বড় নয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রকল্প নেওয়া হবে: অর্থ উপদেষ্টা
Published: 25th, March 2025 GMT
আগামী অর্থবছরের বাজেটে সার ও বিদ্যুতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। এমন প্রকল্প নেওয়া হবে, যাতে স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। মেগা প্রকল্প নেওয়া হবে না।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)-এর সঙ্গে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাস্তব সম্মত প্রস্তাবনা চাচ্ছি। বিরাট আশ্বাস দেব না, যেটা বাস্তবায়ন করা যাবে না। বাজেটে কিছু কিছু মধ্যমেয়াদী, দীর্ঘমেয়াদি বিষয় থাকবে। সেটা ফুটপ্রিন্ট হিসাবে থাকবে।
তিনি বলেন, আমরা মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান, ম্যাক্রো ইকনমিক স্টাবলিটি এবং প্রাইভেট সেক্টরকে মাথায় রেখে বাজেট প্রণয়ন করছি। আগে আড়াইশ তিনশ পাতা হলেও এবার ৫০ থেকে ৬০ পাতায় বাজেটের নির্জাস শেষ করব। ডিরেক্ট টু দ্য পয়েন্ট কথা বলবো। আগের মতো ভূমিকা, অবতারণা এসব কিছু থাকবে না।
কর দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করে তিনি বলেন, আমি এই সেবা পেলাম না, ওই সেবা পেলাম না এসব চিন্তা না করে সামাজিক সেবার কথা চিন্তা করে আপনারা কর দিন। আপনার বাসায় লাইটে সমস্যা হচ্ছে এ জন্য কর দেবেন না, বিষয়টি তা নয়। আপনার বাসায় না জ্বললে অন্য কোনো পরিবারের লাইট জ্বলবে। ট্যাক্স দেবেন দেশের মঙ্গলের জন্য। এবারো কিছু শুল্ক যৌক্তিকিকরণ করা হবে। ডিজিটালাইজেশন করবো যাতে করে মুখ দেখাদেখি না হয়। মুখ দেখাদেখি হলেই কেবল টেবিলের নিচ দিয়ে হাত নাড়াচাড়া করে।
উপদেষ্টা বলেন, এডিপি আমরা এখন পর্যালোচনা করছি। মেগা প্রজেক্ট (প্রকল্প), যেটাকে আমি বলি মনুমেন্ট প্রজেক্ট, এগুলো আমরা বাদ দিয়ে লোকাল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এ ধরনের প্রকল্পে বেশি জোর দেব। এগুলো আবার একেবারে ছোটও না। এক একটা ৫০০-৬০০ কোটি টাকার। অবকাঠামো, নদী শাসন এ ধরনের বিষয় আছে। এর সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। আমরা প্রবৃদ্ধি ও মহিলাদের ভাতা কিছুটা বাড়াব। তবে ৪-৫ গুন ভাতা বাড়বে না, এতো সম্পদ আমাদের নেই।
আইএমএফ’র ঋণের বিষয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাহির থেকে ঋণ একেবারে না নেওয়াটা ভালো। ঋণ নিয়ে ঘি খাওয়া খারাপ। এটা আমরা দেখছি। তবে বাংলাদেশের ট্যাক্স জিডিপি, আর ঋণ দেখেন তা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। গ্রিকে ১৬০ শতাংশ, আমেরিকায় অনেক বেশি। ওদের ক্যাপাসিটি ভালো। মেইনলি আমরা দেখছি ঋণ ব্যবস্থাপনাটা। আমরা শোধ দিতে পারবো কি না। আমরা ডিফল্টার হয়নি কোনদিন।
তিনি বলেন, আইএমএফ’র ঋণ হলো বাজেট সাপোর্ট। প্রজেক্টে অনেক ঋণ আসে। কিন্তু বাজেট সাপোর্ট বা রিজার্ভ কমে গেলো, রেমিট্যান্স কমে গেলে এগুলো তো আমি প্রজেক্ট বেজ ঋণ দিয়ে করতে পারবো না। মেইনলি বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ’র কিছু বাজেট সাপোর্ট লাগে। এ জন্য ঋণ নেয় আমরা।
তিনি আরো বলেন, ওরা (আইএমএফ) বলছে এটা করো, সেটা করো, ওর আলোকে আমরা দেখবো। তবে একটা জিনিস হলো একটা ইনস্টিটিউশন যদি আমরা না করি, আর একটা ইনস্টিটিউশন কমফোর্ট লেটার নেয়। আইএমএফ কেনা না করে ছিলো, কী কারণে? বিশ্বব্যাংক চাইবে আবার জাইকা চাইবে, এডিবি চাইবে, ওপেক ফান্ড চাইবে। ঋণ না নিয়ে বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সেটা বড় চ্যালেঞ্জ, তাৎক্ষণিক তো আমরা পারবে না।
ডলারের দাম কি বাজারের ওপর ছেড়ে দেবেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এটা জুলাইয়ের মধ্যে পারবে কি না বলতে পারছি না। এটা দেখতে হবে। কারণ হঠাৎ করে ছেড়ে দিলে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে গেলো তো বিপদ।
আর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, খারাপ ব্যাংক কীভাবে অবসায়ন হবে সেটা আইনে নির্ধারণ করা হবে। তবে একটা জিনিস আমনতকারীরা সবাই নিঃসন্দেহে টাকা ফেরত পাবেন।
উপদেষ্টা বলেন, সার, বিদ্যুতে ভর্তুকি থাকবে। কৃষকে আমরা যে ভর্তুকি দেয়, সেটা তেমন কিছু না। এই ভর্তুকি আমরা অব্যাহত রাখবো।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো.
সম্পদ কর আরোপের বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স নেয় সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ। ভবিষ্যতে সম্পদ কর চালুর ইঙ্গিত থাকবে এই বাজেটে। একটা সময় পরে আমরা সম্পদ কর বাস্তবায়নে যাব।
অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দেওয়া। এই কাজটি আমরা করে যাচ্ছি। এডিপি ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা থেকে সংশোধিত বাজেটে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। তারপরও অনেক টাকা রয়ে গেছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় নিতে পারছে না। তার কারণ হলো প্রথম থেকেই আমরা অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বাদ দিচ্ছি।
তিনি বলেন, বাজেটে ভর্তুকির বিষয়টি বাজেটে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। আগামী বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে তাদের ব্যয়ের প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। সবার মতামত নিয়েই আমারা বাজেট প্রণয়ন করবো।
ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম’র নেতৃত্বে সংগঠনের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাধারণ সদস্যরা আলোচনায় অংশ নেন।
ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প ভর ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ
২৩ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি উত্থাপনের কথা রয়েছে। বৈঠকে অনুমোদন হলে চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় একসঙ্গে দুই কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ। আইএমএফ গতকাল শুক্রবার তার কার্যসূচিতে নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকের এ তারিখ নির্ধারণসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আইএমএফের এ বৈঠকে চলমান ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার (রিভিউ) প্রতিবেদন উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এ প্রতিবেদন পর্ষদ অনুমোদন করলে বাংলাদেশ একসঙ্গে পেয়ে যাবে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ। দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে হতে পারে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার।
এর আগে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে এ ঋণ কর্মসূচি। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া—মূলত এ তিন কারণে ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিলসহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার।
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও তা আর পাওয়া যায়নি। আইএমএফের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত। প্রায় প্রতিবছর ওয়াশিংটনসহ প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে বড় ধরনের তুষারপাত হয়। গত বছরও তাই হয়েছে। অতিমাত্রার বরফের কারণে অচল হয়ে যায় জনজীবন। মার্কিন প্রশাসন সতর্কবার্তা জারি করে। তুষারপাতের কারণে আইএমএফসহ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল অনেক দিন।
পরে আইএমএফের পক্ষ থেকে প্রথমে এ বছরের ফেব্রুয়ারি ও পরে মার্চে পর্ষদ বৈঠকের কথা বলা হয়। গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি দল পর্যালোচনা করতে ঢাকায় আসে দুই সপ্তাহের জন্য। এর মধ্যে শর্ত পরিপালন নিয়ে দর–কষাকষিতে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এরপর ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তখন দর-কষাকষি হচ্ছিল মূলত মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে। আইএমএফ তা চাইলেও করতে চাইছিল না সরকার।
সবশেষে গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছায় ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত পর্ষদ বৈঠকে অনুমোদন হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মাথায় আইএমএফ অর্থ ছাড় করে দেয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।