। এসব হাতি চলাচলের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি খাদ্যাভাবও দেখা দিয়েছে। ফলে প্রায়ই লোকালয়ে নেমে আসছে হাতিরা। হাতির আঘাতে প্রাণ যাচ্ছে মানুষেরও। এ অবস্থায় হাতি তিনটির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞরা।

কেইপিজেডে হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে ১২ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেইপিজেডে অব্যাহতভাবে বনাঞ্চল ও পাহাড় কেটে হাতির আবাসস্থল নষ্ট করা হচ্ছে। হাতির চলাচলের পথে যানবাহন ও বিভিন্ন পক্ষের লোকজনের আনাগোনা বেশি। তাদের খাবারও দিন দিন কমে যাচ্ছে। আগুন জ্বালিয়ে হাতিকে বিরক্ত করা হচ্ছে। এ কারণে হাতি লোকালয়ে ঢুকে যায় বারবার। পর্যাপ্ত ইআরটি (এলিফ্যান্ট রেসপেন্স টিম) না থাকায় হাতির আক্রমণে মানুষ ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।

প্রতিবেদনে কেইপিজেডে হাতি ও মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণ এবং তা নিরসনের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল। প্রতিবদেনে উল্লেখ করা হয়, কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ এক্সকাভেটর দিয়ে পাহাড় কাটছে। এ জন্য স্বল্পমেয়াদি সুপারিশের মধ্যে পাহাড় ও বন ধ্বংস বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে।

সুপারিশ বাস্তবায়নে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে বলে বন বিভাগ মনে করছে। এসব কারণে হাতি লোকালয়ে ঢুকে জানমালের ক্ষতিসাধন করছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে বড়উঠান এলাকার একটি পাড়ায় একটি হাতি ঢুকে পড়ে। এ সময় হাতির আক্রমণে আরমান জাওয়াদ নামে তিন মাস বয়সী একটা শিশু নিহত ও দুজন আহত হন। এরপর এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ করে চার দিনের মধ্যে হাতি সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান।

এর আগে গত বছরের অক্টোবর মাসে হাতির আক্রমণে এক ব্যক্তি মারা গিয়েছিল। ওই ঘটনার পর বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কেইপিজেডের হাতি সুরক্ষা এবং দ্বন্দ্ব নিরসনে এই বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন কর দেন। ওই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। সদস্যসচিব করা হয় বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজকে।

জানতে চাইলে আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নভেম্বরে যেদিন কমিটি প্রথম কেইপিজেড পরিদর্শনে যায়, সেদিনই দেখা যায় তারা পাহাড় ও গাছপালা কাটছে। ওটা প্রতিবেদনের মধ্যেও উল্লেখ রয়েছে। আমরা স্বল্পমেয়াদি সুপারিশে পাহাড় ও বনাঞ্চল ধ্বংস বন্ধ করা, ইআরটি রাখা, হাতির করিডর উন্মুক্ত রাখার কথা বলেছি। কিন্তু তারা কোনোভাবে হাতিগুলো সেখানে রাখতে চাচ্ছে না বলে আমাদের মনে হচ্ছে। সর্বশেষ ঘটনার সময়ও আগুন দিয়ে হাতি তাড়ানো হয়েছে। আর আরটিএ রাখা বন্ধ করে দিয়েছে তারা।’

কেইপিজেড এলাকায় বন্য হাতির আক্রমণে তিন মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যুর পর সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। ২২ মার্চ সকালে তোলা.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত

ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা  ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী। 

এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।

রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।

সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।

সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’

তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ