আগামী অর্থবছরের বাজেটে সার ও বিদ্যুতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। এমন প্রকল্প নেওয়া হবে, যাতে স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। মেগা প্রকল্প নেওয়া হবে না।

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)-এর সঙ্গে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাস্তব সম্মত প্রস্তাবনা চাচ্ছি। বিরাট আশ্বাস দেব না, যেটা বাস্তবায়ন করা যাবে না। বাজেটে কিছু কিছু মধ্যমেয়াদী, দীর্ঘমেয়াদি বিষয় থাকবে। সেটা ফুটপ্রিন্ট হিসাবে থাকবে।

তিনি বলেন, আমরা মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান, ম্যাক্রো ইকনমিক স্টাবলিটি এবং প্রাইভেট সেক্টরকে মাথায় রেখে বাজেট প্রণয়ন করছি। আগে আড়াইশ তিনশ পাতা হলেও এবার ৫০ থেকে ৬০ পাতায় বাজেটের নির্জাস শেষ করব। ডিরেক্ট টু দ্য পয়েন্ট কথা বলবো। আগের মতো ভূমিকা, অবতারণা এসব কিছু থাকবে না।

কর দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করে তিনি বলেন, আমি এই সেবা পেলাম না, ওই সেবা পেলাম না এসব চিন্তা না করে সামাজিক সেবার কথা চিন্তা করে আপনারা কর দিন। আপনার বাসায় লাইটে সমস্যা হচ্ছে এ জন্য কর দেবেন না, বিষয়টি তা নয়। আপনার বাসায় না জ্বললে অন্য কোনো পরিবারের লাইট জ্বলবে। ট্যাক্স দেবেন দেশের মঙ্গলের জন্য। এবারো কিছু শুল্ক যৌক্তিকিকরণ করা হবে। ডিজিটালাইজেশন করবো যাতে করে মুখ দেখাদেখি না হয়। মুখ দেখাদেখি হলেই কেবল টেবিলের নিচ দিয়ে হাত নাড়াচাড়া করে।

উপদেষ্টা বলেন, এডিপি আমরা এখন পর্যালোচনা করছি। মেগা প্রজেক্ট (প্রকল্প), যেটাকে আমি বলি মনুমেন্ট প্রজেক্ট, এগুলো আমরা বাদ দিয়ে লোকাল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এ ধরনের প্রকল্পে বেশি জোর দেব। এগুলো আবার একেবারে ছোটও না। এক একটা ৫০০-৬০০ কোটি টাকার। অবকাঠামো, নদী শাসন এ ধরনের বিষয় আছে। এর সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। আমরা প্রবৃদ্ধি ও মহিলাদের ভাতা কিছুটা বাড়াব। তবে ৪-৫ গুন ভাতা বাড়বে না, এতো সম্পদ আমাদের নেই।

আইএমএফ’র ঋণের বিষয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাহির থেকে ঋণ একেবারে না নেওয়াটা ভালো। ঋণ নিয়ে ঘি খাওয়া খারাপ। এটা আমরা দেখছি। তবে বাংলাদেশের ট্যাক্স জিডিপি, আর ঋণ দেখেন তা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। গ্রিকে ১৬০ শতাংশ, আমেরিকায় অনেক বেশি। ওদের ক্যাপাসিটি ভালো। মেইনলি আমরা দেখছি ঋণ ব্যবস্থাপনাটা। আমরা শোধ দিতে পারবো কি না। আমরা ডিফল্টার হয়নি কোনদিন। 

তিনি বলেন, আইএমএফ’র ঋণ হলো বাজেট সাপোর্ট। প্রজেক্টে অনেক ঋণ আসে। কিন্তু বাজেট সাপোর্ট বা রিজার্ভ কমে গেলো, রেমিট্যান্স কমে গেলে এগুলো তো আমি প্রজেক্ট বেজ ঋণ দিয়ে করতে পারবো না। মেইনলি বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ’র কিছু বাজেট সাপোর্ট লাগে। এ জন্য ঋণ নেয় আমরা। 

তিনি আরো বলেন, ওরা (আইএমএফ) বলছে এটা করো, সেটা করো, ওর আলোকে আমরা দেখবো। তবে একটা জিনিস হলো একটা ইনস্টিটিউশন যদি আমরা না করি, আর একটা ইনস্টিটিউশন কমফোর্ট লেটার নেয়। আইএমএফ কেনা না করে ছিলো, কী কারণে? বিশ্বব্যাংক চাইবে আবার জাইকা চাইবে, এডিবি চাইবে, ওপেক ফান্ড চাইবে। ঋণ না নিয়ে বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সেটা বড় চ্যালেঞ্জ, তাৎক্ষণিক তো আমরা পারবে না।

ডলারের দাম কি বাজারের ওপর ছেড়ে দেবেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এটা জুলাইয়ের মধ্যে পারবে কি না বলতে পারছি না। এটা দেখতে হবে। কারণ হঠাৎ করে ছেড়ে দিলে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে গেলো তো বিপদ। 

আর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, খারাপ ব্যাংক কীভাবে অবসায়ন হবে সেটা আইনে নির্ধারণ করা হবে। তবে একটা জিনিস আমনতকারীরা সবাই নিঃসন্দেহে টাকা ফেরত পাবেন।

উপদেষ্টা বলেন, সার, বিদ্যুতে ভর্তুকি থাকবে। কৃষকে আমরা যে ভর্তুকি দেয়, সেটা তেমন কিছু না। এই ভর্তুকি আমরা অব্যাহত রাখবো।  

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো.

আবদুর রহমান খান বলেন, ভ্যাট কমানোর দরকার। তবে ভ্যাট একক হারে নিয়ে আসতে পারলে তখন চিন্তা ভাবনা করা যাবে। ভ্যাটের একক হার বাস্তবায়ন হলে তখন সুনির্দিষ্ট কিছু খাতে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে।

সম্পদ কর আরোপের বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স নেয় সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ। ভবিষ্যতে সম্পদ কর চালুর ইঙ্গিত থাকবে এই বাজেটে। একটা সময় পরে আমরা সম্পদ কর বাস্তবায়নে যাব। 

অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দেওয়া। এই কাজটি আমরা করে যাচ্ছি। এডিপি ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা থেকে সংশোধিত বাজেটে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। তারপরও অনেক টাকা রয়ে গেছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় নিতে পারছে না। তার কারণ হলো প্রথম থেকেই আমরা অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বাদ দিচ্ছি।

তিনি বলেন, বাজেটে ভর্তুকির বিষয়টি বাজেটে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। আগামী বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে তাদের ব্যয়ের প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। সবার মতামত নিয়েই আমারা বাজেট প্রণয়ন করবো।

ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম’র নেতৃত্বে সংগঠনের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাধারণ সদস্যরা আলোচনায় অংশ নেন।

ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প ভর ত ক

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় ফুটপাত দখল করে দোকানের পসরা, কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ

বগুড়া শহরের সার্কিট হাউস-কালীবাড়ি মোড় সড়কে সারি সারি ভ্যানে হরেক খাবারের পসরা। পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডউইচ, চিকেন শর্মা, মিটবক্স—সবই মিলছে রাস্তার পাশের এসব দোকানে। ক্রেতারা মূলত কিশোর ও তরুণ-তরুণী।

দোকানগুলোতে নেই কোনো আলাদা শেফ। বিক্রেতারাই নিজের হাতে খাবার তৈরি করছেন, পরিবেশনও করছেন। কারও হাতে গ্লাভস নেই, শরীরে নেই অ্যাপ্রোন। বিকেল গড়াতেই এসব ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানে ভিড় জমছে। কোর্ট হাউস স্ট্রিটের পাশেই আছে ‘পিজ অ্যান্ড বার্গ’, ‘পদ্মা ফুডস’ ও ‘হিলিয়াম রেস্টুরেন্ট’-এর মতো নামীদামি খাবারের দোকান। একসময় সন্ধ্যায় এসব প্রতিষ্ঠানে ক্রেতার ঢল নামত। এখন সে ভিড় চলে গেছে রাস্তার পাশে বসা দোকানগুলোর দিকে।

পদ্মা ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জলেশ্বরীতলা ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমদাদ আহমেদ বলেন, ‘অভিজাত এ এলাকায় একটি খাবারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। অন্তত ১৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ নিতে হয়। এসব নবায়নে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হয়। ভবন ভাড়া, দামি শেফ ও কর্মচারীর বেতন—সব মিলিয়ে খরচ বিপুল। অথচ রাস্তার পাশে ভ্যানে বসা দোকানে বিনিয়োগ মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কোনো সনদ নেই, দোকানভাড়া নেই, কর্মচারীও নেই। শুধু দামে সস্তা বলে ক্রেতারা ঝুঁকছেন ওদিকে। সড়ক দখল করে দোকান বসায় যানজটও বাড়ছে। অভিযোগ করেও প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার মিলছে না।

বগুড়া হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম দেলোয়ার হোসেন বলেন, জলেশ্বরীতলা অভিজাত এলাকা। এখানে দোকান দিতে বিপুল বিনিয়োগ লাগে। নামীদামি দোকানে একটি পিৎজার দাম ৫০০ টাকা হলে ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও ক্রেতারা সস্তা পেয়ে সেখান থেকেই কিনছেন। এতে অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলো লোকসানে পড়ছে। এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন, ‘আমরা স্ট্রিট ফুড ব্যবসার বিরোধী নই। তবে সেটা অভিজাত এলাকা থেকে সরিয়ে পৌর পার্ক, অ্যাডওয়ার্ড পার্কসংলগ্ন সড়ক কিংবা সরকারি আজিজুল হক কলেজের পাশের এলাকায় নিতে প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি।’

সড়কজুড়ে দোকান, ভোগান্তিতে শহরবাসী

সম্প্রতি দেখা যায়, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে সড়কের এক পাশে ২০-২৫টি ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বসেছে। অন্য পাশে ফলের দোকান। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আদালত প্রাঙ্গণের সামনে যানজট লেগেই থাকে।

এ ছাড়া পৌরসভা লেন, জেলা খানা মোড়, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বাকী সড়ক, মহিলা ক্লাব মোড়, শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক, সাতমাথা-সার্কিট হাউস সড়কসহ শহরের নানা সড়কেই বসছে ফুচকা, চটপটি, জুস, ফাস্ট ফুড ও ফলের দোকান।

সাতমাথায় প্রতিদিন বসছে অর্ধশতাধিক দোকান। জিলা স্কুলের সামনে চটপটি ও কাবাবের দোকানগুলোর চেয়ার বসানো হয়েছে ফুটপাত দখল করে। কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, থানা মোড়, বড়গোলা, দত্তবাড়ি, কালিতলা—সবখানেই দুই পাশে দোকান।

রাস্তা দখল করে দোকান বসানোয় বেশির ভাগ সময় যানজটে থাকে শহরে। সম্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ