কাজ শুরু হলেও ক্ষতিপূরণ পাননি ভূমি মালিকরা
Published: 29th, March 2025 GMT
এগারো বছর আগে বাবাকে হারান মাগুরা সদর উপজেলার টিলা গ্রামের বাসিন্দা আলিমুন হোসেন। পরিবারে বলতে রয়েছেন মা ও ছোট ভাই। তাদের সম্বল বলতে রয়েছে বসতভিটা আর ভবনহাটি বাজারসংলগ্ন সাড়ে ৮ শতাংশ জমি। নির্মিতব্য সেতুর জন্য সেই জমিটুকুও খুইয়েছেন তিনি। পাননি কোনো ক্ষতিপূরণ। সর্বস্বান্ত হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন আলিমুন। গত বছরের শুরুর দিকে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার বেনুয়ারচর গ্রামের শরবেত আলীর ৩৬ শতাংশ জমিতে সেতুর কাজ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত তিনি কোনো টাকা পাননি। এলজিইডির প্রকল্পের আওতায় ১৯টি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হলেও কেবল ক্ষতিপূরণের আশ্বাস পেয়েছেন জমির মালিকরা।
এলজিইডির গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় দেশের আট বিভাগে ৮২টি সেতু নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তার মধ্যে মাগুরা সদর উপজেলার ভবনহাটি বাজারসংলগ্ন সেতুটিও এর আওতাধীন। সেতুর কাজ শুরুর সময় আলিমুন বাধা দিলে স্থানীয় ভবনহাটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল হোসেন ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। পরে তিনি আর বাধা দেননি।
আলিমুন হোসেন বলেন, এখানকার জমির বর্তমান বাজারমূল্য শতাংশপ্রতি ৬০ হাজার টাকা। আমার জমিটির বাজারমূল্য ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। তবে ভূমি অধিগ্রহণ না করেই গত নভেম্বরে আমার জমির ওপর সেতু নির্মাণ শুরু হয়েছে। এলজিইডি বা জমি সম্পর্কিত কেউ আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। অতি দ্রুত তিনি ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধের দাবি জানান।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে ৪৩টি সেতুর দরপত্র মূল্যায়ন ও যাচাই-বাছাই শেষে ২৪টি সেতু নির্মাণে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। ১৯টি সেতুর নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। অবশিষ্ট ১৬টি সেতুর দরপত্র প্রক্রিয়াধীন। সরকার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধাপে ধাপে সব সেতু শেষ করতে পারলে গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগে উন্নয়ন ঘটবে এবং প্রান্তিক জনপদের মানুষের জীবনমান উন্নত হবে। পাশাপাশি এটি দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যকে ত্বরান্বিত করবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, দেশের আট বিভাগে ৩৫টি জেলার ৫৮টি উপজেলা নিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় পল্লি সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) নেওয়া হয়। ২০২৭ সালের ৩০ জুন নাগাদ প্রকল্পের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫০ কোটি টাকা। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ২১০ কোটি ৮১ লাখ ৪১ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। সরকারের নিজস্ব অর্থে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
মূলত গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো ও প্রকল্প এলাকার অর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, পরিবহন সময়, ব্যয় কমানোসহ কৃষি-অকৃষি পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সহজীকরণ এবং দীর্ঘ-স্বল্পমেয়াদি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে পল্লি জনপদের মানুষের যোগাযোগ সেবার মান বাড়াতেই এই প্রকল্পগুলো হাতে নেওয়া হয়।
জমি অধিগ্রহণের আগেই সেতুর নির্মাণকাজ নিয়ে জানতে চাইলে এলজিইডির প্রকল্প পরিচালক আবু জাকির মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প র আল ম ন সরক র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের
বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।
উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।
রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে।
বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।
উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।
ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।
ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।
এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।
ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।
যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে।
ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ